খান চমন-ই-এলাহি [] পৃথিবীর সব পিতামাতা স্বপ্ন দেখেন এবং দেখান। সৃষ্টির ধর্মও তাই। বাবা-মার সাথে সৃষ্টির যোগসূত্র রয়েছে। এ কারণে স্বপ্ন ও আকাঙ্খার ঘোরাফেরা। আলোক রশ্মি কিংবা দ্যুতির পেছনে, রাত্রি কিংবা আধাঁরের গহ্বর থেকে মুক্তির দিবাকর যেমন চিরন্তন, তেমনি শেখ হাসিনা, প্রিয় এ নামটির সাথে কিংবদন্তির প্রবাদ পুরুষ, বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তান বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামটিও শাশ্বত,অদ্বিতীয় ও অব্যয়।
নদী বিধৌত লাখো প্রাণের রক্তে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক,সামাজিক,ধর্মীয়,মানবিক,সাম্প্রদায়িক এবং ইতিহাস-সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক নিপীড়ন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে আলোকদূতের অনিবার্য প্রয়োজন ছিল। যার দ্যুতিতে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বাঙালি জাতির মানসপটে অর্জিত ও চিত্রিত হবে ঐক্য ও সংহতি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে কালস্রোতের ভেতর দিয়ে পৃথিবীর দেশে দেশে, মানচিত্র কিংবা বিশ্বের দরবারে ।
শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছাতে এমন সৌম আকাঙ্খা ও কাম্য থেকে শেখ মুজিব এবং তাঁর উত্তরসূরি আরো একজনের জন্ম এ মাটি প্রার্থনা করে। ফলে বিশ্বাসের জায়গা থেকে কারো আল্লাহ কারো ভগবান ঠিক সেই মধুমতি-বাইগাপাড়ে ফুটফুটে কন্যাসন্তান দেন। সভ্যতার ইতিহাস প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা সেই গ্রামটির নাম রেখেছিল-টুঙ্গিপাড়া। বাঙালির উজ্জীবন বাঙালির স্বাধীনতায় যেখানে শেখ মুজিবের জন্ম। মহাকালের ইতিহাস এ মাটির প্রার্থিত সেই কন্যাসন্তানের নাম সোনার হরফে অঙ্কিত করে শেখ হাসিনা। অর্থাৎ এখানে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর জীবনসঙ্গি প্রেরণাদায়িনী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ঘর আলো করে ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্ম নেন শেখ হাসিনা।
মানুষ জন্মায়, মানুষ মরে যায়। নশ্বর দেহ যায় কবর কিংবা চিতায়। শুধু বেঁচে থাকে কর্ম। বেঁচে থাকে জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী জীবন, কালপ্রবাহ। এর মধ্যে কেউ ইতিহাস স্রষ্টা, কেউ ইতিহাসের সাথে থাকে আর কেউ থাকে বেখবর। পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের মতো শেখ হাসিনাও ইতিহাসস্রষ্টা। ইতিহাস তাঁকেও বুকে আগলে রাখছে এবং রাখবে। পিতা শেখ মুজিবের মতো তিনিও টুঙ্গিপাড়ায় বাল্যশিক্ষা গ্রহণ করেন। সাত বছর বয়সে, ১৯৫৪ সালে পরিবারের সাথে চলে যান ঢাকার মোগলটুলির রজনীবোস লেনের বাড়িতে। পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা একদিন তাঁর হাতে নির্মিত হবে, তাই বুঝি প্রকৃতি তাঁর উপর সদয় ছিল। তিনি শিক্ষানুরাগি ছিলেন। ১৯৫৬ সালে ভর্তি হলেন টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দির,বর্তমানে শের-ই-বাংলা মহিলা স্কুল এ্যান্ড কলেজে। ১৯৬৫ সালে আজিমপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৬৭ সালে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট (ইডেন) কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু উদ্বিগ্ন ছিলেন। স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা ও জ্যেষ্ঠ সন্তান হাসিনার মাধ্যমে তাই পরিবার গুছিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। আলোকিত আগামীর প্রত্যাশায় ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু প্রিয়কন্যাকে পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিয়ে দেন। ব্যাহত হয় শিক্ষা। কিন্তু ধমনিতে যার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় তিনি কী আর থমকে যেতে পারেন? নাহ। তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
পরিবার ও স্কুল জীবন থেকে তাঁর রাজনীতি শুরু। তিনি ১৯৬২ তে ছাত্র আন্দোলন ও আইয়ুবের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬৬-৬৭ শিক্ষাবর্ষে ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদের সহ সভাপতি ও যুগপৎ ছাত্রলীগের সভানেত্রীও নির্বাচিত হন। এর ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সদস্য ও নেত্রী হিসেবে রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ছাত্রজীবনের এই বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার দিয়ে স্বদেশের মাটি ও মানুষকে নিবিড় ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করেন। অতিক্রম করেন দুঃসময় ও পরাধীনতার কালরাত্রি। সাত মার্চের উত্তাল ঢেউ। ২৫ মার্চের মধ্যরাত থেকে পিতার দীর্ঘ অনুপস্থিতি। মা, বোন রেহেনা ও ভাই রাসেলকে নিয়ে গৃহবন্দিত্বের মধ্যে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বছর ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই সজীব ওয়াজেদ জয়’র জন্ম। বিজয় অর্জনের পরের দিন ১৭ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা মুক্ত হন। ১৯৭২সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন স্বদেশের মাটিতে ফিরে আসেন শেখ হাসিনার পিতা এবং বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এদিন শেখ হাসিনার সাথে আনন্দের বন্যায় ভাসে মাতৃভূমির প্রতি ইঞ্চি জমি। হেসে ওঠে স্বদেশ- এগিয়ে যায় সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ। এ বছর, ৯ ডিসেম্বর ১৯৭২, জন্ম হয় কন্যাসন্তান সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের।
‘তাঁর কোন দেশের বাড়ি নেই
তাঁর বাড়ি টুঙ্গিপাড়া-বাংলাদেশের সমান’-এ পংক্তিদ্বয়ের মতো যিনি শাশ্বত,যিনি শ্যামল শস্যের দেশ ভালোবেসে,পতাকা সম উচ্চতায় দীর্ঘ হলেন সেই শেখ মুজিব ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আযান এবং শঙ্খধ্বনি উপেক্ষাকারী পাশবিক দানবের নিষ্ঠুরতায় মাসুম শিশু বাচ্চাসহ স্বপরিবারে শাহাদাৎ বরণ করেন। এ সময়ে শেখ হাসিনা, স্বামী,সন্তান আর ছোট বোন রেহেনাসহ জার্মনিতে অবস্থান করছিলেন। আল্লাহর অনুগ্রহে বেঁচে যান তিনি। তবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিরোধী সামরিক স্বৈরাচারের কারণে পরবর্তী ছয় বছর ১৯৮১ সালের ১৬মে পর্যন্ত বৃটেন ও ভারতে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়।
বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ভুলুণ্ঠিত হয়। বিপদাপন্ন হয় জাতি। অপেক্ষার প্রহর গুণে বাঙালি জাতি। ভাবে, ফিরে যদি বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি এমন আবেদন থেকে ঢাকার ইডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের তিন দিনের (১৪-১৬ফেব্রুয়ারি) ঐতিহাসিক কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে সর্বসম্মতিক্রমে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। অবসান ঘটে প্রবাস জীবনের। ফলে স্বদেশের দায়িত্ব নিতে ফিরে আসেন ১৭মে, ১৯৮১। এ বছরের ১২ জুন বঙ্গবন্ধুর বাড়ি শেখ হাসিনার কাছে হস্তন্তার করা হয়। ক্ষমতায় আসে আরেক স্বৈরাচার। ১৯৮২ সালের এ ঘটনা শেখ হাসিনা মেনে নিতে পারেন নি। ১৯৮৩ সালে তাই গঠিত হয় ১৫ দলীয় জোট। ১৫ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হন শেখ হাসিনা। চোখ বেঁধে তাকে নেয়া হয় ক্যান্টনমেন্টে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ১৯৮৫ সালে হজব্রত পালন করেন। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার স্বার্থে ১৯৮৬ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু সামরিক স্বৈরাচার তাঁর বিজয় কেড়ে নেয়। এতে বাধ্য হয়ে তিনি সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার ভূমিকায় অংশ নেন। ভীত সন্ত্রস্ত সামরিক সরকার ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর গৃহে অন্তরীণ রাখে। অপ্রতিরোধ্য গতিতে আওয়ামী লীগে জনসমর্থন বাড়তে থাকে। এমন সময় ১৯৮৮ সালের ২৪জানুয়ারি চট্টগ্রামে তাঁর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মিছিলে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশ ও বিডিআর এলোপাতাড়ি নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। তিনি জীবনে রক্ষা পেলেও দলীয় ৯ জন নেতাকর্মী নিহত হয়। প্রকম্পিত স্বৈরাচারের ভিত। বাধ্য হয়ে ১৯৯০ সালের ২৭ সভেম্বর সারাদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ধানমন্ডির বাসায় গৃহবন্দি করা হয়। সরকারের সকল আয়োজন মিথ্যে প্রতিপন্ন হয়। ৪ ডিসিম্বর জরুরি অবস্থা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অনুষ্ঠিত জনসভায় ভাষণ দেন। পতন ঘটে এরশাদের। বঙ্গবন্ধু পরবর্তী সময়ে ১৯৯১ সালে প্রথম নির্বাচনে তিনি সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হন। এক পর্যায়ে ১৯৯৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি বিরোধীদলের সদস্যরা একযোগে পদত্যাগ করেন এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির একদলীয় নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সরকার শেখ হাসিনার দাবি মেনে নেয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা পায়।
দীর্ঘ ২১ বছর পর, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসন লাভ করে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে ২৩ জুন বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে প্রথম সরকার গঠিত হয়। ১২ ডিসেম্বর ১৯৯৬ ভারতের সাথে গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি, ২ অক্টোবর ১৯৯৬ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা দায়ের, ১২ নভেম্বর ১৯৯৬ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল, ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন, ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মর্যাদায় প্রতিষ্ঠাসহ উল্লেখযোগ্য কাজ সম্পন্ন করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হন। কাজ করতে থাকেন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায়।
কোন সরকার শেখ হাসিনাকে সহ্য করতে পারেননি। তিনি জনগণের নেত্রী, এই ভয়ে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ড. ফখরুদ্দিনের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারও মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নে অপচেষ্টার অংশ হিসেবে ২০০৭ সালে ১৬ জুলাই গ্রেফতার করে। ২০০৮ সালের ১২ জুন প্যারলে মুক্তি পান। অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট সরকার ২৪৬টি আসন লাভ করে ও ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এ মেয়াদে ৩০ জুন ২০১১ পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাশ করেন। ১৪ মার্চ ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমা সংক্রান্ত মামলায় বাংলাদেশের বিজয়। ১৯ জুন ২০১২ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মোড়ক উম্মোচন, ১০ আগস্ট ২০১২ প্রথম ডিজিটাল কোরান শরীফ উদ্বোধনের মত উল্লেখযোগ্য কাজ করেন।
নিয়মানুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৪ দলীয় জোট আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠনের সুযোগ লাভ করেন। সমূদ্র সংক্রান্ত মামলায় ভারতের বিরুদ্ধেও জয় পায়। এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে শিঘ্রই। শেখ হাসিনার এমন অভাবনীয় উদ্যোগ ও কাজে পৃথিবীর দেশে দেশে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থা সম্মান সূচক ডিগ্রি, পুরুষ্কার ও সম্মাননায় ভূষিত করছেন। আইন, দর্শন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, শান্তি, সমাজসেবা, নেতৃত্ব, ক্ষুধা ও দারিদ্র দূরীকরণ, তথ্য প্রযুক্তি, পরিবেশ, মহিলা ও শিশু স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি বিষয়ে এসকল পুরুষ্কার, সম্মাননা ও সম্মান সূচক ডিগ্রি লাভ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, রাশিয়া, ভারত ও বাংলাদেশের মত আরো অনেক রাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান সূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন। জাতি সংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন থেকেও সম্মানজনক পুরুষ্কার লাভ করেছেন। যা বাঙালি ও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়, তিনি কল্যাণ ও সমৃদ্ধির কন্যা।
ব্যক্তিগতভাবে গুণী, সৃজনশীল ও ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা শেখ হাসিনার সাহিত্য প্রতিভা অন্যন্য। তিনি তাঁর পিতার মতো বাংলাদেশকে জানেন, জনগণের ভাষা বোঝেন এবং জনগণের ভাষায় কথা বলতে পারেন। তার সাথে তুলনা চলে এমন রাজনৈতিক প্রতিভা এদেশে এসময়ে আর একজনেরও নেই। তাঁর মতো সত্যিকারের দরদি লেখক-রাজনীতিকের অভাব রয়েছে। এ অভাব দেশ ও দেশের বাইরে। তার রচিত ও প্রকাশিত গ্রন্থের শিরোনাম থেকে সহজেই তা অনুমান করা যায়। যথা, ওরা টোকাই কেন (১৯৮৭), বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম (১৯৯৩), পিপলস এ্যান্ড ডেমোক্রেসি (১৯৯৭), বৃহৎ জনগোষ্ঠির উন্নয়ন (১৯৯৯), ডেভেলপমেন্ট অব দ্য মাসেজ (১৯৯৯), সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র (১৯৯৯), বিপন্ন গণতন্ত্র লাঞ্চিত মানবতা (২০০২), সহেনা মানবতার অবমাননা (২০০৩), লিভিং উইথ টিয়ার (২০০৮), সবুজের মাঠ পেরিয়ে (২০১১), দারিদ্র দূরীকরণ: কিছু চিন্তাভাবনা (১৯৯৩), আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি (১৯৯৮), আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন (২০০১), বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে শেখ মুজিবুর রহমান (সম্পা/১৯৯৮), আমার স্বপ্ন, আমার সংগ্রাম (সম্পা/১৯৯৩), বাংলা আমার, আমি বাংলার (সম্প/১৯৯৮), প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। ইতোমধ্যে তার রচনা সমগ্রও বেরিয়েছে।
শেখ হাসিনা। আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল। বাঙালির আশ্রয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এগিয়ে নেয়ার নিরন্তর সংগ্রামী ও অকুতোভয় রাষ্ট্রনায়ক। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবে কর্মসূচি অর্থনৈতিক মুক্তির রূপকার। ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের পথিকৃৎ। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করণের ডিজাইনার। গণমানুষের ভাবনার সঙ্গিÑ জননেত্রী। তিনি কর্মের মধ্য দিয়ে জনগণের হৃদয়ে আসীন। তাঁর অফুরন্ত স্বদেশপ্রেমে জনগণ সিক্ত। আর জনগণের ভালোবাসা ও প্রার্থনায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ নির্মাণে কান্তিহীন মুজিবতনয়া। যুগপৎ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স¦প্ন সার্থক করার একমাত্র ও অদ্বিতীয় নামÑশেখ হাসিনা। তিনি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও। আজ ২৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শুভ জন্মদিন। শুভ হোক আপনার জন্ম দিন। জনতার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা নিন।
খান চমন-ই-এলাহি : কবি, কলাম লেখক, ও অ্যাডভোকেট