অলোক আচার্য : হাঁটতে হাঁটতে হেমন্তের দুপুরে হঠাৎ রাস্তার পাশে চোখ আটকে গেল চমৎকার একটি ফুলে। বড় আকারের গাছে দুপুর রোদে আলো ছড়াচ্ছে। ফুলটির নাম দেবকাঞ্চন।
দেবকাঞ্চন হেমন্তের ফুল। বাংলাদেশে কাঞ্চন ফুল তিন ধরনের হয়। শ্বেতকাঞ্চন, দেবকাঞ্চন এবং রক্তকাঞ্চন। এদের মধ্যে দেবকাঞ্চন চোখে পড়ে তুলনায় কম, শ্বেতকাঞ্চন এবং রক্তকাঞ্চন চোখে পরে বেশী। তবে দেবকাঞ্চন অন্য কাঞ্চনের তুলনায় বেশি আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। আমিও তাই ভাবি এতদিন দেখিনি কেন! দেবকাঞ্চন ফুলের অসমান ও লম্বাটে ৫টি মুক্ত পাপড়ি থাকে।
দেবকাঞ্চনের ফুল সাধারণত কয়েকটি একত্রে একটি ডাঁটায় ফুটে, ভালো জাত ও পরিচর্যা পেলে সারা গাছ ভরে যায় ফুলে ফুলে। প্রতিটিফুল ফুল ৬ থেকে ৮ সেন্টিমিটার চওড়া। দেবকাঞ্চন ফুল সচরাচর গোলাপী হয় তবে সাদা, লালচে গোলাপী, হাল্কা গোলাপী, হালকা বেগুনি ইত্যাদি হতে পারে। দেবকাঞ্চনের ফুল সুগন্ধি যুক্ত হয়। দেবকাঞ্চনের আদি নিবাস চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া।
দেবকাঞ্চন ছোট থেকে মাঝারি আকারের পত্রঝরা বৃক্ষ, মাথা ছড়ান। দ্রুত বর্ধনশীল এই গাছ ১৫ থেকে ২৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। গাছের পাতা সবুজ, শিরা-উপশিরা স্পষ্ট। পাতার বৈশিষ্ট্য-একই বোঁটার পাতা মাঝে দু’ভাগে বিভক্ত। আবার দুটি পাতা জোড়া দিলে একটি অন্যটির সঙ্গে সমানে সমান। পাতার অগ্রভাগ ভোঁতা।
ফুল শেষে গাছে ফল হয়, ফলে বীজ হয়। প্রতি ফলে ১২ থেকে ১৬টি বীজ থাকে। ফল দেখতে শিমের মতো চ্যাপটা, রং প্রথমে সবুজ ও পরিপক্ব হলে কালচে রং ধারণ করে এবং শুকিয়ে গিয়ে এক সময়ে আপনাআপনিই ফেটে গিয়ে বীজগুলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। পরিপক্ব বীজের রং কালচে খয়েরি। গাছ বেশ কষ্টসহিষ্ণু। বীজ থেকে বংশ বিস্তার করা হয়।
কাঞ্চনের বৈজ্ঞানিক নামের প্রথম অংশ দুই যমজ উদ্ভিদবিজ্ঞানীর নাম থেকে নেওয়া। তারা ষোড়শ শতকের বিখ্যাত উদ্ভিদবিজ্ঞানী ছিলেন। ফুল অবশিষ্ট থাকতে থাকতেই শিমের মতো চ্যাপ্টা ফল ধরে। ফলগুলো একসময় শুকিয়ে গিয়ে আপনাআপনিই ফেটে যায়। তখন বীজগুলো ছড়িয়ে পড়ে। ভারতের শুস্ক অঞ্চলের অরণ্যভূমিতে এদের আদি আবাস।
কাঞ্চনগাছের বাকল থেকে ট্যানিং, রং ও দড়ি তৈরি করা যায়। বীজ তেল সস্তা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। গাছের শিকড় বিষাক্ত এবং সর্পদংশনের প্রতিষেধক।