বাজেট হোক আইনের শাসনের, দারিদ্র বিমোচনের

আবুল কাশেম চেীধুরী ।।
১২ নভেম্বর ২০১৫ অর্থমন্ত্রীর বরাত দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক আগামীতে আসছে এক বিশাল বাজেট নামে শিরোনাম পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাতে বোঝা যায় অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রনয়নের কার্যক্রম শুরু করেছে। দেশ এগিয়ে চলেছে বাজেট বিশাল বাজেট হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার প্রচুর উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছে, কিন্তু জনগণ যথার্থ সুফল পায়নি সু-শাসন ও আইনের শাসনের অভাবে। আইনের শাসন নিশ্চিত করা হলে দেশের ৭৫% সমস্যা সহজে সমাধান হয়ে যেত। সু-শাসনের সমস্যা আজ এক দিনের সমস্যা নয় এই সমস্যা অনেক পুরোনো, ৪৪ বছর যাবৎ বিরাজমান।

এ সমস্যা সমাধানে বিগত দিনের কোন সরকারই প্রচেষ্টা গ্রহণ করেনি।  শেখ হাসিনার সরকার পদক্ষেপ নিলেও তা যথার্থ নয়। আইনের শাসন যেমন প্রতিষ্ঠা পায়নি তেমন ন্যায় বিচার সর্বক্ষেত্রে নিশ্চিত হয়নি। তাই সু শাসন/আইনের প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে বাজেট প্রনয়ন করতে হবে।

এবারের বাজট হতে হবে আইনের ও সুশাসন এবং সুশিক্ষার বাজেট। ন্যায়বিচার কায়েম, গরিবী হটানোর ও  গণমানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করণের বাজেট। ঘুষ দর্নীতি অপশাসন রোধের বাজেট। জনকল্যাণ মুলক রাষ্ট্রগঠনের বাজেট। দুর্নীতি মুক্ত রাষ্ট্র গঠন ও দুর্নীতি বাজদের বিচার নিশ্চিত করণের ও কর্মসংস্থানের বাজেট। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা/মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার কায়েমের বাজেট। ১৯৯৭ সালে স্বাধীনতাস্তম্ভের কাজ শুরু করা হলেও ২০১৫ সালেও প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করা হয়নি, স্বাধীনতাস্তম্ভের কাজ সমাপ্ত করার বাজেট।

শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরী হলেও সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরী করা সম্ভব হয়নি। লেখাপড়া জানা মানুষদের সিংহভাগ অসৎ  দুর্নীতি পরায়ন, ১৯৭৩ সালে জাতির জনক সোহর‍াওয়ার্দী  উদ্যোনে এক জনসভায় বলেছিলেন আমার কৃষক, আমার শ্রমিক দুর্নীতি করেনা দুর্নীতি করে শিক্ষিত সমাজ। বর্তমানে শিক্ষিত সমাজের দুর্নীতি আকাশ চুম্বি/পুকুর চুরি। সু শিক্ষিত জনগোষ্টী গড়ে তুলতে পারলে আজ এ অবস্থা হতনা। দুর্নীতি মুক্ত দেশপ্রেমিক শিক্ষিত জনগোষ্টী গড়ে তুলতে না পারলে দেশ ও জাতির কাঙ্কিত উন্নয়ন হবে না হতে পারে না। দক্ষ শিক্ষিত দেশ প্রেমিক জনগোষ্টী গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় বাজেট চাই।

বিদ্যা অমূল্য সম্পদ তাই বলে বিনা মূল্যে শিক্ষা বিতরণ করা সমীচীন নয়।  নির্ধারিত মূল্যে অভিভাবকেরা বই কিনে নেবে। সামর্থহীনেরা বিনা মূল্যে বই পাবে। অভিভাবকের আয় অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা বেতন দেবে। বিনা মূল্যে অর্জন কৃত সম্পদের প্রতি কারো দরদ থাকে না- থাকতে পারে না। শিক্ষা বাবদ  খরচ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে, শিক্ষা লিল্লাহ নয়। সুশিক্ষায় শিক্ষিত সমাজ গড়ে তুলতে না পারলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার হতে বাধ্য। শিক্ষার মান সকল ক্ষেত্রে সমমান হতে হবে, গ্রাম ও শহর বলে কথা নয়। বেছে বেছে স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি করা বন্ধ করতে হবে।

শিক্ষিত জনগোষ্টী গড়ে তুলতে হবে- গ্রেট প্রাপ্ত নয়। পাসের হারও শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। মেডিকেল কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বেতন/হোষ্টেল ভাড়া বাড়িয়ে সময় উপযোগী করতে হবে। সকল প্রকার নোট, গাইড বই, কোচিং বন্ধ করতে হবে। নোট, গাইড বই, কোচিং এর শিক্ষায় পরীক্ষায় পাস করা যায় কিন্তু শিক্ষা অর্জন করা যায় না।

প্রকৃত/সুশিক্ষা ছাড়া দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী সৃষ্টি হবে না, সুশিক্ষিত দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী ছাড়া জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব হবে না। যে শিক্ষা নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ তৈরী করে না বিবেকের  প্রসার ঘটায় না সে শিক্ষা জনমানুষের কাম্য হতে পারে না। নৈতিকতা শিক্ষার মানদন্ড হতে হবে। তা না হলে শিক্ষা খাতে যত বাজেট বরাদ্দ করা হউক না কেন? সুফল পাওয়া যাবে না। শিক্ষাখাতে যথার্থ বিনিয়োগ প্রয়োজন। ঘুষ বাণিজ্য ছাড়া বাংলাদেশে প্রায় ৮০% চাকরী হয় না, যোগ্যরা ঘুষ দিয়ে চাকরী গ্রহণ করতে আগ্রহী হয় না ফলে অযোগ্যরাই ঘুষ প্রদান করে চাকরীতে যোগদান করে তার ফল জনগণ দেথতে পাচ্ছে।

সুশাসন প্রতিষ্টা করতে হলে সরকারি প্রতিটি মন্ত্রণালয়/অধিদপ্তরে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ প্রদান করতে হবে। সীমিত লোকবল দিয়ে ১৬ কোটি মানুষের দেশ পরিচলনা করা সম্ভব নয়। আয়তনের দিক দিয়ে আমাদের দেশ ছোট হতে পারে -জনসংখ্যার দিক অনেক বড়।  প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়াগ প্রদান না করলে প্রশাসন যথাযথ কাজ করতে সক্ষম হবেনা। জনবল নিয়োগের জন্য যথার্থ বাজেট বরাদ্দ করা প্রয়োজন।

আইনের শাসন ছাড়া উন্নয়ন টেকসই হবেনা, হতে পারেনা। জনবল নিয়োগ দিয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষিত দক্ষ সৎ দেশপ্রেমিক জনশক্তি ছাড়া সু শাসন/আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবেনা। কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবেনা। কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার। ঘুষ দুর্নীতি মুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। উন্নয়ন কার্যক্রম ধারাবাহিক রেখে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সু নজর দিতে হবে। প্রয়োজনীয় লোকবল ছাড়া দুর্নীতি মুক্ত সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবেনা। সৎ দক্ষ জনবল তৈরী করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও অপচয় না হলে জাতি অনেক এগিয়ে যেত।

আয়কর/ভ্যাট/পুলিশ বিভাগ/বিচার বিভাগ/ভুমি অফিসে যে দুর্নীতি হয় তা অবাক হওয়ার মতো। বাংলাদেশের শিক্ষিত জনসমাজ চাকুরীজীবীরা দুর্নীতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। দায়িত্বহীন শিক্ষিত মানুষ পশুর চেয়েও অধম। শিক্ষিত বলে দাবীদার অধমদের কাছ থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। চাকুরীজীবীরা হবেন জনগণের সেবক, অন্য কিছু নয়। যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষিত দায়িত্ববান দক্ষ জনশক্তি দেশবাসীর কাম্য। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনশক্তি দরকার ১৬ কোটি মানুষের সেবার জন্য।

পুলিশ, আয়কর/ভ্যাটবিভাগ সহ প্রায় মন্ত্রণালয়ের একই অবস্থা। সরকারি এমন কোন প্রতিষ্ঠান নাই যে প্রতিষ্ঠানে লোকবলের প্রয়োজন নেই। যারা চাকরীরত আছেন তাদের মধ্যে প্রায় ৯৯% দুর্নীতিবাজ। প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ করলে শিক্ষিত জনগোষ্টীর এক বিরাট অংশের কর্মসংস্থান হবে। দুর্নীতি কমে যাবে, ন্যায় বিচার ও সু শাসন নিশ্চিত করা যাবে সহজে।

সরকারি চাকুরীজীবীরা জনগণের সেবক- প্রভু নয়। সেবা গ্রহণকারী জনগণকে হয়রানী করা যেন চাকরীজীবীদের দায়িত্ব। হয়রানী না করে চাকুরীজীবিরা স্বস্তি পায় না অনেক উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। সঙ্গত কারণে বিরত রইলাম। এমনি অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে হলে একমাত্র সু শিক্ষার বিকল্প নেই। সু শিক্ষার জন্য যোগ্য মেধাবী দেশপ্রেমিক শিক্ষক প্রয়োজন যাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ শিক্ষক হিসাবে গড়ে তোলা হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া হতে হবে স্বচ্ছ দুর্নীতিমুক্ত। তা হলে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যাবে।

আজও মোট জনসংখ্যার ৪০% দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। অনেকের তিন বেলা খাবার জোটেনা কর্মসংস্থানের অভাবে। কমসংস্থান সৃষ্টি করা নাহলে দারিদ্র বিমোচন সহজ হবেনা। উন্নয়নও টেকসই হবে না। ভাত কাপড়ের নিশ্চয়তা দিতে না পারলে জাতীয় প্রবৃদ্ধি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুফল বয়ে আনবে না। শুভঙ্করের ফাঁক দিয়ে দেশ চালানো যায় না। গরিব মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন ছাড়া জাতি এগিয়ে যেতে পারবে না। গরিব জনসংখ্যার হার অনেক বেশী। তারপরেও দেশকে টিকিয়ে রেখেছে গরিব মানুষেরা সন্তানেরা। যারা কৃষক, ক্ষেতমজুর, দেশে ও বিদেশে শ্রম বিক্রিকারী! শিক্ষিত ও বিত্তবান মানুষেরা দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে গিয়ে খরচ করে, এরা নিজেদের সন্তানদেরকে বিদেশে লেখাপড়া করায়।

গ্রামীন জনগোষ্ঠীতে বাল্যবিয়ে ও যৌতুক মহা সমস্যা। বাল্য বিয়ে যৌতুক প্রথা অভিশাপ মহামারি আকার ধারণ করেছে। লেখাপড়া জানা ছেলে/অশিক্ষিত ছেলেরা কেউ কারো থেকে কম নয়। কন্যা দায়গ্রস্ত পিতাদের কী অবস্থা? বলার অপেক্ষা রাখেনা। সাধারণ মানুষ কন্যা দায়গ্রস্থ পিতাদের কাছে দেশের ওঠতি বিত্তবানেরা মহা অভিশাপ। এ গোষ্ঠী মোটা অংকে উপহার/উপঢৌকন কন্যার বিয়েতে দিয়ে থাকে তাতে সমাজে এক বিরোপ প্রতিক্রিয়া দেখাদেয়। এতে কন্যা দায়গ্রস্থ পিতারা হিমসিম খেতে বাধ্য তাঁদের দেবার সামর্থ নেই। কিন্তু বাধ্য হয়ে কন্যা দায়গ্রস্থ পিতাদেরকে জমি বিক্রি করে অথবা চাঁদা তুলে কন্যার বরকে সন্তোষ্ট করতে হয়। যা ধর্মীয় বিধান এবং দেশের আইন সম্মত নয়। এ ধরণের বর্বর অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে হবে।

কন্যা দায়গ্রস্থ পিতা/মাতার কান্না দেখার কেউ নেই। এমপি/মন্ত্রী ও প্রশাসনের লোকজনের এ সব বিষয় দেখার সুযোগ কোথায়? কন্যা দায়গ্রস্থ পিতাদের  কান্নার রোল কবে শেষ হবে বিধাতাই জানেন। ছেলেরা মনে করে কন্যার পিতারা কন্যা জম্ম দিয়ে অপরাধ করেছে, অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে? মোটা অংকে যৌতুক ও নানা উপঢৌকন আদায় করতে হবে।  নষ্ট সমাজকে বদলাতে হলে বড় ধরণের ঝাঁকুনী প্রয়োজন। সে ঝাঁকুনী একমাত্র সু শিক্ষাই দিতে পারে। শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে যথাযথ শিক্ষা প্রদান করতে হবে।

বয়স্ক, বিধবা/স্বামী পরিত্যাক্ত  গরিব জনগোষ্টীর জন্য সরকার ভাতা সহ নানা সুযোগ সুবিধা চালু করেছে কিন্তু তা অতি অপ্রতুল। উপকার ভোগীর সংখ্যা অতি সীমিত, উপকার ভোগীর সংখ্যা বাড়াতে হবে কয়েক গুন। অর্থের পরিমান বাড়াতে হবে ৪ গুণ। গরিব মানুষের হাহাকার কমাতে হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কর্মপন্থা অবলম্বন করতে হবে।

ইউনিয়ন জেলা/কেন্দ্র পর্যন্ত চাঁদাবাজি/দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। যার যা প্রাপ্য তা যেন সবাই পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের আমলে গ্রামীন সমাজে অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ড হলেও দৃশ্যমান হচ্ছেনা দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির কারণে। কর্মসংস্থানের বাজেট বর্তমানে দেশের মানুষের চাহিদা।

প্রধানমন্ত্রী ২১ নভেম্বর সেনা কুজ্ঞের অনুষ্ঠানে বলেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরাধিকারের জন্য যা করা প্রয়োজন তিনি ও তাঁর সরকার তা করবেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ভুলতে পারেন না তিনি ভোলা উচিৎ নয়। পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে বাংলাদেশ। মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের জীবন তুচ্ছঞ্জান করে মুক্তিযুদ্ধে অন্যান্য অবদান রেখে মুক্তিযোদ্ধারা আমাদেরকে একটি দেশ ও লাল সবুজ পতাকা উপহার দিয়েছে। এ জন্য জাতি বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন ও মর্যাদায় পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করতে এবং সর্বৌচ্চ স্বীকৃতি দিতে তাঁর সরকার কাজ করছে। আমি তাঁদেরকে সম্মান করি, জাতীয় ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সম্মান মর্যাদা প্রদান করা উচিৎ। মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভুল তালিকা করতে ডাটবেজের মাধ্যমে কাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিনীত ভাবে বলতে চাই, মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স প্রায় শেষ প্রান্তে দিনের পর দিন তাঁরা মৃত্যুবরণ করছে।  অনেকের বাসস্থান নেই, চিকিৎসার অভাবে ধুকে ধুকে মৃত্যুর পখে এগিয়ে যাচ্ছে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ৬০ বছরের উপরে। একটি মহলের সহযোগীতায় ভূয়াদের সংখ্যা বাড়ছে। প্রায় ১ লাখের মত সাধারণ গরিব প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে।  মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকার প্রধানের কিছু করার থাকলে এখনই সময়।

১৯৭১ সালে সংগঠিত হয়েছিল আমাদের সু মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় ৯০% ছিলেন সাধারণ গরিব মানুষের সন্তান যারা অশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত। তাঁরা আজও অবহেলিত অবমূল্যায়িত তাঁদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা কষ্টকর মানবেতর জীবন যাপন করে চলেছে এদের দেখার কেউ নেই। তাঁরা প্রধানমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রীর সু- নজর প্রত্যাশা করছে।  অক্ষত সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা স্ব সম্মানে সমাজে বাচঁতে চায়। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা ২০১৫/১৬ এর বাজেটে যথার্থ বরাদ্দ প্রত্যাশা করছে।

চিকিৎসা সংক্রান্ত সরকারি সার্কুলার থাকা সত্বেও সরকারি/আধাসরকারি হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানির শেষ নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে অর্থ বরাদ্দ নেই।। মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎস্বার্থে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। (যে কোন ব্যাংকে একশত কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট রাখা হলে সে টাকার মুনাফা দিয়ে সারাজীবন মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা চলবে।)

বর্তমান বাজারদর বিবেচনা করে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা ২০,০০০ (বিশ) হাজার টাকা ২০১৬ সাল থেকে প্রদান করা উচিৎ। ভাতার সমপরিমান টাকা সরকারি চাকুরীজীবিদের ন্যায় বছরে বোনাস প্রদান করতে হবে। প্রকৃত সকল মুক্তিযোদ্ধাকে ভি আইপি মর্যাদা প্রদান করতে হবে। সেনা বিজিবি, পুলিশ সদস্যের ন্যায় সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রেশনিং ব্যবস্থায় আনতে হবে। আত্মসম্মান বোধ সম্পন্ন নীতিবান মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধের পর থকে তেমন কিছু দাবী করেননি, পাননি। অন্য দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা তুলনাও করেনি।

মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১ প্রকার নির্ধারণ করার জন্য আইনি ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। খেতাব প্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা যা যা সুযোগ/সুবিধা পাচ্ছেন তা যথার্থ কিন্তু মৃত্যুর পর তাঁদের পরিবারবর্গ সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যায় সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারেন সে ব্যবস্থা নিশ্চিত কর‍া উচিৎ।

সকল সম্মানীত সেক্টর কমান্ডার ও খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা- বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম, বীরপ্রতীক প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের এক জায়গায় সমাধিস্থল করা প্রয়োজন তা করা হলে এটি হবে একটি দর্শনীয়স্থান। পর্যটকদের জন্য হবে আকর্ষনীয় স্থান হবে যেমন ওয়ারসেমিট্রি। মানবতা বিরোধী/ যুদ্ধাপরাধী মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ও সাজা প্রাপ্তদেরও এক জায়গায় সমাধিস্ত করা উচিৎ। ইতিহাসের এই কলঙ্ক লিপিবদ্ধ থাকবে, অপরাধীদের সমাধিস্তল হবে গণমানুষের ঘৃণার জায়গা। পর্যটকদের জন্য হবে আকর্ষণীয়স্থান। এটি বর্তমান সময়ের দাবী।

 সামরিক বাহিনী দিবসের মত সরকারি ভাবে মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালন করা উচিৎ। ২০০৪ সালে ১০ নভেম্বর ১৪ দলীয় নেতারা মরহুম আবদুল জলিল ও আবদুর রাজ্জাক, সর্বজনাব তোফায়েল আহাম্মদ, রাশেদ খান মেনন, মেজর জেঃ শফিউল্লাহ, মেজর জেঃ সি আর দত্ত, সহ অন্য নেতাদের উপস্থিতে বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু মুক্তাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ২৬ দফা কমসুচি ঘোষণা করেন, ২৬ দফার মধ্যে ১ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষণা করা হয়, আজ পর্যন্ত সরকারি ভাবে মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালন করা হয়নি, সরকারি ভাবে আলাদাভাবে ১ ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালন করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।

আশা করি, ২০১৫/১৬ বাজেট হবে সাধারণ গণমানুষের বাজেট। সাধারণ গরিব মানুষের গরিবী দুর করার ও জনকল্যাণের বাজেট। সু শাসন প্রতিষ্টার ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করণের বাজেট। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের বাজেট।

আবুল কাশেম চৌধুরী : প্রাক্তন সম্পাদক মন্ডলী সদস্য, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল

quashemchy@gmail.com

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts