পঞ্চকবির শোকপংক্তি

খোকা’র জন্য এলিজি
ফকির ইলিয়াস

হাতের ভেতর যে আগুন থাকে,সেই আগুনেই উজ্জ্বল হয়ে
উঠেছিল একটি ভূমিচিত্র। একটি আঙুল বলেছিল- ‘আর যদি
একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়’

রক্তের সমুদ্রে ভেসেছিল যে দেশ, সেই দেশের রাষ্ট্রসিঁড়িতেই
নিহত হয়েছিলেন পিতা। আর ঘাতকেরা ভেবেছিল, এই তো
মুছে গেল নাম !

যে নাম আগুন দিয়ে লেখা, নেভানো যায় না তার শিখা
যে নাম জলরেণুতে লেখা, থামানো যায় না তার স্রোত
যে নাম জাগে আকাশের ক্যানভাসে,মুছে ফেলা যায় না তার অক্ষর

প্রতিটি আগস্ট এলেই আমি আরও একটি অক্ষর লিখি,
অক্ষরে অক্ষরে সাজাই আমার হাতের একতারা,
যে কবি খোকা’র জন্য প্রতিদিন এলিজি লিখেন- আমি,
তার বাণীতে সুর দিতে দিতে গাই,
‘একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কন্ঠ ধ্বনি-প্রতিধ্বনি’

 

অনন্য সে ভাষণ

কায়সার অাহমেদ দুলাল

হাজার বছর ধরে জমেছে পলি
চেতনার উর্বরতায় ফলেছে ফসল
বসন্তের উদ্যানের মত উজ্জ্বল,
স্বাধীনতার কবিতা প্রকাশ
জনসমুদ্রে রেসকোর্স ময়দান।

চেতনায় সাজানো বাগান
অনন্য অনবদ্য বিন্যাস
সমুজ্জ্বল সজিব অামার স্বদেশ,
জাগে শিহরন জলদগম্ভীর ভাষণ
স্বাধীনতার অাহবান অনন্য শব্দ চয়ন।

একুশের রক্ত দিয়েছে ভাষা
৭ ই মার্চের শ্রেষ্ট কবিতা
তর্জনী উঁচু করা অনিবার্য ঘোষণা,
মাতৃভাষার কোরিওগ্রাফি মুদ্রিত রচনা
অাবহমান বাংলার রক্তস্নাত অাল্পনা।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সে ভাষণ
অনবদ্য শব্দ চয়ন,অবশেষে স্বাধীনতা
মনোমুগ্ধকর জনতা, পেয়েছে সম্মোহনী চেতনা,
রক্তে এসেছে নতুন জোয়ার
৭ ই মার্চের গান বাজুক বারবার।

 

শোক হোক শক্তি
শেখ নজরুল

শোক
হোক
মুক্তি
বাঙালির

শোক
হোক
শুক্তি
স্বদেশের

শোক
হোক
জাগরণ
বিজয়ের

শোক
হোক
আমরণ
হৃদয়ের!

 

আজ শোকের দিন

শাহ মতিন টিপু

আজ শোকের দিন
আজ কস্টের দিন
আজ বুকে বাজে ঘাতকের
সেই শব্দ অচিন ।

আজ বাতাসে ভাসে
জাতির দীর্ঘশ্বাস
আজ মেঘমল্লারেও
অশ্রুজলের আভাস।

পাখিরাও ভুলে গেছে
আজ গান সুমধুর
আজ পাখির গানেও
বাজে কান্নার সুর

 

 

স্বজন বন্ধু এবং আমাদের বিবেক

ফারুক আহমেদ রনি

(উদগ্রীব অপেক্ষা, তারপর পতাকার পালক ওড়ে,
ওড়ে বাতাসে বিশ্ববাঙালির আকাঙ্ক্ষার স্বপ্ন)

তোমার হাতের তর্জনী বাংলাদেশের প্রাণ স্পর্শ করেছিল
তোমার স্বপ্নের সুসভ্য বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়েছিল
জননীর সবুজাভ শাড়ির জমিনে
এবং সেই তোমার বুকে অকস্মাৎ আগ্নেয়গিরি
নাভিপদ্মে জ্বলে দাউদাউ পরিত্যক্ত আগুন।

ভাঙা চাঁদের মধ্য-রজনীতে অন্ধকার বিদ্রূপ করে
গাঢ় রাত্রির খোলস ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে সংশয়
সদ্যজাত মেহেদীর রঙ টকটকে লাল
রক্তের সাথে মিশে গেলো মুহূর্তে।

বায়ান্ন থেকে পঁচাত্তরে এসে থমকে গেছে
ঘড়ির কাটা!
আমরা নিরুপায় অবলুপ্তির অন্ধকার দেখি
আলো নেই, ঘড়ির শব্দ নেই
কেবলই অভেদ্য পাঁচিল রোধ করে আছে
অজানা গন্তব্যের পথ।

কি অদ্ভুত, অভাগা বাঙালি তোমার প্রাণের দামে
বিকৃত করেছে স্বদেশ, বিনষ্ট করেছে পুরুষালী অহংকার,
নিলামে তুলেছে জাতির বিবেক!
তোমার প্রাণের দামে বাঙালি কিনেছে মাকড়শা-বৃত্ত
আমরা আজীবন সেই বৃত্তের ভেতরেই
রয়ে গেলাম!

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts