পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন গিটারিস্ট মিনহাজ আহমেদ পিকলু। গিয়েছিলেন গিটার স্কুলের অনুষ্ঠানে। সেখানে গিটার তুলে নিয়ে বাজাতে বাজাতেই চেয়ারে ঢলে পড়েন তিনি। কাছেই এক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বয়স হয়েছিল ৫২ বছর।
পিকলু অর্থহীন ব্যান্ডের সাবেক লিড গিটারিস্ট। দলটির জনপ্রিয় ‘অদ্ভুত সেই ছেলেটি’, ‘সূর্য’, ‘রাতের ট্রেন’, ‘গুটি’, ‘নির্বোধ’ গানগুলোয় বাজিয়েছেন তিনি।
২০ ডিসেম্বর শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। শনিবার বাদ জোহর ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
পিকলুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু সিপার আলতামুস গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাজধানীর রামপুরার একটি গিটার প্রশিক্ষণ স্কুলের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন পিকলু। অনুষ্ঠান শেষে নিজে থেকেই গিটার নিয়ে কিছুক্ষণ জ্যামিং করেন তিনি। তখনই হঠাৎ অসুস্থ বোধ করছিলেন। হঠাৎ চেয়ারে ঢলে পড়লে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সিপার আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরেই হৃদ্রোগজনিত নানান অসুস্থতায় ভুগছিলেন পিকলু। বছরের শুরুর দিকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল পিকলুকে।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের পরিচিত নাম ছিল পিকলু। তিনি রকস্ট্রাটা, জলি রজার্স, মাকসুদ ও ঢাকা এবং অর্থহীনের মতো ব্যান্ডগুলোয় বাজিয়েছেন। অর্থহীনের ‘ত্রিমাত্রিক’, ‘বিবর্তন’, ‘ধ্রুব’ অ্যালবামগুলোতে লিড গিটার বাজিয়েছেন তিনি। প্রয়াত সংগীতশিল্পী নিলয় দাশের শিষ্য ছিলেন পিকলু।
জনপ্রিয় এই গিটারিস্টের মৃত্যুতে সংগীতাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পিকলুর প্রতি শেষশ্রদ্ধা জানিয়েছেন ওয়ারফেজ ব্যান্ডের গিটারিস্ট ইব্রাহিম আহমেদ কমল, সংগীতশিল্পী রাফা, এলিটা করিম প্রমুখ।
পিকলুর মৃত্যুসংবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাফা লিখেছেন, ‘পিকলু ভাই ছিলেন আমার প্রথম পরামর্শদাতা, যিনি অন্য কারও আগে আমাকে বিশ্বাস করেছিলেন। তিনি আমাকে শিখিয়েছেন কীভাবে সঠিকভাবে গিটার বাজাতে হয়, কীভাবে সত্যিকার অর্থে সংগীত অনুভব করতে হয় এবং কীভাবে নিজেকে একজন সংগীতশিল্পী হিসেবে বহন করতে হয়। কিন্তু এর বাইরেও তিনি আমাকে শিখিয়েছিলেন কীভাবে মঞ্চে থাকতে হয়, কীভাবে দর্শকদের সামনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে হয়, যখন আমি তরুণ এবং অনিশ্চিত ছিলাম। আমার এখনো মনে আছে, যখন তিনি মধ্য-পারফরম্যান্সে ঝুঁকে পড়তেন এবং আমার কানে কানে রসিকতা করতেন, ছোট ছোট জিনিস আমাকে শান্ত করতে এবং যখন আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম, তখন আমাকে হাসাতেন।’