রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ

বিডিমেট্রোনিউজ ২০ ডিসেম্বর। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস আজ । বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বাংলাদেশের একটি আধাসামরিক সংস্থা। এর কাজ হল মূলত বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা করা। এর প্রধান কার্যালয় ঢাকার পিলখানায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে এর নাম ছিল ইপিআর অর্থাৎ ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল্স। ১৯৭২ সালে এর নাম হয় ‘বাংলাদেশ রাইফেলস’ (বিডিআর)।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানা সদর দপ্তরে বিডিআরের কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল জওয়ান সংঘটিত করেন ইতিহাসের বিভীষিকাময় নারকীয় হত্যাকাণ্ড। কিন্তু বিডিআর আইনে দোষীদের নগণ্য শাস্তির বিধান থাকায় আইন পরিবর্তনেরও প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

১৭৯৫ সালের ২৯ জুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের গোড়াপত্তন হয়েছিল। তখন বাহিনীর নাম ছিল রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন। সৈন্যসংখ্যা ছিল ৪৪৮। ছয় পাউন্ড গোলা, চারটি কামান এবং দুটি অনিয়মিত অশ্বারোহী দল নিয়ে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়। সীমান্ত এলাকায় সমস্যা বৃদ্ধির কারণে এ বাহিনী পার্বত্য অঞ্চলের অভিযানে অংশ নেয়। ১৮৬০ সালে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়নের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ফ্রন্টিয়ার গার্ডস।

১৮৭৯ সালে স্পেশাল কোম্পানি নামে এই বাহিনীর তৎকালীন সদস্যরা পিলখানায় প্রথম ঘাঁটি স্থাপন করেন। ১৮৯১ সালে ফ্রন্টিয়ার গার্ডসের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশ। ১৯২০ সালে বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশ বাহিনীকে পুনর্গঠন করে নাম রাখা হয় ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার্স রাইফেলস।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারত বিভাগের পর ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার্স রাইফেলসের নাম পরিবর্তন করে নাম রাখা হয় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস। এর সংক্ষিপ্ত নামকরণ করা হয় ইপিআর।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ ইপিআর বাহিনীকে পুনর্গঠন করে এর নাম রাখা হয় বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)। ১৯৮০ সালের ৩ মার্চ থেকে এ বাহিনীর স্বীকৃতি হিসেবে সরকার একে জাতীয় পতাকা প্রদান করে। ১৯৯৭ সালের ১৬ মার্চ বিডিআর বাহিনীর জন্য তিন রঙের সংমিশ্রণে ছাপা কাপড়ের ইউনিফর্মের প্রবর্তন করা হয়। ২০০৯ সালে পিলখানা সদর দপ্তরে ঘটে যাওয়া ইতিহাসের বিভীষিকাময় নারকীয় হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বিডিআরের ২১৫ বছরের গৌরবময় অধ্যায়ের ছন্দপতন ঘটে। এ বাহিনীর নাম ও পোশাক পরিবর্তন করে নতুন আইনও প্রবর্তন করা হয়। ২৩ জানুয়ারি ২০১১ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিবির পতাকা উত্তোলন করেন।

বিজিবি দিবস উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৭টায় পিলখানায় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, এনডিসি, পিএসসি অত্র বাহিনীর রেজিমেন্টাল পতাকা উত্তোলন করেন এবং সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ‘সীমান্ত গৌরব’-এ পু®স্তবক অর্পণ করে এ বাহিনীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বিজিবি দিবসের কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ৯টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ২০১৬ সালে বিভিন্ন কর্মকান্ডে বীরত্বপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিজিবি সদস্যদের মধ্য থেকে ১০ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক (বিজিবিএম), ২০ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক (পিবিজিএম), ১০ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক-সেবা (বিজিবিএমএস) এবং ২০জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক-সেবা (পিবিজিএমএস) প্রদান করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষে দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে পিলখানাস্থ বীর উত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে আয়োজিত দরবারে বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

বিজিবি দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে দেশপ্রেম, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাগত দক্ষতার সমন্বয়ে দেশের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে বিজিবি’র সকল সদস্যকে নেতৃত্বের প্রতি অবিচল থেকে সর্বোচ্চ নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের আহবান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি বিজিবির সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের রয়েছে দু’শ’ বছরের বর্ণাঢ্য ঐতিহ্য। সময় ও যুগের প্রয়োজনে এ বাহিনীর নাম ও ইউনিফর্ম পরিবর্তিত হয়ে আজ বিজিবি তথা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ নামে অভিষিক্ত হয়েছে। স্বাধীনতা পদকে ভূষিত এই বাহিনী সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে।

তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রাক্কালে ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ কালরাতে পাক হানাদার বাহিনী বিজিবি সদর দপ্তর পিলখানা আক্রমণ করলে এ বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ১২ হাজার বাঙালি ইপিআর সদস্য সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন, জীবন উৎসর্গ করেন ৮১৭ জন।

বিজিবি দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা দেশের সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায়ও সহায়তা প্রদান করছে।

তিনি বলেন, এছাড়াও এ বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন, সন্ত্রাস দমন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানসহ দেশগঠনমূলক কাজে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছেন।

আওয়ামী লীগ সরকার ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’কে একটি আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০’ প্রণয়ন ও কার্যকর করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে বিজিবি’র নতুন সাংগঠনিক কাঠামো ও জনবলের প্রাধিকার বৃদ্ধি, স্তর বিকেন্দ্রীকরণসহ পদবী কাঠামো পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সীমান্ত ব্যাংক’ নামে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক স্থাপন এবং নিজস্ব এয়ার উইং সৃজন বিজিবি’র বিস্তৃত কাজের পরিধিকে আরো সুপ্রশস্ত করেছে। এ বাহিনীকে সর্বাধুনিক সীমান্ত রক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

 

Print Friendly

Related Posts