প্রয়োজনে গণভোট দিন, যাচাই করুন মতামত

মতামত লেখকের ‍একান্ত নিজস্ব

মোঃ রফিকুল ইসলাম [] আমার পরম শ্রদ্ধেয় এবং কোম্পানীর সাবেক চেয়ারম্যান মহোদয় কথা প্রসঙ্গে একদিন বলেছিলেন দেশকে ভাল বাসতে হলে চারটি জিনিস ভাল বাসতে হবে। চারটি জিনিস হলো-(১) মা (২) মাটি (৩) দেশ (৪) মানুষ। এই চারটি নাম স্মরণ রেখে কাজ করলে জাতি অবশ্যই উন্নতির শিখরে অধিষ্ঠিত হবে। চারটি নামের সামান্য একটু ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছিলেন।

যার ব্যাখ্যা হলো:

ইসলামিক দৃষ্টিতে একজন শিশু জন্মের পূর্বে মায়ের পেটে দশ মাস দশ দিন থাকার পর পৃথিবীতে আসেন।

প্রথমতঃ মাকে শ্রদ্ধা জানাতে হবে কারণ মায়ের পেটে দীর্ঘ সময় থেকেছি।

দ্বিতীয়তঃ মায়ের পেটের থেকে ভুমিষ্ঠ হয়েছি মাটিতে সুতরাং মায়ের পরই মাটিকে ভাল বাসতে হবে, মাটির পবিত্রতা বজায় রাখতে হবে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে মাটির পবিত্রতা সম্পর্কে অনেক তথ্য রয়েছে। এমনও দেখা যায় নামাজের সময় হয়েছে কোথাও পানি নেই বা রোগ ব্যাধির কারণে পানি ব্যবহারে ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে সেক্ষেত্রে পবিত্র মাটি দ্বারা তাইওমুম করা হলে ওজুর কাজ হয়ে যায়। সুতরাং মাটিকে ভাল বাসতে হবে মায়ের মত বা মায়ের পরে।

তৃতীয়তঃ একজন শিশু মায়ের পেট থেকে ভুমিষ্ঠ হয় যে কোন দেশের মাটিতে। সুতরাং দেশকেও ভাল বাসতে হবে। পবিত্র কোরআনে দেশ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য কেউ মৃত্যু বরণ করলে শহীদের মর্যদা পাবেন। সুতরাং দেশকে অবশ্যই ভাল বাসতে হবে। দেশের বিরুদ্ধে কোন কাজ করা হলে প্রচলিত আইনে দেশদ্রোহী আইনে দন্ডিত হবে।

চতুর্থত্বঃ পবিত্র কোরআনুল করিমে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। কেউ যদি অন্যায়ভাবে কোন মানুষকে হত্যা করে তাহলে সে যেন সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করেছে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত মানুষ হত্যা করা মহাপাপ। সুতরাং গরীব ধনী, রাজা-বাদশা সকল মানুষকে অবশ্যই ভাল বাসতে হবে। গৌতম বুদ্ধ বলেছেন জীব হত্যা মহাপাপ। অর্থাৎ কোন জীবকেই মারা যাবে না। তাঁর ভাষ্যমতে ছোট একটা পিঁপড়াকেও হত্যা করা যাবে না।

আমরা সাধারণ মানুষ। জ্ঞান পরিধিও সাধারণ। যাদের দ্বারা দেশ পরিচালিত হচ্ছে তারাই আমাদের অভিভাবক। আমাদের তথা দেশের ভাল-মন্দ বিচার বিশ্লেষণ তারাই করবেন। তারাই আমাদেরকে রক্ষা-সুরক্ষা দিবেন। বিপদে আপদে পাশে থাকবেন। কারণ বিভিন্ন সময় আসমান থেকে নতুন নতুন রোগ ব্যাধি নেমে এসে মানুষকে বিপদে ফেলেন। তখনি আমাদের অভিভাবকগণ বিপদমুক্ত করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেন। তারা ভেবে চিন্তে দেশের যে কোন কাজ করবেন। সাধারণ মানুষকে ভাল কাজে উৎসাহিত করবেন খারাপ কাজে নিরুৎসাহিত করবেন। বিদেশীদের সাথে যেকোন চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার আগে বিষয়টি নিয়ে কঠিন থেকে কঠিনতর চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত দিবেন।

আমরা বীমা কোম্পানীতে চাকুরী করে। বীমা ব্যবসা আহরণে অনেক বীমা গ্রহিতা বলে থাকেন আপনাদের কাগজ বেচা পয়সা, আবার কেউ কেউ বলে থাকেন কাগজ বেচা কাঁচা পয়সা। আমি একজন সাধারণ বীমা কর্মী হিসেবে বলতে চাই এই ধারনাটি সম্পূর্ণ ভুল। কেননা আমরা প্রতিটি মুহুর্তে কোটি কোটি টাকার সম্পদের ঝুঁকি গ্রহণ করছি। আবরণ দিচ্ছি আপনাদের সম্পদের। যেদিন থেকে আপনি আপনার সম্পদের বীমা ঝুঁকি নিয়েছেন সেদিন থেকেই আমরা আপনাদের সম্পদের পরোক্ষ অভিভাবক। প্রতিটি মুহুর্তেই আমাদের চিন্তা কখন কি ঘটে। আর যদি কোন রকম দুর্ঘটনা ঘটেই যায় তাহলে ক্ষতিপূরণ দিতে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হয়। যেমনি ফায়ার ব্রিগেট সদা সর্বদা প্রস্তুত থাকে কখন কোথায় কি ঘটে খবরের অপেক্ষায় তদ্রুপ আমরাও সদা প্রস্তুত থাকি ক্ষতিগ্রস্থ বীমা গ্রহিতার সম্পদের ক্ষতিপূরণ দিতে।

আমার কোম্পানীর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কোন একদিন শাখা ব্যবস্থাপকবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন বন্ধুগণ আপনাদের মনে রাখতে হবে আপনারা কিসের ঝুঁকি নিচ্ছেন, কিসের বীমা আবরণ দিচ্ছেন। যাচাই বাছাই করে বীমা গ্রহিতার সম্পদের ঝুঁকি গ্রহণ করবেন। কেননা যে কোন মুহুর্তে ক্ষতি হতে পারে। আমরা সে চিন্তা করেই চাকুরী করছি এবং বীমা গ্রহিতার সম্পদের ঝুঁকি গ্রহণ করছি।

সেদিন মাননীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহোদয়ের বক্তব্যটি মনে রেখেছি, যে কোন বীমা ঝুঁকি গ্রহণের পূর্বে স্মরণ করেই বীমা ঝুঁকি নিয়ে থাকি।

আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে- কোন অভিভাবক ভুল সিদ্ধান্ত নিলে তার মাসুল গুনতে হয় পরবর্র্তী প্রজম্মের অর্থাৎ তাঁর উত্তরসুরীদের। উদাহরণস্বরুপ বলতে হয় আজকে ঢাকা শহরের যানজট কেন? আমাদের অভিভাবক সরকার প্রধানগণের ভুলের মাসুল। কারণ ১৯৯০ দশকে সরকার প্রধানগণ তাঁদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল মটরযানে সি.এন.জি. করা। তখন নামে মাত্র গ্যাস ভর্তি করে মটরযান চালিয়েছেন অনেকে। ঐ সময় দেখা গেছে একই পরিবার একাধিক ব্যক্তিগত মটর গাড়ী ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ ছেলে, মেয়ে, ম্যাডাম, সাহেব, ছেলে বউ এমন কি বাসার কাঁচা বাজার করতেও বরাদ্ধ ছিল মটর গাড়ী। তার ফল আজকে আমরা পাচ্ছি। যারা দেশ পরিচালনা করেছেন তাঁদের মনে রাখতে হবে আপনাদের কাজের সাফল্যে বিশ কোটি মানুষের ভাগ্য আপনাদের ভুলের সিদ্ধান্তে বিশ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সুতরাং সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেয়াই উত্তম।

ভারতের বিহার রাজ্যে বন্যার কারণ খুঁজতে গিয়ে ফারাক্কার বাঁধকে দায়ী করা হচ্ছে। ভারতের রাষ্ট্র প্রধান বিশেষজ্ঞ পাঠাচ্ছেন ফারাক্কার বাঁধের অবস্থা খতিয়ে দেখতে। সুতরাং হুটহাট সিদ্ধান্ত না নিয়ে রামপাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আরও সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জীব বৈচিত্রের দেশ বাংলাদেশ। সবুজে ঘেরা বাংলাদেশ। তাইতো বার বার কবি লিখেছেন সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ। যেদিকে তাকাই সেদিকেই সবুজ আর সবুজ। বিশ্বের অনেক দেশেই প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। আমাদের দেশেও রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ। আমরা কিছু উত্তোলন করতে পেরেছি কিছু উত্তোলনের চেষ্টা করছি, কিছু গবেষণা করছি। বিগত কয়েক বছর পূর্বে কানাডিয়ান গবেষক বলেছিলেন যশোর থেকে কুমিল্লা বি.বাড়ীয়া পর্যন্ত প্রাকৃতিক গ্যাসে ও তেলে বাংলাদেশ ভাসছে। সরকার হয়তো সেই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও আশার আলো দেখছে।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিতঃ আল্লাহ মাত্র ছয়দিনে সারা জাহান সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে ছিল সমুদ্র আর সমুদ্র। এই সমুদ্রের পানির উপর পৃথিবী। সেই সমুদ্রের মধ্যেই আল্লাহ পৃথিবী তৈরী করেছেন ভাসমান অবস্থায়। পানির উপর টলমলে পৃথিবীকে স্থায়ী এবং মজবুত করে রাখার জন্য পাহাড় তৈরী করেছিলেন। যেমন আমরা ঘর তৈরী করলে ঘরের খুটির সাথে আড়া/রুয়ার পেরেগ দিয়ে শক্ত করি। তেমনি আল্লাহ পাহাড় দিয়ে পৃথিবীকে শক্ত করে রেখেছেন।

জীব বৈচিত্র ঘেরা আমাদের সবুজ বাংলাদেশ। আর জীব বৈচিত্র আল্লাহর দান। আল্লাহর দেয়া দানকে কেউ নষ্ট করতে পারেন না। আর নষ্ট করা হলে বিপদ ডেকে আনার শামিল। আমরা কি কিউ স্ব-ইচ্ছায় স্ব-জ্ঞানে সেই বিপদ ডেকে আনতে পারি? অবশ্যই পারি না। আজ দাবী উঠেছে সুন্দরবন রক্ষার দাবী। রামপাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র করা হলে সুন্দরবনে বিপদ ডেকে আনা। নষ্ট হবে জীব বৈচিত্র। হারিয়ে যাবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ হাজার রকমের বন্য প্রাণী। নষ্ট হবে প্রকৃতির দেয়া ম্যানগ্গ্রোভ।

পরিশেষে, দেশ ও জাতির অভিভাবক হয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিবেন না যাতে দেশ ও জাতির ক্ষতি হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলে দেশ ও জাতির উন্নতি হবে। কিন্তু রামপাল ছাড়া কি দেশের কোথাও জায়গা নেই। আসুন দশে মিলে করি কাজ হারি জিতে নাহি লাজ। প্রয়োজনে গণভোট দিন, যাচাই করুন সকলের মতামত। পরীক্ষা করুন রামপালে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হলে দেশের কতটুকু উন্নতি বা কতটুকু ক্ষতি হবে।

 

[] মোঃ রফিকুল ইসলাম, বীমা কর্মী।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts