আখতার-উজ-জামান [] স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি নিয়ে যখন বিব্রত বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগ, তখন তাকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি ছিল তার জন্য অগ্নিপরীক্ষা। কিন্তু আন্তরিক প্রচেষ্টা ও দতায় এই কর্মযজ্ঞ এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি প্রতি পদেই সফলতার মুখ দেখেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শেষ পর্যন্ত নিজ দলেও পুরস্কৃত হলেন পরীক্ষিত নেতা। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন সেই ওবায়দুল কাদের।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রাচীন ও শক্তিশালী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে সত্যিকার চমক দেখিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। লেখক, সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের যেমন ছিলেন মেধাবী ছাত্রনেতা, তেমনি কর্মেও দেখিয়েছেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার বড়রাজাপুর গ্রামে ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন ওবায়দুল কাদের। বাবা মোশাররফ হোসেন ও মা ফজিলাতুন্নেছা ছিলেন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। পিতা মোশাররফ হোসেনের সহপাঠী ছিলেন জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিও কলকাতা ইসলামীয়া কলেজের ছাত্র ছিলেন। বাবা মোশাররফ সরকারি চাকুরি ছেড়ে দিয়ে জনশিক্ষা স্বার্থে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর বাবার আদর্শকে লালন করে আজও ন্যায় নিষ্ঠাবান ভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন ওবায়দুল কাদের।
বসুরহাট এএইচসি বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তবে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন কলেজ জীবন থেকে। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন ও ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর-বিএলএফ অধিনায়ক ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার কারা বরণ করেন। ১৯৭৫ এর পর এক নাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুইবার ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।
দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা ও লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত আছেন তিনি। দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন আওয়ামী লীগের নতুন সাধারন সম্পাদক। রচনা করেছেন আটটি গ্রন্থ।
গ্রন্থগুলি হলো : (১) Bangladesh: A Revolution Betrayed, (যা ১৯৭৬ সালে কলকাতা মনীষা পাবিলশার্স প্রকাশ করেছে) (২) বাংলাদেশের হৃদয় হতে (৩) পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু (৪) এই বিজয়ের মুকুট কোথায় (৫) তিন সমুদ্রের দেশে (৬) মেঘে মেঘে অনেক বেলা (৭) রচনা সমগ্র (৮) কারাগারে লেখা অনুস্মৃতি: যে কথা বলা হয়নি।
রাজনৈতিক জীবনে ওবায়দুল কাদের বিগত ১২ জুন ’৯৬-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২৩ জুন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। একই দিনে যুবক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ের দায়িত্বপ্রাাপ্ত হন। তিনি ২০০১ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সৎ ও নিষ্ঠার সাথে পালন করেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান ওবায়দুল কাদের। ওয়ান ইলেভেনের পর তিনি ১৭ মাস ২৬ দিন কারাবরণ করেন। নোয়াখালী থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ২০০৯ সালে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের। ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর মহাজোট সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী হন তিনি। বর্তমানে এটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচিত। এবারের কাউন্সিলে সভাপতি পদে আর কোনো নাম প্রস্তাব না পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার। অষ্টমবারের মতো দলের সভাপতি হলেন শেখ হাসিনা। সেই ১৯৮১ সাল থেকে দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তিনি।
পরিশেষে প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নতুন সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের-এর জীবন বিবরণী তাঁর সততা ও নিষ্ঠার কথাই প্রমাণ করে তিনি একজন আদর্শবান রাজনীতিবিদ। একটি সুদীর্ঘ ও সমৃদ্ধ রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী তিনি। একজন সংস্কৃতিমনষ্ক, উদার, প্রজ্ঞাবান, বাগ্মী, স্পষ্টবাদী, ত্যাগী ও নিষ্ঠাবান স্বাপ্নিক রাজনৈতিক নেতা হিসাবে তাঁর পরিচিতি।