বরিশালে পরিকল্পিতভাবে একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা

খান মাইনউদ্দিন, বরিশাল : বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলায় পরিকল্পিতভাবে একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় বলে ধারণা করছে পুলিশ।

ঘটনার পরপরই লাশ উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

একইসাথে ‘ট্রিপল মার্ডার’র রহস্য উদঘাটনে প্রশাসনের সবগুলো ইউনিট মাঠে নেমেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম।

তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। এটি কোন ডাকাতি বা আত্মহত্যার ঘটনা নয়।

এ ঘটনায় জাকির (৩৫) নামে এক ব্যাক্তিতে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। আটক জাকির ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠী ইউনিয়নের উত্তর রাজপাশা গ্রামের চুন্নু হাওলাদারের ছেলে।

সাইফুল ইসলাম বলেন, জমি বিরোধ বা পারিবারিক কলহের জেরে হত্যাকান্ড ঘটতে পারে। তবে এছাড়াও আরও অনেক কারন নেপথ্যে থাকতে পারে। আমরা সবগুলো সূত্র ধরে এগোচ্ছি।

নিহত তিনজন হলেন, কুয়েত প্রবাসী আব্দুর রব ও হাসান মাহমুদের মা মরিয়ম বেগম (৭০), খালাতো ভাই ভ্যানচালক ইউসুফ (২২) ও বোনের জামাই অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মোঃ শফিকুল আলম (৬০)।

নিহত ইউসুফ সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের ধাঁড়ালিয়া গ্রামের ফারুক হাওলাদারের ছেলে এবং নিহত শফিকুল আলমের বাড়ি স্বরূপকাঠি উপজেলায়।

বাড়ির মালিক কুয়েত প্রবাসী আঃ রবের স্ত্রী মিশরাত জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে যে যার মতো খাবার খেয়ে শুতে যান। ওইসময় ঘরে তিনিসহ তার দুই শিশু সন্তান নুরজাহান (৪), ইশফাত (৯), দেবর হারুন অর রশিদের মেয়ে আছিয়া ওরফে আফিয়া, শাশুড়ি মরিয়ম বেগম (৭০), ননদ মমতাজের স্বামী শফিকুল আলম (৬০) ও শাশুড়ির বোনের ছেলে (দেবর) ইউসুফ ছিলেন। এরপর ভোরে ফজরের আযানের পর আফিয়ার চিৎকারের শব্দে সবাই ঘুম থেকে ওঠেন।

নিহত মরিয়ম বেগমের নাতনি আছিয়া ওরফে আফিয়া বলেন, ভোরে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য ঘুম থেকে উঠে দাদিকে ওঠানে যান। তখন দেখি দাদির রুমের বারান্দার দরজা খোলা এবং তার নিথর দেহ বারান্দায় পরে রয়েছে। এরপর চিৎকার দিলে বাড়ির সবাই আসেন কিন্তু ফুপা শফিকুল আলম ও চাচা ইউসুফকে দেখতে না পেয়ে তাদের খুঁজতে থাকি। তখন ঘরের অন্য একটি কক্ষে যেখানে ফুপা ঘুমাচ্ছিলেন, সেখানে গিয়ে তার মাথার অংশ খাটের বাহিরে দেখে সন্দেহ হয়। ডাকাডাকি করলেও তিনিও কোন সারাশব্দ করেননি। পরে চাচা ইউসুফকে খুঁজতে ছাদের দিক গেলে সেখানে দরজা খোলা পাই, তবে কারো দেখা মেলেনি। এরপর বাড়ির বাহিরে খুঁজতে শুরু করলে চাচা ইউসুফকে পুকুরের ঘাটলায় উপুর হয়ে পড়ে থাকতে দেখি।

নিহত মরিয়ম বেগমের ছেলে হারুন অর রশীদ জানান, দুলাভাই শফিকুল ইসলাম আলম দুই দিন আগে নিজ বাড়ি স্বরূপকাঠি থেকে তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। আর ইউসুফ শুক্রবার রাতে ভ্যান চালানো শেষে তাদের বাড়িতে আসে। তিনি বলেন, বাসার ছাদের দরজা ছাড়া আর কিছ্ইু খোলা পাওয়া যায়নি। ওই দিক দিয়েই খুনিরা বাসায় প্রবেশ করে খুন করেছে।

রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলেও জানান ওসি শিশির মন্ডল। তিনি জানান, সুরতহাল রির্পোটে প্রতিটি লাশের নাকে রক্তক্ষরণ ছাড়া আর কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

Print Friendly

Related Posts