পঞ্চ চন্দ্রকবিতা

চন্দ্রগ্রস্ত
মুস্তাফিজ শফি

আজ তবে দহনের রাত। ধবল জোৎস্নায় গাছের ছায়ায় বাতাসেরা খেলা করে। আর কানে বাজে মায়াহরিণীর অস্ফুট পদধ্বনি, বনমোরগের আর্তনাদ। শৈশবের সেই বেহালা বাদকের কথা মনে করতে করতে এখনও টের পাই প্রকৃতির ভায়োলিন। আকাশের নীল ধরবে বলে দিগন্ত রেখা বরাবর ছুটতো সে। এভাবেই তবে শূণ্যতার কাছাকাছি যাওয়া যায়? এভাবেই পোড়ে খাক হয় বধির স্তব্ধতা?

রক্তে ছেয়ে যাওয়া এই স্বপ্নময় চোখ, চর্যাপদ থেকে উঠে আসা এই প্রাগৈতিহাসিক হাত; আর চোখের দৃষ্টি সীমায় গজিয়ে ওঠা লাল আপেলের বাগানের কসম, বুকের ভেতর গুমরে কাঁদা সোনালী চড়ুইগুলোকে আমি আজ সত্যিই উড়িয়ে দেবো, আর সেই বেহালা বাদকের মতো অন্ধ বিষন্ন ছায়াপথ ধরে হেঁটে যাবো দিগন্ত রেখা বরাবর দূর বহুদূর।

আমি তার কাধের ঝোলায় শৈশবের ঘাস ফড়িং ভোরগুলোকে গচ্ছিত রেখে ভেবেছিলাম উড়তে উড়তে ওরাও একদিন পথ হারাবে স্বপ্নবৃক্ষের মায়ায়। আর তার ছায়ায় হবে আমার বাসস্থান। মন খারাপের ডাহুক সন্ধায় মেঘবালিকারা রোজ যেখানে ফিরবে ঝাপি ভর্তি উচ্ছলতা নিয়ে।

একেকটি নারী হারিয়ে যায়, আর মাঝপথে চোরাবালিতে মুখ থুবড়ে পড়ে একেকটি নদী। উজান স্রোেত ধাবমান ইলিশের মতো শৈশবের বালিকারা সব প্রণয় কাতর। ওরা সব ঝরে পড়া শিউলিমালা, ধবল নরম শাদা হাঁস, নীল ঘাসফুল।

আমি কি তবে আজ লিখবো নারী হয়ে ওঠার আগেই ঝরে পড়া সেইসব বালিকাদের কথা? আমার ভেতর মাঝে মাঝেই কেউ একজন জেগে ওঠে, কানে বাজে দূর থেকে ভেসে আসা ট্রেনের হুইসেল, শিউলীদের পুজো ঘরের উলুধ্বনি। প্রতীমাগুলোকে মনে হয় নীল শাড়ি পরা সাগর দিদি। সেই শৈশবে প্রেম শব্দটির সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠার আগেই দিদির শরীর আর শিউলীর মুখ দেখে শিহরিত হয়েছিলাম।

গভীর মনযোগে তোমরা কি কখনো প্রার্থনাশালার দিকে গিয়েছিলে? সেই দিকে পায়ে হাটা দীর্ঘপথতো আমার সেই শৈশব থেকেই শুরু। এখনো টের পাই গলায় ঝুলছে শিউলিমালা। দহনদগ্ধ মধ্যরাতে এখনও হাতড়ে খুঁজি শিস দিয়ে যাওয়া সেই পাতাবাহার দুপুর। দেবীর বোধনের দিনে সেই যে চোখাচোখি, সেই যে মায়াময় মুগ্ধতা, ভুলিনি আমি, ভুলিনি কিছু।

সেইসব ওড়াওড়ির দিন, শালিকনগর, চরজাগা নদী, ধুধু মাঠ, বালুচর- ওরাও কি মনে রাখবে কেউ এসেছিলো একদিন এইখানে, ধুসর ছায়ার সঙ্গে অদ্ভুত আলিঙ্গনে রচেছিলো আশ্চর্য আখ্যান? সে এক গোত্রবিতাড়িত বিভাগী প্রেমিক ছিলো, তাই তার পায়ের ছাপ লেগে থাকে খরায় চৌচির ক্ষেতের বিষন্ন শরীরে, ধুসর পাথরে। যতোবারই পালাতে চেয়েছে সে, ততোবারই পৌছে গেছে গাঢ় থেকে গাঢ় রক্তপাতে।

শীতের রুক্ষ উঠোনে এসেও যেমন মরে না সব নদী, তেমনি পৃথিবীর সব প্রেমিক প্রেমিকা হারিয়ে গেলেও মরেনা প্রেম। বৈরাগী নদী হয়ে চোরাস্রোতের টানে বয়ে চলে সংগোপনে। নি:সঙ্গতার কাছে এরকম ফিরে আসার নামই ইতিহাস। আমি সেই ইতিহাসের কাছে বারবার ফিরে আসি।

ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ

চাঁদের সাথে

কামাল বারি

চাঁদ এসেছে বেড়াতে আজ
হাত বাড়ালে দেখবে আজ
চাঁদের হাতে হাত পড়েছে
চাঁদের চোখে চোখ পড়েছে

চাঁদের সাথে রাত কেটেছে
চাঁদের প্রেমে রাত কেটেছে

অনেক দিনের প্রীতি নিয়ে
চাাঁদ এসেছে চাঁদ হেসেছে
সাতশ কোটি চাঁদ মিশেছে
চাঁদের সাথে পথ হেঁটেছে

দেখবে যদি চাঁদের সাজ
রাখতে হবে হাতের কাজ.

ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ

চন্দ্রাহত

শেখ নজরুল

চাঁদ, ওগো যুবতী চাঁদ
নিজেকে এতোটা দেখাতে নেই
তোমার আলোর আঘাতে মরে যাবো!

চাঁদ ওগো মায়াবী চাঁদ
প্রাণ এতোটা বিলিয়ে দিতে নেই
চাঁদ, আহা চাঁদ
ওগো প্রেয়সী চাঁদ

তোর জন্য এতো প্রেম, কোথায় পাবো?

ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ

কেউ জানো কী

শাহ মতিন টিপু

 

সুর্য ছিল আর অনেক আলো ছিল তার বুকে

সে আলোয় খেই হারায়ে বাড়ায়েছি যখন হাত

দেখলাম সামনে দাঁড়ায়ে আমার

জ্বলজ্যান্ত ‍এক চাঁদ।

 

এক নিমেষে হলাম আমি চন্দ্রমুখী

ভুলেই গেলাম দহন ভরা সূর্য আলো,

ঠিক তখনই আরেকটি চাঁদ

অামার পানে হাত বাড়ালো।

 

চন্দ্র নিয়ে চারিদিকে এতো যে হইচই

কেউ জানো কী, ‍এই চাঁদুদের আসল বাড়ি কই?

 

ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ

ভাল লাগে

আমিনু আরা রুনা

 

রংধনু ভাল লাগে
নীল আকাশ ভাল লাগে
ভাল লাগে মেঘে ঢাকা চাঁদ
তার চেয়ে ও ভাল লাগে
তারার আকাশেতে
জেগে থাকা রাত…..

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts