ড. সাজ্জাদ বকুল [] আমাদের প্রিয় জলি (আকতার) আপা চলে গেলেন কেন? ডাক নাম ‘জলি’ আপা বলে ডাকলে পছন্দ করতেন না, বলতেন ‘আমাকে আকতার আপা’ বলে ডাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একই বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলাম, কিন্তু পরিচয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পরে।
আপাকে এই কয় বছরে যা চিনেছি তাতে খুবই উদার মনের মানুষ মনে হয়েছে। সবার জন্য উনি এতো কেয়ারিং ছিলেন যা উল্লেখ না করলেই নয়। এ বছরের শুরুর দিকে আমি কয়েকদিন হাসপাতালে ছিলাম। আপা নিজের শরীর খারাপ সত্ত্বেও আমাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন।
গত বছর আমরা দুই বাংলার চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন করেছিলাম। সেখানে আপা অতিথিদের আপ্যায়নে যে নজির দেখিয়েছেন, ঢাকায় ফিরেও খ্যাতিমান চলচ্চিত্র চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন, গবেষক অনুপম হায়াৎ, চলচ্চিত্রকার সাইদুল আনাম টুটুল সবাই ফোন করে আপার খবর নিতেন। আজ আপার মৃত্যুর খবর টেলিভিশনে দেখে অনুপম হায়াৎ, সাইদুল আনাম টুটুল আমাকে ফোন করে খুব দুঃখ প্রকাশ করলেন।
কিছুদিন আগে আমাদের আরেক কলিগ আমেনা খাতুন উর্মির স্বামী ব্লাড ক্যান্সারে মারা গেলে সকালে খবর পেয়েই আমরা কয়েকজন সহকর্মী রাজশাহী থেকে ঝিনাইদহে উর্মির শ্বশুরবাড়িতে যাই। মাইক্রোবাসে দুপুর দেড়টায় রওয়ানা দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আমরা ঝিনাইদহে উর্মির শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছাই। কিছুক্ষণ পর ঢাকা থেকে লাশ এসে পৌছলে উর্মিকে সান্ত্বনা দিয়ে আমরা রাত একটার দিকে রাজশাহী পৌঁছাই।
ব্যাক পেইনে সেদিন আপাকে সারা রাস্তা কী কষ্টটাই না পেতে দেখেছি। তবু হাসিমুখে তিনি সহকর্মীকে সমবেদনা জানাতে এত দূর ছুটে গিয়েছেন।
সেই আকতার আপা কী কষ্টটাই না বুকে নিয়ে, চোখের মণি ছেলে সোয়াদকে একা ফেলে চলে গেলেন না ফেরার দেশে, ভাবতেই বুক জুড়ে কান্না বেরিয়ে আসছে।
আপার সরাসরি ছাত্রী, আমার স্ত্রী রিপা (Jannat Jahan) আপার মৃত্যুতে ঝরঝর করে কাঁদল। যে বা যারা আপার এই করুণ মৃত্যুর জন্য দায়ী তার বা তাদের কঠোরতম শাস্তি চাইল।
আপা মৃত্যুর আগে একটা সুইসাইডাল নোট লিখে রেখে গেছেন। গত বছর আপার ছাত্রী সিফাতের মৃত্যুর পর রটানো হয়েছিল যে সিফাত আত্মহত্যা করেছে। ৩০ মার্চ ২০১৫ তারিখে নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে আপা লিখেছিলেন ‘Ki korle tumi eta Seefat!! Keno? Keno??’’
আজ সেই সাহসী আপা আর সহ্য করতে পারলেন না। নিজের জীবন শেষ করে দিয়ে সব কষ্টের অবসান ঘটালেন।
আজ বিকেলে খবর পাওয়ার পর জুবেরীর ৩০৩ নং কক্ষ থেকে আপার লাশ উদ্ধার, রাজশাহী মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া, মরচুয়ারিতে লাশ রেখে আসা, জুবেরীতে ফিরে আপার কক্ষ থেকে পুলিশের সুইসাইডাল নোট উদ্ধার করা- এসব ঘটনা ঘটার সময়ও আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে আপা আর নেই।
আপা যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন।
Sazzad Bokul
Assistant Professor at University of Rajshahi,Bangladesh.