বিডিমেট্রোনিউজ ॥ গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর পুরো কূটনৈতিক এলাকার নিñিদ্র নিরাপত্তায় নানা প্রশাসনিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এমন কী বাইরের যানবাহন ওই এলাকায় প্রবেশে রয়েছে বিশেষ কড়াকড়ি। এমন একটি অবস্থার মধ্যে গুলশান ১ এর একটি ভবনে কয়েকজন তরুনের প্রবেশ নিয়ে কয়েক ঘন্টা ধরে তুলকালাম কান্ড চলে।
টিভি চ্যানেলের ব্রেকিং সম্প্রচার মানুষের উৎকণ্ঠা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। কয়েকঘন্টা উৎকণ্ঠায় রাখার পর আইনশৃঙ্খলাবাহিনী জানায় ওই ভবনে কাউকে পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে ১৭টি চোরাই মোবাইল সেটসহ দুটি ব্যাগ। সোঁজোয়া যান ও ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি নিয়ে এসে ঢাকার গুলশানের এক ভবন প্রায় তিন ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখার পর ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে চুরির খবর দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। মঙ্গলবার সকালে গুলশান-১ নম্বর সেকশনের বীর উত্তম মীর শওকত আলী সড়কের ৫১ নম্বর হোল্ডিংয়ে এ ঘটনা ঘটে।
ওই ভবনের এক পাশের নিচতলা ও দোতলায় এলজি-বাটারফাইয়ের শো রুম, অন্যপাশের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় এনসিসি ব্যাংকের কার্যালয়। চতুর্থ তলায় ‘লি ছয় শিয়ং হাউজ’ এবং পঞ্চম তলায় ইউনিরয়্যাল সিকিউরিটিজের কার্যালয়।
পিঠে ব্যাগ নিয়ে কয়েকজন তরুণ জোর করে ওই ভবনে ঢুকেছে খবর পেয়ে সকাল ৯টার পর বিপুল সংখ্যক পুলিশ ওই এলাকা ঘিরে ফেললে শুরু হয় আতঙ্ক আর নানা গুঞ্জন।
দুই মাস আগের গুলশান হামলার অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে পুলিশ, ব্যাব ও সোয়াট সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হলে নতুন কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটছে বলে ধারণা তৈরি হয় স্থানীয়দের মধ্যে।
ঘণ্টা তিনেক পর ভেতরে তল্লাশি শেষ করে বেরিয়ে এসে অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মুহম্মদ মারুফ হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ভেতরে কাউকে পাওয়া যায়নি। কাউকে আটকও করা যায়নি।
“আমরা দুটো ব্যাগ পেয়েছি। তারা চুরির উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি আমরা। ব্যাগে কী আছে তা পরীার জন্য বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়েছে।”
পরে পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট এসে ওই ব্যাগে পায় মোবাইল ফোন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সেখান থেকে সরে যান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, “দুটি ব্যাগে ১৭টি মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে। মনে হচ্ছে, চোরেরা পেছন দিক দিয়ে পাঁচ তলার একটি গ্রিলবিহীন জানালা দিয়ে ঢুকেছিল। সকালে তারা নিচতলা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করলে দারোয়ান দেখে ফেলে পুলিশে খবর দেয়।”
ঘটনাস্থলে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র্যাব-১ এর এক কর্মকর্তা বলেন, ভবনের ভেতরে তিনজন চোর প্রবেশ করেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা ভবনের একটি ব্রোকারেজ হাউসে প্রবেশ করে সেখান থেকে কিছু টাকাপয়সা নিয়েছে। তারা এলজি-বাটারফাইয়ের শোরুমেও প্রবেশ করে। সেখান থেকেও কিছু জিনিস নিয়েছে।
সকালে গুলশানের সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ভবনের নিচতলার একটি শোরুমে কয়েকজন সন্দেহভাজন যুবক আছেন বলে তাঁদের কাছে খবর রয়েছে।
একজন নিরাপত্তাকর্মীর তথ্যের বরাত দিয়ে গুলশান জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার আশরাফুল করিম বলেন, ওই ভবনের এলজির শোরুমের পাশে ব্র্যাক ব্যাংকের একটি বুথ রয়েছে। সকালে বুথের একজন নিরাপত্তাকর্মী শোরুমের ভেতর থেকে গেট কাটার শব্দ শোনেন। নিরাপত্তাকর্মী উঁকি দিয়ে দেখেন, কেউ একজন ভেতর থেকে গেটের তালা কাটার চেষ্টা করছেন। কাছে গেলে ওই নিরাপত্তাকর্মীকে তিনি বলেন, ‘ওপরে আসবি না। আসলে গুলি করব।’ এরপর ওই নিরাপত্তাকর্মী পুলিশে খবর দেন।