এবার জনপ্রতি ফিতরা সর্বনিম্ন ১১৫, সর্বোচ্চ ২৯৭০ টাকা

এ বছর বাংলাদেশে সাদাকাতুল ফিতরার পরিমাণ জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভায় ১৪৪৫ হিজরি সনের সাদাকাতুল ফিতরের (ফিতরা) এ হার নির্ধারণ করা হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমিন। এতে ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট আলেমরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সাংবাদিকদের ফিতরার হার জানান।

এ সময় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়, ইসলামী শরীয়াহ মতে মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী গম, আটা, খেজুর, কিসমিস, পনির ও যবের যে কোনো একটি পণ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ বা এর বাজার মূল্য ফিতরা হিসেবে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করতে পারবেন।নগদ টাকা দিলে ফিতরা হবে না। গম ও আটার ক্ষেত্রে এর পরিমাণ এক কেজি ৬৫০ গ্রাম (অর্ধ সা’)। খেজুর, কিসমিস, পনির ও যবের ক্ষেত্রে ৩ কেজি ৩০০ গ্রামের (এক সা’) মাধ্যমে সাদকাতুল ফিতর (ফিতরা) আদায় করতে হয়। এসব পণ্যের বাজার মূল্য হিসাব করে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ফিতরা নির্ধারণ করা হয়।

হাফেজ মুফতি মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন জানান, উন্নতমানের আটা বা গমের ক্ষেত্রে ফিতরা এক কেজি ৬৫০ গ্রাম (অর্ধ সা’) বা এর বাজার মূল্য ১১৫ টাকা। যবের ক্ষেত্রে (এক সা’) ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ৪০০ টাকা ফিতরা দিতে হবে। এছাড়া ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম কিসমিস বা এর বাজার মূল্য দুই হাজার ১৪৫ টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করা যাবে। খেজুরের ক্ষেত্রে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য দুই হাজার ৪৭৫ টাকা ও পনিরের ক্ষেত্রে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ২ হাজার ৯৭০ টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করতে হবে বলে জানান।

ফিতরার পণ্যের স্থানীয় খুচরা বাজার মূল্যের তারতম্য রয়েছে। সে অনুযায়ী স্থানীয় মূল্য পরিশোধ করলেও ফিতরা আদায় হবে বলেও জানান মাওলানা রুহুল আমিন। তিনি আরও বলেন, আল্লাহ যাদের সামর্থ্য দিয়েছেন সামর্থ্যবানরা যদি অতিরিক্ত বা এটার মধ্যে যেটার দাম বেশি সেটা দিয়ে ফিতরা আদায় করে তিনি আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় হবেন। এটা তার জন্য কল্যাণকর হবে।

নেছাব পরিমাণ (সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলা রুপার সমপরিমাণ) মালের মালিক হলে মুসলমান নারী পুরুষের ওপর ঈদের দিন সকালে সাদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব হয়। ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে ফিতরা আদায় করতে হয়।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০ বা ১১ এপ্রিল ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।

উল্লেখ্য, গত বছর নির্ধারিত ফিতরার হার ছিল উন্নতমানের আটা বা গমের ক্ষেত্রে ১১৫ টাকা, যবের ক্ষেত্রে ৩৯৬ টাকা, কিশমিশের ক্ষেত্রে এক হাজার ৬৫০ টাকা, খেজুরের ক্ষেত্রে এক হাজার ৯৮০ টাকা ও পনিরের ক্ষেত্রে ২ হাজার ৬৪০ টাকা। অর্থাৎ গত বছর বাংলাদেশে ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

ইসলামে ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব হয়ে থাকে যখন শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাবে। হাদিস অনুসারে, ঈদের একদিন বা দুদিন আগেও আদায় করা জায়েজ আছে। কিন্তু, অনেক আগে ফিতরা বের করা জায়েজ নেই। কারণ, ফিতরার একটা উদ্দেশ্য লক্ষ্য আছে। সেটা হচ্ছে, ঈদের দিনে যারা অভাবগ্রস্ত তাদের এই দিনে আনন্দ দেওয়া। তাদের ঈদের দিনের খাবারের ব্যবস্থা করে দেওয়া। এখন ঈদের দিনের খাওয়াটা তো পাঁচদিন আগে দেওয়া যায় না। ফিতরা আদায়ের পদ্ধতি হচ্ছে তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি মুসলমানদের উপর সদকাতুল ফিতর (ফিতরা) ফরজ করেছেন। আর তা হল এক স্বা‘ খেজুর বা এক  স্বা‘ যব। মানুষ ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে তা আদায় করার আদেশ দিয়েছেন। দুই সহীহ গ্রন্থে (অর্থাৎ বুখারী ও মুসলিমে) আবু সা‘ঈদ আলখুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে তিনি বলেছেন: “আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়ে সদকাতুল ফিতর হিসেবে এক স্বা খাদ্যদ্রব্য অথবা এক স্বা‘ খেজুর অথবা এক স্বা‘ যব অথবা এক স্বা‘ কিসমিস প্রদান করতাম।”[বুখারী (১৪৩৭)।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts