রোকন জামান []
সাহিত্যের ছোটোকাগজের ভূমিকা আজও অম্লান এবং উজ্জ্বল। বিগত দশকগুলোর মতো এ দশকেও ছোটোকাগজগুলো আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে আরও সমৃদ্ধ হয়ে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। অসংখ্য নবীণ লেখকরা তাদের লেখা ছাপানোর সিঁড়ি বা পাঠকের নিকট তাদের লেখা পৌঁছানোর একটা ক্যানভাস খুঁজে পাচ্ছেন।
সম্প্রতি সিলেট থেকে কবি খালেদ উদ-দীন সম্পাদিত বুনন তৃতীয় সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞাপন ছাড়াই কবি খালেদ উদ-দীন অত্যন্ত যত্ন সহকারে, সময় নিয়ে সাহিত্যমোদী পাঠককে যে সংখ্যাটি উপহার দিলেন তা নান্দনিকতায়, প্রশংসার দাবী রাখে।
শাদা কাগজে মুদ্রিত ঝকঝকে ছাপা এ সংখ্যায় ১০ টি গল্প, ৬টি প্রবন্ধ, ১টি ভ্রমণ গল্প, বিদেশি লেখককে নিয়ে দূরের বাতায়ন এবং অসংখ্য কবির কবিতা সূচিবদ্ধ করেছেন দক্ষ সম্পাদক খালেদ উদ-দীন।
তৌহিন হাসানের সুন্দর প্রচ্ছদে মোড়ানো ১৭৬ পৃষ্টার বুনন সংখ্যাটির মূল্য মাত্র ১০০ টাকা।
এ সংখ্যায় যারা সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়ে লিখেছেন, তাঁদের তালিকাটি নিম্নরূপ :
গল্প লিখেছেন–
নাসরীন জাহান, মালেকা পারভীন, এমদাদ রহমান, শিমুল মাহমুদ, স্বকৃত নোমান, শিপা সুলতানা, পাপড়ি রহমান, আনোয়ার কামাল, সারওয়ার চৌধুরী, মজিবুর রহমান।
একটি ভ্রমণ গল্প লিখেছেন- শাকুর মজিদ। দূরের বাতায়ন লিখেছেন- আবুল কাইয়ুম।
প্রবন্ধ লিখেছেন–
তৈমুর খান, পিয়াস মজিদ, আর্যনীল মুখোপাধ্যায়, মঈন আহমেদ, ইউসুফ ইকবাল, ফজলুররহমান বাবুল।
সদ্য প্রয়াত কবি ওয়ালী কিরণ শ্রদ্ধা ও স্মরণ এবং তাঁর পাঁচটি কবিতা মুদ্রিত হয়েছে।
এ সংখ্যায় গুচ্ছকবিতা লিখেছেন–
হাফিজ রশিদ খান, দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু, রাসেল রায়হান, জাকির জাফরান, মাজুল হাসান, আহমাদ সেলিম, মলয় রায়চৌধুরী, ফকির ইলিয়াস, জওয়াহের হোসেন, মাসুদার রহমান, জব্বার আল নাঈম, শামশাম তাজিল, মাসুদ খান, মোস্তাক আহমাদ দীন, ফজলুর রহমান বাবুল, মুহম্মদ ইমদাদ, শামস শামীম, আলফ্রেড আমেন, শিউল মনজুর, প্রদীপ মজুমদার, মালেকুল হক, ওয়ালি মাহমুদ, জিনাত জাহান খান, তমিজ উদ্দিন লোদী, শাহ ইয়াছিন বাহাদুর, পলিয়ার ওয়াহিদ, অধরা জ্যোতি, খালেদ উদ-দীন।
তা ছাড়া একটি করে কবিতা লিখেছেন- মুজিম ইরম, জফির সেতু, আবিদ ফায়সাল, শামীম হোসেন, রাজীব অর্জুনি, অশোক তাঁতী, সেজুল হোসেন, জসিম মারুফ, মিসবাহ উদ্দিন, মোকসেদুল ইসলাম, ইকবাল কাগজী, ইসরাত ঝুম।
সব গল্প কবিতা প্রবন্ধ হয়তো সবার সমান মনোযোগ আকর্ষণ করতে নাও পারে তবে ভালো লাগার মতো বেশ কিছু লেখা বুননে আছে, যা পাঠককে দোলায়িত করবে, ক্ষণিক ভাবিত করবে বা আনন্দিত করবে বলে আমি মনে করি।
যেমন- শাকুর মজিদ এর পোখরা ও তার আকাশচারণ ভ্রমণগল্পটি পড়তে পড়তে যে কোন পাঠককে রোমাঞ্চিত করবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাঁর ভ্রমণ বর্ণনার মধ্যে এমন মোহনীয় গাথুঁনি রয়েছে যে, পাঠক পড়তে পড়তে নিজেই লেখকের ভ্রমণসঙ্গী হয়ে উঠবেন এবং বলবেন বাহ্ চমৎকার একটা লেখা পড়লাম।
বুননে ২৯জন কবির গুচ্ছ কবিতা রয়েছে এবং ১২জন কবির একটি করে কবিতা রয়েছে। অসংখ্য কবিতা সুখপাঠ্য তবে মুজিব ইরমের মুদ্রিত একটি মাত্র কবিতা আমাদেরকে চমকে দেয়। তাঁর কবিতার মধ্যদিয়ে উঠে এসেছে আমাদের কৈশোর জীবনের ফ্রেমে বাঁধানো নান্দনিক চিত্র। এ কবিতাটি সকলকেই বোধ করি নাড়া দেবে। তা ছাড়া কয়েকজন তরুণ কবির কবিতায় সমসাময়িক বৃত্ত ভাঙার চেষ্টা রয়েছে। তাদের কবিতায় সম্ভাবনার আলো উঁকি দিচ্ছে। একদিন পাঠকরাই তাদের কবিতা পছন্দের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করবেন।
বুননের গল্পগুলোও আমাদেরকে নাড়া দেয়। তৈমুর খান, পিয়াস মজিদ, আর্যনীল মুখোপাধ্যায় এর প্রবন্ধ থেকে অনেক কিছু জানার আছে। আবুল কাইয়ুম দূরের বাতায়ন বিভাগে ফিকেনীল ঘাসফুল; সের্গেই ইয়েসেনিন ও তাঁর কবিতা শিরোনামের প্রবন্ধটিও পড়ার মতো।
এক কথায় বুনন এর তৃতীয় সংখ্যায় পাঠককে আনন্দ দেবার মতো যথেষ্ট উপকরণ রয়েছে। এমন একটি সংখ্যা আমাদেরকে উপহার দেবার জন্যে কবি খালেদ উদ-দীনকে শুভেচ্ছা জানাই। বলা যায়, সাহিত্যের ক্যানভাসে ছোটোকাগজ বুনন উজ্জ্বল আলো ছড়াতে সক্ষম হবে।
রোকন জামান অধ্যাপক নয়া সড়ক, সিলেট