গোলাম কিবরিয়া পিনু ।। আওয়ামী লীগ আর বিএনপি বড় রাজনৈতিক দল! যাদের প্রধান শত্রু তাদের দলের লোকেরা! দুদশক আগেই এসব দলের বিস্তৃতি ঘটেনি পাড়া-মহল্লায়, ইউনিয়ন-গ্রামে ! কোথায় নেই কমিটি! কত রকমের অঙ্গ-সংগঠন ! বুদ্ধিজীবী-শিল্পী-সাহিত্যিক-চিকিৎসক-প্রকৌশলী-শ্রমিক-ছাত্র সংগঠন থেকে শুরু করে ধর্মীয়নেতাদের সংগঠন । তাদের কাজটা কী ? দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা!
তারপর এসব দলের বিভিন্ন পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট লোকেরা কী করে? তারা দলের সভায় শ্লোগান দেয় আর নেতা-মন্ত্রী-এমপিদের সাথে তাল দিয়ে চলে! আর আত্মগরিমায় স্থানীয় প্রশাসন-পুলিশ-সরকারী প্রতিষ্ঠানে প্রভাব ফেলে, তদবির করে অনিয়মের মাধ্যমে টাকা-পয়সা আর সব সুয়োগ-সুবিধে হাতিয়ে নেওয়ার জন্য সিন্ডিকেট তৈরি করে ফেলে, সেখানে জনগণের স্বার্থ একেবারে ভূলুণ্ঠিত হয় । দলবাজির এলাহী কাণ্ড দিন দিন বাড়ছে এদেশে!
দল করলে খুব সহজে টাকা-পয়সা ও সম্পদের মালিক হওয়া যায়, সমাজে দাপটের সাথে থাকা যায়। এদের কাছে আর কোনো বিকল্প রাস্তা নেই! তাই, এখন বড় দল দুটির পিছনে সুবিধাবাদীর আধিপত্য, একনিষ্ঠ ও নির্ভেজাল কর্মীদের অবস্থান ফসিলে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে ।
দল ক্ষমতায় থাকার সময়ে একজন ইউনিয়ন কমিটির সভাপতির ভাঙা ঘর হয়ে উঠে রাতারাতি অট্টালিকা, লজ্জা-শরমও তাদের থাকে না, মানুষ কী ভাববে! আর উপজেলা, জেলা কমিটির লোকদের কী রমরমা অবস্থা! জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের কথা বাদ দিলাম! কী হয় না তাদের? গাড়ী, বাড়ি-প্লট, ব্যবসা ও ডলার! তাহলে ক্ষমতায় থাকা ও য্ওায়া মানে দলের লোকদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতাভোগ ও অনিয়মে রাষ্ট্র-সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা লুটে নেওয়া! এই লুণ্ঠনকারীদের সংখ্যা এখন এই দুই দলে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে বলেই জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে!
যদি ধরি ক্ষমতাসীন দল, আওয়ামী লীগের কথা, তাদের নেতা-কর্মীরা কী কাজ করছে? চোখ মেললেই তা দেখা যায়! এবং দেশের মানুষ অভিজ্ঞতা দিয়ে তা অনুভব করছে। তাদের অনেকে নিজেদের আখের গোছানো কাজ করা ছাড়া কতটুকু দেশের মানুষের জন্য কাজ করছে?
আওয়ামী লীগের মত একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের কর্মীদের রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে অগ্রসর করে নেওয়ার জন্য কোনো উদ্যোগ জোরালোভাবে রয়েছে কি? নেই! দলীয় কাজ চলে সেই প্রথাগতভাবে পুরনো কায়দায়। নতুন ও সময়োপযোগী সাংগঠনিক কর্মকৌশল তাদের নেই। আর নেই বলে ধর্মান্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিরোধী শক্তি আজ সমাজে আরও শিকড় গেড়ে বসেছে। আওয়ামী লীগ শুধু মুক্তিযুদ্ধের কথা কিছু নেতার মুখসর্ব বুলি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে, আওয়ামী লীগ যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমাজের শিখর পর্যায়ে দৃঢ় করতো, তাহলে মৌলবাদীরা এত শক্তিশালী হতে পারতো না।
সুবিধাবাদী ও দলীয় লেবাসে লুণ্ঠনকারীদের নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে দলের মুক্তি নেই, জনগণের মুক্তিতো নেই, গণতন্ত্রের নামে ভোট ভোট খেলাটি দলীয় লোকদের ফায়দা লোঠার একমাত্র রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়াবে! আর জনগণ চোখের সামনে তা দেখে বিরক্ত ও হতাশায় একবার এ-দলের দোলনায়, আর একবার ও-দলের দোলনায় উঠতে বাধ্য হয়!
গোলাম কিবরিয়া পিনু : কবি।
https://www.facebook.com/gkpinu