শিউল মনজুর [] সাহিত্যের ছোট ছোট কাগজগুলোর আবেদন এখনো ফুরিয়ে যায় নি। যদিও সত্তর-আশি দশকের সাহিত্যের ছোট ছোট কাগজগুলোর আকৃতি-প্রকৃতি আর এই সময়ের সাহিত্যের কাগজগুলোর আকৃতি-প্রকৃতির মধ্যে বিস্তর পার্থক্য লক্ষণীয়। তবে নতুন লেখকদের আত্মপ্রকাশ কিংবা বিকাশ এর উর্বর জায়গা ঐ ছোট ছোট কাগজগুলোই। তাই নতুন লেখক তৈরীতে সাহিত্যের ছোট ছোট কাগজগুলো আজও উজ্জ্বল। ঝিনাইদহ এর কোট চাঁদপুর থেকে প্রকাশিত সাহিত্যের কাগজ কিংশুক তারই উদাহরণ। অর্থ্যাৎ কিংশুক এর ১৬তম সংখ্যাটি সম্প্রতি সেই উজ্জ্বলতা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে আমাদের সাহিত্যের বাজারে।
৭২ পৃষ্টার এই সংখ্যাটির সম্পাদক জিয়ারুল হোসেন। ঈদ ও শারদীয় সংখ্যা হিসেবে ঘোষিত এ সংখ্যায় গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, অনুবাদ কবিতা রয়েছে। নবীণ-প্রবীণ লেখক কবিদের সাথে যুক্ত হয়েছেন ওপার বাংলার কয়েকজন নবীণ-প্রবীণ লেখক কবি।
কিংশুকে প্রকাশিত একমাত্র প্রবন্ধ লিখেছেন পদ্মনাভ অধিকারী। তারঁ প্রবন্ধের শিরোনাম বাংলা কাব্যে যাদু-বাস্তবতা। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, যাদু=মায়া, ইন্দ্রিয়জাল বা ভেলকি। এক কথায় বলা যেতে পারে যে, হাতের কারসাজি। আর বাস্তবতা হচ্ছে ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান। এটা একটা সাধারণ বিষয়। কিন্তু বিষয়টি যখন বাংলা সাহিত্যে এসে যায়, তখন তা হয়ে ওঠে-অসাধারণ ব্যাপার। যা এক ভিন্নমাত্রা পায়। পদ্মনাভ অধিকারীর লেখা এ প্রবন্ধ থেকে যাদু বাস্তবতা প্রসঙ্গে আমরা এমন ধারণা লাভ করতে পারি।
কিংশুকে যাদের কবিতা এক ও একাধিক ছাপা হয়েছে তাদের তালিকা একেবারে ছোট নয়। সম্পাদক নবীণ ও প্রবীণ কবিদের সমন্বয়ে যাদের লেখা ছেপেছেন তারা হলেন, কামাল মাহমুদ, চঞ্চল শাহরিয়ার, শিউল মনজুর, শাহিন হাসান, কামাল হোসাইন, নিতাই সেন, মিতুল সাইফ, চৌধুরী ফরিদ আহমেদ,আহমদ রাকীব, বিশ্বনাথ অধিকারী, শামসুজ্জামান তপন, ডা. শামীম রেজা, দীপক সাহা, বিমল ভৌমিক, আক্তারুজ্জামান রকিব, রিপন আহমেদ, আমিনুর রহমান, আশিক বিশ্বাস, অনিন্দিতা মুক্তা, মুহাম্মদ আব্দুল মাজেদ, সৈয়দ শামীম রেজা মানিক, সমীর সেন, তপন গোস্বামী, সোমদত্তা চট্রোপাধ্যায়, প্রবোধ হাজরা, অনিরুদ্ধ রায়হান, দুলাল মুখার্জী, রোমেল ইসতিয়াক, জনি হাসান, দীপন দে, শিখা বসু, শান্তি সিংহ, সুদীপ্ত মিত্র, অর্ণব বসু মজুমদার, শাহিন আলম, সুবর্ণ আসসাইফ, রাজিয়া আক্তার রেখা, আব্দুল মান্নান খান প্রমুখ।
বেশ কিছু কবিতা আমাদের মনোযোগ আকর্ষন করে। তারুণ্যের ক্যানভাসে লেখা চারটি চমৎকার গল্প লিখেছেন, কাজী আব্দুর রহিম, আবদুল্লা আল ইমরান, নয়ন বিশ্বাস ও জিয়ারুল হোসেন। গল্পগুলো আমাদেরকে আনন্দ ও উৎসাহিত করে। লেখা অব্যাহত রাখলে তারাই হয়ে উঠতে পারবেন আমাদের আগামিদিনের কথাসাহিত্যিক।
একমাত্র অনুবাদ কবিতাটি পাঠকের জন্যে উপস্থাপন করেছেন, কাজী মাহমুদুর রহমান। ম্যারিও হাওউইট এর দ্যা স্পাইডার অ্যান্ড দ্যা ফাই কবিতাটির অনুবাদ আশা করি পাঠকের ভালো লাগবে। কবিতাটির শিরোনাম মাকড়সা ও মাছির সংলাপ। তবে কিংশুকে কিছু মুদ্রণ ক্রুটি রয়ে গেছে এবং আরেকটু গোছালো হলে আরো নান্দনিক হয়ে উঠতো। তারপরেও আমি মনে করি কিংশুক সবার হৃদয় জয় করে নেবে। সম্পাদককে অভিনন্দন। কিংশুক এগিয়ে যাক সমুদ্রের ঠিকানায়।
শিউল মনজুর কবি ও কথাসাহিত্যিক।