গোবিন্দ চন্দ্র বাড়ৈ’র ৭১তম জন্মবার্ষিকী

অসিত রঞ্জন মজুমদার : গোবিন্দ চন্দ্র বাড়ৈ’র ৭১তম জন্মবার্ষিকী বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর)। ১৯৫৩ সালের এইদিনে মাদারীপুর জেলার ডাসার থানাধীন বালিগ্রাম ইউনিয়নের সনমান্দী গ্রামে তার জন্ম । পিতা বাঞ্ছারাম বাড়ৈ ও মাতা প্রিয়বালা বাড়ৈ‘র ৭ সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান তিনি।

গোবিন্দ চন্দ্র বাড়ৈ শৈশব থেকেই মানবতাবাদী, বিজ্ঞান মনস্ক, সমাজকর্মী, কর্মক্ষেত্রে আন্তরিক ও দায়িত্ব জ্ঞান সম্পন্ন। গ্রামের ছোটদের লেখাপড়ার খোঁজ-খবর রাখার কাজটি করতেন তখন থেকেই। যৌবনে পা রাখতেই গ্রামে তৈরি করেন ক্লাব, ব্যবস্থা করেন খেলাধুলার। ছুটির দিনে দূর করতেন রাস্তা-ঘাটের দূরাবস্থার। একবার তিনি তার কিশোর-যুবাদের দল নিয়ে মেরামত করেছিলেন বড় খালের উপরে চলার অনুপযোগী হয়ে পড়া কাঠের পুলকে।

গোবিন্দ চন্দ্র বাড়ৈ‘র ৭১তম জন্মবার্ষিকীর পাশাপাশি এ বছর তার প্রতিষ্ঠিত সনমান্দী উচ্চ বিদ্যালয়েরও ৫১ বছর। এ বিদ্যালয়টির কাজ ১৯৭২ সনে শুরু করলেও ক্লাশ শুরু হয়েছিল ১৯৭৩ সন থেকে। গোবিন্দ চন্দ্র বাড়ৈ‘র বয়স তখন ২০ বছর। অর্থাৎ তিনি যখন কলেজ ছাত্র তখন প্রতিষ্ঠা করেন এই উচ্চ বিদ্যালয়টি। একজন কলেজ ছাত্রের মাত্র ২০ বছর বয়সে নিজ প্রচেষ্টা ও বুদ্ধি দিয়ে একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা অবশ্যই একটি বিরল ও ঐতিহাসিক ঘটনা। পরবর্তীকালে তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তখনও টিউশনি করা পয়সা দিয়ে অনেক কাজ করেছেন বিদ্যালয়ের, করেছেন এমপিওভুক্ত।

অর্থনৈতিক অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তান হয়েও তার দায়িত্ব জ্ঞান ছিল প্রকট। কৈশোরেই সন্ধ্যার দিকে তিনি প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের পড়াশুনার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। যৌবনের প্রথম দিকে আমাদের স্বাধীনতা প্রাপ্তির মুহূর্তে গ্রামে ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে শিশু ও কিশোর যুবাদের খেলাধূলার ব্যবস্থা করেছিলেন।

স্বাধীনতা উত্তর কালের বালিগ্রাম ইউনিয়নের প্রথম ওয়ার্ড মেম্বার ডা. নিত্যানন্দ ঘরামী ওয়ার্ডের সব কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন গোবিন্দ চন্দ্র বাড়ৈর উপর। যৌবনের শুরুতেই স্কুল কলেজের ছুটির দিনে এলাকার রাস্তা-ঘাটের চলাচলের অসুবিধা দূরীভুত করার কাজ করতেন। এসব থেকেই কিশোর-যুবাদের নিয়ে গঠিত হয় একটা দল। তিনি যেখানেই কিছুদিন বসবাস করেছেন সেখানেই রেখেছেন ভালো কাজের চিহ্ন।

গোবিন্দ চন্দ্র বাড়ৈ‘র লেখালেখিতেও অভ্যাস আছে। ছাত্রজীবনে খেলাঘরের পাতা এবং দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ছড়া, আর্টিক্যাল এসব লেখার অভ্যাস ছিল। তার ছোটদের ছড়া, গল্প, বড়দের জন্য পদ্য, বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা- কেমন করে উড়ছে মানুষ, মহা জগৎ ও পৃথিবী প্রভৃতি বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আরোও কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায়।

গোবিন্দ চন্দ্র বাড়ৈ বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পরীক্ষাটি শেষ করার দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের মাধ্যমে ইউনিভার্সিটি উইমেন্স ফেডারেশন কলেজে গণিতের শিক্ষক হিসাবে যোগদানের সুযোগ পান। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮২ তিনি ঐ কলেজে গণিতের শিক্ষক ছিলেন। এর মধ্যে তিনি অনেকগুলো ভাল চাকরির জন্য নির্বাচিত হন কিন্তু শিক্ষকতার দিকে মোহ থাকায় শিক্ষকতায়ই থেকে যান। শিক্ষকতার পেশায় তার বাবার তেমন সম্মতি না থাকার কারণে ১৯৮২ সনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর অপারেশন কন্ট্রোল এ যোগদান করেন। এখান থেকে অবসরের পর বিভিন্ন প্রাইভেট এয়ারলাইন্সে উচ্চপদে চাকরি করেন। বর্তমানে তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অধীনে বিশেষ পরিদর্শক হিসাবে কর্মরত।

সততা ও স্পষ্টবাদিতা, নিজ কাজের প্রতি আগ্রহ, দক্ষতা, বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন, মানুষের জন্য ভাল কিছু করার প্রচেষ্টা, সঠিকভাবে নিজ দায়িত্ব পালন অর্থাৎ একজন ভালমানুষের সব গুণাগুণ লালন করার প্রচেষ্টা ছিলো তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts