কবি আলোক সরকারের জীবনাবসান

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক দীর্ঘ রোগভোগের পর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন ওপার বাংলার বিশিষ্ট কবি আলোক সরকার। শুক্রবার, রাত ৯টা নাগাদ শহরের একট হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়৷ কবি স্ত্রী মিনু ও পুত্র অপ্রতিমকে নিয়ে থাকতেন হালতুর নন্দীবাগানের বাড়িতে। বেশ কিছুদিন ধরে কোলন ক্যান্সারে ভুগছিলেন।

১৯৩৩-এ জন্মগ্রহণ তিনি৷ ২০১৫ সালের পশ্চিমবঙ্গের আকাদেমি পুরস্কারে সম্মান জানানো হয় অভিযান পাবলিশার্স প্রকাশিত তাঁর ‘শোনো জবাফুল’ কাব্যগ্রন্থের জন্য। দে’জ পাবলিশিং প্রকাশিত তাঁর ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ রবীন্দ্র পুরস্কার পায় ২০০৬-এ। মাত্র এক বছরের সময়কালে (২০১০-২০১১) লেখা ‘শোনো জবাফুল’-এর কবিতাগুলির কোনও পৃথক নাম নেই। সংখ্যা দিয়ে তারা চিহ্নিত। ১ সংখ্যক কবিতাটি শুরু হচ্ছে এইভাবে,

‘শোনো জবাফুল/ তোমার মাটি সরস আছে তো/ তোমার গায়ে/ রোদ্দুরের কাপড় আছে তো/ তোমার জন্যে আমাদের খুব/ ভাবনা হয়’। কোনো সহৃদয় প্রতিবেশী যেন, এমনই সরল ভাষায় শুরু হয় অন্তরঙ্গ কথোপকথন। সরল, তবে আপাতসরল। কেননা, পরে তিনি যেসব উপমা, চিত্রকল্প ব্যবহার করেন, সেসবই যেতে চায় শূন্যের দিকে। তাঁর কবিতার যাত্রা অনুপস্থিতির দিকে। তাঁর বর্ণিত রঙ বিবর্ণতাকে নয়, প্রতিষ্ঠিত করতে চায় রঙের অনুপস্থিতিকে। এইদিক থেকেই শুধু নয়, সর্বদিক বিচারে বাংলা কাব্যজগতে তিনি ব্যতিক্রমী এক কবি।

কবি আলোক সরকারের প্রথম কবিতাগ্রন্থ ছিল ‘রৌদ্রময় অনুপস্থিত’ (১৯৫৯)। তারপর প্রায় তিরিশটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর কবিতারও বিবর্তন হয়েছে। কিন্তু মাপা শব্দে, অর্থ আর অর্থহীনতার সূক্ষ্ম সুতোয় একইসঙ্গে থেকেছে নির্ভার আর মায়াবী। ‘যা কিছু অর্জন/ সবই অভাবের প্রেক্ষিতে অর্জন।’ (‘আশ্রয়ের বহির্গৃহ’, ২০০৮)- এমন পঙক্তি তিনিই লেখেন, প্রকৃতিকে যিনি অনির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে দেখতে সক্ষম।

লিখেছেন ছোটগল্প, উপন্যাস। বর্ষীয়ান কবির আত্মজীবনী ‘জ্বালানী কাঠ, জ্বলো’ এবং ‘আমার কবিতাজীবন’ পাঠও এক অভিজ্ঞতা। অশীতিপর বয়সে তিনি যখন লেখেন ‘যৌবন’ নামের কবিতা, সেটি শুরু হয় এইভাবে, ‘এই যে কোথাও যাচ্ছি না/ তা তোমার দিকে যাওয়া।’ এই স্থিরতা আর চরম অস্থির পৃথিবীর কেন্দ্রে ঘুরপাক খায় আলোক সরকার-বর্ণিত ‘আমাদের দৌড় আর/ সেই হাসি’, যা ‘পথের দু-প্রান্তকেই/ অবান্তর করছে।’

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts