গুলশান হামলার আসামিদের কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলার ঘটনায় ২১ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। এদের মধ্যে ১৩ জন বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছেন। বাকি আটজনকে গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

২০১৬ সালের ১ জুলাইয়ের এই হামলায় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন না। তবে তারা হামলার পরিকল্পনা, অস্ত্র ও অর্থ জোগানে ভূমিকা রেখেছিলেন।

হামলাকারী পাঁচ তরুণ- নিবরাজ ইসলাম, খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল, মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ও শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে সেদিনই মারা পড়েছিলেন।

এই হামলার পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরী, তানভীর কাদেরী, জাহিদুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম মারজানসহ আটজন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিহত হন।

হামলায় জড়িত মৃতদের বাদ রেখে জীবিতদের আসামি করে ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই অভিযোগপত্র দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির।

জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী

জাহাঙ্গীর (২৮) ওরফে রাজীব গান্ধীর বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পশ্চিম রাঘবপুরে। ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে গাইবান্ধার সাঘাটায় যে বৈঠকে গুলশান হামলার পরিকল্পনা হয়েছিল তাতে জাহাঙ্গীরও ছিলেন। গুলশান হামলার পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সংগ্রহ, হত্যাকাণ্ডে সক্রিয় সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে।

আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালতে দেওয়া বক্তব্যে জাহাঙ্গীর জঙ্গি সংগঠনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও গুলশান হামলায় যুক্ত ছিলেন না বলে দাবি করেছেন।

রাকিবুল হাসান রিগেন
রিগেন রাফিউল ইসলাম রাফি, রিপন, হাসান ও অন্তর নামেও পরিচিত ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। রিগেনের বাড়ি বগুড়ার সদর উপজেলার ইসলামপুর পশ্চিমপাড়ায়। হলি আর্টিসানে হামলার পর ঢাকার কল্যাণপুরে জাহাজবাড়ির আস্তানায় অবস্থান করছিলেন তিনি। ওই বাড়িতে ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই অভিযানে ১১ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ধরা পড়েন রিগেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, রিগেন নব্য জেএমবির প্রশিক্ষক ছিলেন। হামলায় জড়িতদের প্রশিক্ষণ দিয়ে হত্যাকাণ্ড সংঘটনে সহায়তা ও প্ররোচিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

মিজানুর রহমান
মিজানুর রহমান (৬০)  বড় মিজান নামেও পরিচিত। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের হাজারবিঘি চাঁনপুরে। ২০১৬ সালের ২ নভেম্বর ঢাকার দারুস সালাম এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গুলশান হামলার আগে ২০১৬ সালের মার্চ মাসের শেষদিকে নাচোলের কসবা এলাকায় নিজের ইজারা নেওয়া পুকুর পাড়ের ঘরে মিজান বিস্ফোরকসহ এক জঙ্গিকে রেখেছিলেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

গুলশান হামলায় ব্যবহৃত বিস্ফোরক সরবরাহে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে মিজান আদালতে বলেছিলেন, তিনি একজন মাছ ব্যবসায়ী, শুধু নামের মিলের কারণে তাকে আসামি করা হয়েছে।

আব্দুস সবুর খান হাসান
সবুর (৩৩) সোহেল মাহফুজ, মুসাফির, জয় ও নসুরুল্লাহ নামেও সংগঠনে পরিচিত। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সাদিপুর কাবলিপাড়ায়। ২০১৭ সালের ৮ জুলাই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়ে, ২০০২ সালে জেএমবিতে যোগ দিয়ে রাজশাহীর বাগমারায় ‘সর্বহারা নিধন অভিযানে’ সম্পৃক্ত হন সবুর। তখন বোমা বানানোর সময় তার ডান হাতের কবজি উড়ে যায়। কিছুদিন ভারতে থাকার পর ২০১০ সালে দেশে ফিরে জেএমবির উত্তরাঞ্চলের দায়িত্ব নেন। পরে তামিমদের সঙ্গে নব্য জেএমবিতে যোগ দেন তিনি।

গুলশান হামলায় লোক, অস্ত্র, গ্রেনেড সরবরাহের অভিযোগ আনা হয়েছে সবুরের বিরুদ্ধে।

আসলাম হোসেন সরদার
আসলাম (২০) সংগঠনে র‌্যাশ, রাশেদ, মোহন ও আবু জাররা নামেও পরিচিত ছিলেন। আসলামের বাড়ি রাজশাহীর পবার নওহাটা মথুরায়। ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

আসলাম ২০১৪ সালে নব্য জেএমবিতে যোগ দেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গুলশান হামলাকারীদের নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দেন তিনি। হামলাকারীদের গ্রেনেড বিষয়ে তিনি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। হামলার আগে বুড়িগঙ্গা নদীতে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রশিক্ষণও তিনি দিয়েছিলেন।

হামলাকারীদের প্রশিক্ষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেওয়া, ঘটনাস্থল রেকি, হামলার পরিকল্পনায় অংশ নিয়ে হত্যাকাণ্ডে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আসলামের বিরুদ্ধে।

হাদিসুর রহমান সাগর
হাদিসুরের (৩৫) বাড়ি জয়পুরহাট সদর উপজেলার কাদোয়া কয়রাপাড়া। ২০১৮ সালের ২১ মার্চ বগুড়ার শিবগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০১ সালে হাদিসুর রহমান আলিম অধ্যয়নরত অবস্থায় জেএমবিতে যোগ দেন। সংগঠনে দায়িত্বশীল হলে তার নাম ‘সাদ-বিন আবু ওয়াক্কাস’দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে যোগ দেন নব্য জেএমবিতে। নব্য জেএমবির দক্ষিণাঞ্চলের সামরিক কমান্ডার ছিলেন তিনি। সংগঠনের জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে চাঁদা আদায়ের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

গুলশান হামলাকারীদের ঝিনাইদহে মেস ভাড়া করে আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দেওয়া, অর্থ লেনদেন, অস্ত্র-গ্রেনেড সরবরাহ করে হত্যাকাণ্ডে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

শরিফুল ইসলাম খালেদ
শরিফুলের (২৭) বাড়ি রাজশাহীর বাগমারার শ্রীপুরের  খামারপাড়ায়। ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ছিলেন শরিফুল। তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় ২০১৩ সালে জেএমবিতে জড়িয়ে পড়েন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, হলি আর্টিসানে হামলার পরিকল্পনাকারীদের একজন শরিফুল। গুলশান হামলা সংঘটনে প্রশিক্ষণে সহায়তা এবং হামলা পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া, হামলাকারীদের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেওয়াসহ নানাভাবে হত্যাকাণ্ডে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে শরিফুলের বিরুদ্ধে।

মামুনুর রশিদ রিপন
রিপনের (৩০) বাড়ি বগুড়ার নন্দীগ্রামের শেখের মাড়িয়ায়। গাজীপুরের বোর্ডবাজার থেকে ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি তাকে গ্রেফতার করা হয়।

রিপন ২০১৫ সালে নব্য জেএমবিতে যোগ দেন। গুলশান হামলায় পরিল্পনার বৈঠকে অংশ নেওয়া এবং অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে রিপনের বিরুদ্ধে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, হাদিসুর ও রিপন তিনটি একে-২২ রাইফেল ও গুলি, চারটি গ্রেনেড, দুটি পিস্তল, কল্যাণপুরে এনে মারজানের মাধ্যমে তামিমের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

Print Friendly

Related Posts