বাড্ডায় গণপিটুনিতে নিহত নারীর নাম তাসলিমা বেগম রেনু

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ রাজধানীতে শনিবার গণপিটুনিতে নিহতের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাসলিমা বেগম রেনু নামের ওই নারী সন্তানের ভর্তির খোঁজ নিতে স্কুলে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হন।

শনিবার রাজধানীর উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসা বোরখা পরা এক নারীর কথাবার্তায় সন্দেহ হলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে। সেসময় শিশুর মাথা কাটা ধরা পড়েছে, এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে শতশত মানুষ হামলে পড়ে ওই নারীর ওপর।

পরে জানা যায়, সন্তানকে ভর্তি করানোর জন্য খোঁজ নিতে ওই স্কুলে গিয়েছিলেন তিনি।

উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহনাজ বেগম জানান, মহিলা কী কারণে স্কুলে এসেছিলেন তা জানার আগেই এলাকাবাসী তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গণপিটুনির শিকার মহিলাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ জানায়, নিহতের নাম তাসলিমা বেগম রেনু।

এদিকে গণপিটুনিতে  নিহত তাসলিমা বেগম রেনুর গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে চলছে শোকের মাতম। রোববার নিহতের গ্রামের বাড়ি জেলার রায়পুর উপজেলার সোনাপুর গ্রামে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।

মিথ্যা অজুহাতে এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন স্থানীয়রা। এদিকে এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় নিহতের বোনের ছেলে নাসির উদ্দিন টিটু অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।

তাসলিমা বেগম সোনাপুর গ্রামের মৃত আবদুল মান্নানের মেয়ে। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি করতেন। তার মাহিন হোসেন নামে এক ছেলে ও তুবা তাসনিম নামে এক মেয়ে রয়েছে।

নিহতের বোন সেলিনা আক্তার জানান, উত্তর বাড্ডার তসলিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তাসলিমার বিয়ে হয়। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দুই বছর আগে পারিবারিক কলহের কারণে তাদের বিচ্ছেদ হয়।

সেলিনা আক্তার বলেন, ‘২০ জুলাই তাসলিমার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য খোঁজ নিতে উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়। সে সময় স্থানীয়রা তাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। এখন তার সন্তানদের কী হবে? কে দেখবে তাদের।’

তাসলিমার চাচাতো ভাই হারুনুর রশিদ ও এলাকাবাসী বলেন,   ‘তাসলিমাকে মিথ্যা অজুহাতে যারা মেরে ফেলেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যাতে তাসলিমার মত অন্য কাউকে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে না হয়।’

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন সদস্য রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘নিহতের লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হচ্ছে। পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।’

তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।  ছেলে ধরা গুজব রটানাকারীকে শনাক্ত করে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান রিয়াজ উদ্দিন।

এছাড়া ছেলেধরা সন্দেহে সাভারেও গণপিটুনিতে শনিবার এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা বাড়ছে। নেত্রকোনার পর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারে গণপিটুনিতে দুই নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার ও গাজীপুরে আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে আতঙ্ক অভিভাবকদের মনে।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা ফৌজদারি অপরাধ। ডিএমপি’র ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, কাউকে ছেলেধরা সন্দেহ হলে গণপিটুনি না দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে।

দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া হঠাৎ এমন ঘটনায় কোনো কুচক্রী মহলের সংযোগ আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে অনেকের মনে।

Print Friendly

Related Posts