বাজেটে উপেক্ষিত টেলিযোগাযোগ খাতের অবদান

সরকারকে টেলিযোগাযোগখাতে বাজেট প্রস্তাবনা পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব এমটবের

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বাজেট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেটকে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রয়াসের প্রতিবন্ধকতার বিবেচনায়  সরকারকে টেলিযোগাযোগ খাতে প্রস্তাবিত বাজেট  পুনর্বিচেনার আহ্বান জানালো এসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এমটব)।

২০১৯-২০২০ অর্থবছরের কর প্রস্তাবে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলোর মাঝে রয়েছে:

ক) মোবাইল ফোনে সিম ও রিম কার্ডের উপর আরোপিত সম্পূরক শুল্কহার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীতকরণ;

খ) সিম কার্ডের উপর আরোপিত শুল্ক ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা;

গ) পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর রিটেইনড আর্নিং বা আয়ের সঞ্চিতির উপর ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ;

ঘ) মোবাইল কোম্পানির আয়ের উপর সর্বনিম্ন শুল্ক ০.৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশ করা;

ঙ) স্মার্টফোন আমদানিতে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা।

প্রস্তাবিত নতুন শুল্ক নীতিমালা বর্তমান ও নতুন গ্রাহকদের ওপর নতুন করে অতিরিক্ত খরচের বোঝা বাড়াবে। বাজেট ঘোষণার পূর্বে এই খাত থেকে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছিলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতি, যেমন সিম ট্যাক্স ও মোবাইল সেবার ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাতিল করা। এছাড়াও, অমুনাফাভোগী অপারেটরদের বেলায় নূন্যতম করপোরেট শুল্কহার কমিয়ে আনা এবং পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে কর হার ৫ শতাংশ হারে কমিয়ে আনা। এছাড়াও, আর্থিক বিরোধ নিস্পত্তির ক্ষেত্রে আবেদন ফি ৩০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়েও এনবিআর এর কাছে প্রস্তাব রাখে এমটব।

বর্তমান পটভূমিতে তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীকে মুনাফা না করলেও মোট আয়ের ওপর নূন্যতম কর ০.৭৫ শতাংশ হারে বাধ্যতামূলকভাবে কর প্রদান করতে হতো। এটা দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি মোট আয়ের ওপর নূন্যতম কর ২ শতাংশ করার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের অগ্রযাত্রায় টেলিযোগাযোগখাতে বিপুল বিনিয়োগ  এর ভূমিকা অগ্রাহ্য। বর্তমানে টেলিযোগাযোগখাত ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়নের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এ অবস্থায় অবিবেচনাপ্রসূত হারে কর হার বৃদ্ধি ও নতুন করে সম্পূরক শুল্ক আরোপ ফোর-জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক স্থাপনের পুরো প্রক্রিয়াটিকেই হুমকির মুখে ফেলবে।

এছাড়াও, আয়ের সঞ্চিতির উপর আরোপিত ১৫ শতাংশ হারে করারোপ করায় তা পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় কর্পোরেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমূহের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। নতুন করে আরোপিত এই করের বোঝা কমিয়ে আনতে প্রতিষ্ঠানগুলো নূন্যতম রিজার্ভে অতিরিক্তি লভ্যাংশ প্রদানে বাধ্য করবে। যা ভবিষ্যত বিনিয়োগ কমিয়ে আনবে। আয়ের সঞ্চিতির উপর করারোপ মূলত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর দ্বৈত করারোপ করবে। যেহেতু, ইতোমধ্যেই নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলো ৪২.৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট কর দিয়ে আসছে, নতুন করে আরোপিত করের ফলে প্রতিষ্ঠানসমূহকে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ কর প্রদান করতে হবে।

সরকার দেশের অর্থনীতি ও ডিজিটাল বাংলাদেশের অবকাঠামোর মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত টেলিযোগাযোগখাতকে সহায়তা করার স্থলে বরং প্রস্তাবিত কর ও শুল্ক কাঠামো আরোপের মাধ্যমে এই খাতটিকেই পঙ্গু করে দেবে বলে মনে করে এমটব। এ বিষয়ে এমটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল  এস এম ফরহাদ (অব.) বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের রূপকল্প বাস্তবায়নে টেলিযোগাযোগ খাতের যা অবদান তা প্রস্তাবিত বাজেটে পুরোপুরিভাবে উপেক্ষিত হওয়ায় আমরা খুবই আশাহত। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) টেলিযোগাযোগখাতের অবদান ৬.২ শতাংশের অধিক হলেও এ বিষয়টি সম্পূর্ণ রূপে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। বর্তমানে টেলিযোগাযোগখাতে পুরো বিশ্বের মাঝে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ কর-ভারের বিষয়টি এখন সর্বজনবিদিত।“

এমটবের মহাসচিবের মতে, মোবাইল সেবাখাতে ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে তা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণকেই বাধাগ্রস্ত করবে। এছাড়াও, নতুন সিম কার্ড ও প্রতিস্থাপনের উপর আরোপিত শুল্ক ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা বৃদ্ধি করায় নতুন গ্রাহকদের খরচের বোঝা দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি করবে।

এমটব মহাসচিব আরো বলেন “এই খাতটি দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ করে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, প্রস্তাবিত বাজেটে সিম কার্ডের উপর আরোপিত শুল্ক দ্বিগুণ করা ও অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক আরোপ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের গতিকে বাধাগ্রস্ত করবে।“

দেশের টেলিযোগাযোগ খাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সরকার প্রস্তাবিত বাজেট পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশাবাদী  মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটব। এই খাতটি চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ঘটাতে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে এবং এই বিপ্লব এগিয়ে নিয়ে যেতে এ খাতে প্রয়োজন বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ। বাংলাদেশের রাজস্ব আয়ে ও বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে দেশের টেলিযোগাযোগ খাত। তাই, অ্যামটবের প্রত্যাশা দেশের অর্থনীতিতে এ খাতের  অবদান বিবেচনা করে এর ওপর আরোপিত কর ও শুল্ক কাঠামো ঢালাওভাবে পরিবর্তনের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ খাতের সকল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পরিপূরক ভূমিকা পালন করবে সরকার।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts