কালেরকন্ঠকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন

ভূয়ামুক্তিযোদ্ধা, জাল-সনদ ধারীদের বিচার ও মুক্তিযোদ্ধা সুরক্ষা আইন চাই

আবুল কাশেম চৌধুরী [] জালসনদধারী ও ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি চাই। এরা দেশ ও জাতির কলঙ্ক এবং ইতিহাসের ঘৃণ্যজীব। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতকারী। ভূয়া মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। পৃথিবীর কোন দেশে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার অস্তিত্ব নেই। ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা জটিলতার অবসান চাই, কঠোর হস্তে দমন চাই। ভূয়া ও জাল সনদধারী মুক্তিযোদ্ধাদের উৎখাৎ চাই। ভূয়ারা যে সব সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে সেসব রাষ্টীয় কোষাগারে ফেরৎ আনা চাই।

‘জাল সনদে হাজার হাজার ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা’ নামে দৈনিক কালেরকন্ঠের ২৫ সেপ্টেম্বর ৪ পর্বের প্রতিবেদন এবং ২৯/০৯/১৬ তারিখে সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। কালেরকন্ঠকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। ভূয়ামুক্তিযোদ্ধা/জাল সনদ নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের শিক্ষিত মানুষেরা তা করে থাকে! বাংলাদেশের শিক্ষিত মানুষদের অপকর্ম করতে একটু বিবেকের বাধা অনুভব করেনা। মরা মানুষকে জিন্দা করতে পারেনা তবে মৃত মানুষকে জীবিত দেখিয়ে সুবিধা আদায় করতে একটুও চিন্তা করেনা।

আমাদের জানা উচিৎ ১৯৭১সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী প্রকৃত মুক্তিয্দ্ধোাদের ৯০% গরিব  মানুষের সন্তান যারা অশিক্ষিত/স্বল্পশিক্ষিত। অশিক্ষিতদের মাঝে কেউ ভূয়া নেই। ভূয়া ও জালসনদধারী মুক্তিযোদ্ধারা সকলে লেখাপড়া জানা নীতি-নৈতিকতাহীন শিক্ষিত মানুষ।

১৯৭১ সালে ১৬ডিসেম্বর বিকাল ৪ টায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করছে অন্যদিকে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা হতে শুরু করে নৈতিকতাহীন শিক্ষিত যুবকেরা।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারি চাকুরীতে ৩০% কোটা ঘোষণা করলে ঐ শিক্ষিত যুবকেরা হামলে পড়ে, চাকুরীতে আবেদন করার মত শিক্ষিত যোগ্যতা সম্পন্ন মুক্তিযোদ্ধা ছিলনা বলে সে সুযোগ সরকারি চাকুরীতে মুক্তিযোদ্ধার নামে ভূয়ামুক্তিযোদ্ধা অর্ন্তভুক্ত হয় । বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সনদ বাণিজ্য করে বলে দৈনিক প্রতিদিনের (৩০/০৯/১৬) সংবাদে জানা যায়।

যে প্রবনতা ১৯৭২সালে শুরু হয়েছিল সে প্রবণতা আজও বিদ্যমান, বেরিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়নি। সরকারের একটি মহল জেনারেল ওসমানির স্বাক্ষরকৃত প্রায় ৩৩ লাখ সনদ বাজারে ছেড়ে দিয়ে মাত্র ১০টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ পাওয়া যেতে থাকে ১৯৭২/৭৩সালে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে জননেত্রীর শেখহাসিনার আন্তরিক ইচ্ছায় আহাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে যাচাই/বাছাইয়ের মাধ্যমে ১লাখ ৮৬হাজার ৭৯০ মুক্তিবার্তায় তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়-পরে গোপনে যাচাই/বাছাই করে ১লাখ ৫৪হাজার ৮৬১ জনের নাম লালবই নামে চুড়ান্ত করে।

মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নিয়ে কোন প্রকার বাড়াবাড়ি করার সুযোগ নেই। বাড়াবাড়ি করছে একমাত্র ভূয়া মুক্তিযোদ্ধারা নানা চলচাতুরীতে ও নিজেদের সুবিধা আদায় করতে। ৩৩লাখ থেকে ১লাখ ৫৪হাজার করা সম্ভব হলো বেসরকারিভাবে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারি ব্যবস্থায় সম্ভব হবেনা কেন? দলীয়করণের প্রভাব বিস্তার রহিত করা গেলে সহজে সঠিক মুক্তিযোদ্ধা তালিকা করা সম্ভব।

আমার এলাকার ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এমপির সহযোগীতায় যাকে-তাকে মুক্তিযোদ্ধা বানাচ্ছে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে ভূয়ামুক্তিযোদ্ধা বলে প্রচার করছে। আমার উপজেলায় বড়জোর একশত থেকে দেড়শত মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে বর্তমানে প্রায় ৪শ মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কোষাগার থেকে ভাতা গ্রহণ করছে এবং যুদ্ধাপরাধী মিরকাসেমের সহযোগী সহ সাড়ে ৫শ মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় পাইপ লাইনে আছে। আমি ভারতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা, আমাকেও তারা ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করেছে। বিনা সনদে ও গেজেটে ১৭জনকে সম্মানীভাতা প্রদান করেছে চট্টগাম পটিয়া উপজেলায়।

কালেরকন্ঠ বিভিন্ন ব্যাক্তি ও সেক্টর কমান্ডারদের বরাত দিয়ে বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা সংখ্যা উল্লেখ করেছে। সে সব সংখ্যা সঠিক নয়। সংখ্যা হবে এ রকম যে- সেনা, নৌ, বিমান, বিজিবি, অবসরপ্রাপ্ত সেনা মিলিয়ে ১৭ থেকে ২০ হাজার। FF মুক্তিযোদ্ধা ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়েছে ১লাখ ০৬ হজার, BLF এর প্রশিক্ষণ হয়েছে ১৩ হাজার। নৌ কমান্ডো ৪৯৯ জন। বামপন্থী গেরিলাদের প্রশিক্ষণ নিয়েছে প্রায় ৪হাজার, স্থানীয় ভাবে প্রশিক্ষিত/যোদ্ধা প্রায় ৮০ থেকে ৯০হাজার, এর সঙ্গে যুক্ত হবে স্বাধীন বাংলা বেতার কর্মীবৃন্দ, মুজিবনগর কর্মচারী বৃন্দ, খেলোয়াড় ও বিদেশে দুতাবাস কর্মীবৃন্দ। এর বাইরে মুক্তিযোদ্ধা থাকার সুযোগ নেই। এই হিসাবটা আমি পেয়েছিলাম মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রথম সভাপতি মরহুম মাহমুদ হাছানের কাছ থেকে। সবমিলিয়ে আড়াই লাখের বেশী হওয়ার কথা নয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে বিতকর্ ছিল। প্রথম থেকে একটি মহল কখনো চায়নি মুক্তিযোদ্ধার সঠিক তালিকা হোক এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ হোক। তারপরেও সচেতনমহল  কার্যকর ভুমিকা গহণ করলে এমনটি হতনা। কলেরকন্ঠের রির্পোটে  যে মুক্তিযোদ্ধা সংখ্যা প্রকাশ হয়েছে তা ভয়াবহচিত্র। আবেদনকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা মেনে নিলে ৫/৬ লাখের উপরে সংখ্যা দা‍ঁড়াবে।

এতই যদি মুক্তিযোদ্ধা থেকে থাকে তাহলে ৩ (তিন) মাসেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যেত ৯ মাসের প্রয়োজন হতনা! জাল সনদ প্রদান আর ভূয়া তৈরীকরা বাংলাদেশের সংস্কৃতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ নকল হয়/জাল হয়।বিচারকের সই নকল করে আসামী মুক্ত করে নিয়ে যায়, শিক্ষিতরা/জালসনদে উচ্চআদালতের বিচারকের আসন অলংকৃত করে সম্মানীত বিচারপতি। মুক্তিযোদ্ধা সনদে জাল হবেনা তা কি করে আশা করা যায়? বাঙালীদের মেধা ইতিবাচক কর্মে না লাগিয়ে নীতিবাচক কর্মে ব্যবহার করে থাকে সর্বদা।

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার দুর্ভাগ্য-ভূয়ামুক্তিযোদ্ধারা সবত্র নিজেদের আসন সুদৃঢ় করে নিয়েছে। যুদ্ধকালীন অনেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বিজয়ের পরে, দেশপ্রেম এবং সততার পরিচয় দিতে সক্ষম হননি। ফলে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা  সর্বত্র।

নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দ অনেকে ভূয়া, ফলে ভূয়াদের পোয়াবারো হয়েছে। মুনতাসির মামুনের ভাষায়- বাংলাদেশ সব সম্ভবের দেশ-বাংলাদেশ। জনাব মামুনকে ধন্যবাদ তিনি মুক্তিযোদ্ধা হননি। তাঁর মতো অনেকে ভূয়ামুক্তিযোদ্ধা হয়ে সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। জনাব মামুন মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সরকারি সুযোগ সুবিধা প্রদানে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রায়শ তিনি তা করে থাকেন, কারণ তিনি ও তাঁর পরিবারের কেউ মুক্তিযোদ্ধা নেই বলে। তিনি জানেনকি পৃথিবীর অন্য দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের কী কী সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়? বাংলাদেশ তার একাংশ দেয় কিনা? মুক্তিযোদ্ধারা চাওয়া-পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করেনি এ কথা একেবারে সঠিক। যদি দিতে হয় সবাইকে সমভাবে দিতে হবে, বৈষম্য করা সঠিক হবেনা, না হলে কাউকে নয়।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মহোদয় বলেন পৃথিবীর অন্য দেশে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যে সুযোগ/সুবিধা ও সম্মান দেয়্‍া হয় বাংলাদেশ তার ধারে কাছে যেতে পারেনি। দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে সুবিধা প্রদান অন্যায় ও গর্হিত কাজ তাতে মুক্তিযুদ্ধ/মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, মুক্তিযোদ্ধা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। দল ও সরকারি মেশেনারিজ মিলে দলীয় কর্মীকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে গেজেট করে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানীভাতা প্রদান করা সঠিক কাজ হতে পারেনা। যে এমপি মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, সে এমপির সুপারিশে মুক্তিযোদ্ধা হবে কেন?

কালেরকন্ঠে মুক্তিযোদ্ধা জালসনদ.ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, জানিনা সরকারের টনক নড়বে কিনা? মুক্তিযোদ্ধার নামে সরকারি অর্থ লুটপাট কখনো কাম্য হতে পারেনা। ভূয়াদের সুযোগ সুবিধা বন্ধ করা উচিৎ। সরকার যদি কোষাগারের অর্থ লুটপাটের পথ প্রসস্ত করে দেয় তাহলে বলার কিছু থাকেনা। আমি এ কথা বার বার লিখেছি অমুক্তিযোদ্ধাকে/মুক্তিযোদ্ধা বানানো অন্যায়- কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি। অনৈতিকতা সম্পন্ন শিক্ষিত মানুষগুলো দেশ জাতির এবং সমাজের শত্রু। ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে সরকারি কোষাগারের টাকা লুটপাট করেছে যে হারামখোরেরা, তাদেরকে শাস্তি দেয়া প্রয়োজন। ভূয়াদের ভাতা সহ সকল সুযোগ সুবিধা বন্ধের দাবী করেছি।

কার কথা কে শোনে? ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে হাজারো অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে কিন্তু অভিযোগের সুরাহা নেই। অনেক মুক্তিযোদ্ধা দাবী করেন-কুমিল্লায় যুদ্ধ করেছেন অথচ তারকোন অস্তিত্ব নেই কুমিল্লায়, তিনি ঢাকায় এসে মুক্তিযোদ্ধা হবেন কেন? অথবা চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ঢাকায় এসে মুক্তিযোদ্ধা হবে কেন? এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা তাকে চিহ্নিত করবে মুক্তিযোদ্ধা কিনা? ঢাকায় তাকে শনাক্ত করবে কে?এটা কেন হবে? সে কারণে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়ে চলেছে। আমার লেখনিতে বার বার দাবী করেছি ভূয়াদের শনাক্ত করে গেজেট ও সনদ বাতিল করুন।

ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ করতে হলে মুক্তিযোদ্ধা সু রক্ষা আইন প্রনোয়ন করতে হবে এর বিকল্প নেই। ভূয়ামুক্তিযোদ্ধা প্রমাণিত হলে মৃতুদন্ড এবং যারা ভূয়াকে সহযোগীতা করেছে তাদের আজীবন কারাদন্ড বিধান রেখে আইনি সুরক্ষা দিতে হবে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে। কর্মকর্তাসহ যারা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অফিস আদালতে অবহেলা করবে,অপমানিত/অপদস্ত করবে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যে সব মুক্তিযোদ্ধা অন্যায় ও অপরাধ করবে তাঁদের শাস্তি হতে হবে প্রচলিত আইনে দ্বিগুন।

দেশ মাতৃকার সেবায় দেশপ্রেমে উজ্জিবীত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে যারা জাতিকে স্বাধীনতা উপহার দেয় তাঁরা অন্যায়/অপরাধ করতে পারেন না, অতএব অপরাধ করলে দ্বিগুন শাস্তি ভোগ করতে হবে অপরাধী মুক্তিযোদ্ধাকে। মুক্তিযোদ্ধারা ধোয়াতুলশী পাতা নয়-আইনের উর্ধেও নয়। কে বা কারা মুক্তিযোদ্ধা সেটা নির্ধারণ করবে মুক্তিযোদ্ধারা।

মুক্তিযোদ্ধাদেরকে কী কী সুযোগ,সুবিধা প্রদান করবে তা একান্তই সরকারের ব্যাপার। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সরকার যা সুযোগ,সুবিধা প্রদান করবে তা আইন কাটামোর মধ্যে নিশ্চিত করা দরকার।সরকার পরিবর্তন হলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে বিষয়টি বিবেচনার দাবী রাখে।

কালেরকন্ঠের সংবাদে বলা হয়েছে ভারতীয় তালিকা সহ বিভিন্ন তালিকার একেক নামে কয়েকটি সনদ প্রদান করা হয়েছে এবং কয়েকজন সুবিধা ভোগকরছে, এর চেয়ে বড় জালিয়াতি কী হতে পারে?

আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাকে পার্থক্য করে সে কারণে সমস্যা প্রকট হয়েছে। গরিবের সন্তান প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা–যুদ্ধে হিরো হলেও বাস্তব জীবনে পরাজিত,কষ্টকর মানবেতর জীবন যাপন করছে। গরিব মানুষের সন্তান আসল মুক্তিযোদ্ধা প্রায় ৯০% এবং ১০% এর কম স্বচ্ছল/শিক্ষিত পরিবারের সন্তান।সে কারণে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্রের বোঝা। রাজাকার বাহিনী গঠনের প্রক্রিয়া সম্পাদনকারী পুর্বপাকিস্তানের পুলিশের আইজিপি তসলিম উদ্দিনকে বিজয়ের পর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বরাষ্ট সচিব পদে পদায়িত করা হয়,  স্বরাষ্ট সচিব তসলিম মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্রের বোঝা বলে যুক্তি দেখিয়েছে ১৯৭২ এর এপ্রিল মাসে।(প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহাম্মদের মুক্তিযোদ্ধা পুনঃবাসনের পরিকল্পনাও ছিল) আজও মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে রইল? মুক্তিযোদ্ধাদের ভাগ্যে পরিবর্তন হবে না, বেসকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান মালিক/ব্যবসায়ীরা মুক্তিযুদ্ধ/মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে ভাল ধারণা পোষন করেন না।

১৯৯৯ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ১৮ দফা কর্মসুচি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীসভার বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পুর্বক বাস্তবায়ন করতে পারেননি নানা কারণে। জানুয়ারী ২০১৪ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিকিৎসা সম্পর্কিত সরকারি সার্কুলার জারি করে পরবর্তীতে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সচিব ও ডিজিকে নির্দেশ দেয়া সত্তেও অকার্যকর সে সার্কুলার। ২৮ অক্টোবর ২০১০ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিলেন সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সরকারি খরচে বাড়ি করে দেবেন সে প্রতিশ্রুতি-প্রতিশ্রুতি রয়ে গেল। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তাব সম্মানীভাতার বিপরীতে সুদমুক্ত ১৫ লাখ টাকা গৃহঋণ প্রদান করতে সে প্রস্তাব আজও বিবেচিত হয়নি।

সে দিন পল্টনে এক অফিসে বসে কথা বলছিলাম, এক যুবক বলল মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সরকার অনেক দিয়েছে মাসিক দশ হাজার টাকা আর কত দেবে? মুক্তিযোদ্ধারা অকৃতজ্ঞ!!! আমার মনে হয়েছে একটি মহল সুকৌশলে প্রচার কার্যক্রম শুরু করেছে মুক্তিযোদ্ধা বিরোধী। সরকার বিভিন্ন অনঅগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য উন্নয়নকল্পে প্রকল্প গ্রহণ করেছে কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সম্মুন্নত রাখতে হলে-মুক্তিযোদ্ধা সুরক্ষা আইনের বিকল্প নেই।

আবুল কাশেম চৌধুরী প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ,কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts