বিডি মেট্রোনিউজ ডেস্ক ।। ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুমন ইসলামের কাছ থেকে একটি লেখা চেয়ে নিয়েও ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ম্যাগাজিনে ছাপেননি সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। সেই লেখাটাই তিনি সদস্যদের জানানর জন্য ফেসবুক এবং ইমেইলে দিয়েছেন। এ সম্পর্কে তার পূর্ণ বক্তব্যধর্মী লেখাটি এখানে তুলে দেওয়া হলো-
ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের (ডিএসইসি) ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত ম্যাগাজিনের জন্য সভাপতি নাছিমা আক্তার সোমা, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আরিফা আমাকে একটা লেখা দেয়ার অনুরোধ করেন। আমি তাতে সাড়া দিয়ে একটা লেখা দেই। এক পর্যায়ে প্রেস থেকে ফোন দেন সাধারণ সম্পাদক আজাদ। তিনি বলেন, লেখাটা ‘মোডিফাই’ করতে হবে। কেন জানতে চাইলে বলেন, দুর্নীতি অনিয়ম নিয়ে লেখা ছাপা হলে সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। আমি ব্যাখ্যা দিলাম। ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় লেখাটা ছাপা হলোনা। এখন জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন, সংগঠনের ভাবমূর্তি জরুরি, নাকি অনিয়ম দুর্ণীতি রোধ করে সংগঠনকে প্রথমে শুদ্ধ করা জরুরি?
বিবেচনার জন্য লেখাটা সংযুক্ত করা হলো-
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জরুরি
ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল ডিএসইসি, আমরা যারা সাব-এডিটর, তাদের প্রিয় সংগঠন। ২০০০ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অনেক প্রতিক‚লতার মধ্য দিয়ে এই সংগঠনকে এগিয়ে যেতে হয়েছে। সেই এগিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে আমিও এক ক্ষুদ্র সৈনিক, এটা ভেবে ভালো লাগছে।
শুরুতে যে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়, আমি তাতে যুগ্ম আহবায়কদের একজন ছিলাম। পরের ১০ বছর সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষসহ কার্যকরী পরিষদের বিভিন্ন পদে থেকে সাংগঠনিক কাজ চালানোর অভিজ্ঞতা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু অভিজ্ঞতা আনন্দের, কিছু বেদনার। এটাই হয়তো নিয়ম। সবার মতো আমিও বেদনার অভিজ্ঞতা ভুলে যেতে চাই, মনে রাখতে চাই শুধু সুখস্মৃতিগুলো।
একেবারে প্রথমদিকে আমরা দলবদ্ধ হয়ে যখন সদস্য সংগ্রহে বিভিন্ন সংবাদপত্র, বেতার, টেলিভিশন আর বার্তা সংস্থাগুলোতে গিয়েছি, তখন শুনতে হয়েছে নানা তিক্ত কথাবার্তা। অনেকেই বলেছেন, ‘নতুন ধান্দা’, কেউ কেউ বলেছেন আরো খারাপ কথা। সেগুলো মনে করতে চাই না। তারপরও থেমে থাকেনি আমাদের কাজ। এগিয়ে গেছি। আজ অনেকেই এই সংগঠনের সদস্য হতে চান। বিভিন্নজনের মাধ্যমে ‘তদবির’ও করেন! নির্বাচনের সময় সৃষ্টি হয় ব্যাপক চাঞ্চল্য! সংগঠনের নেতৃত্বে আসতে ‘অন্য রকম’ লড়াই দেখা যায় সদস্যদের মধ্যে। এটা ভালো লাগে।
সূচনায় লক্ষ্য ছিল সাব-এডিটরদের একটি ছাতার নিচে একত্রিত করা এবং তাদের পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে কাজ করা। এ জন্য আয়োজন করা হয় কম্পিউটার এবং ইংরেজি ভাষা শিক্ষা বিষয়ক নানা প্রশিক্ষণের। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি (ডিআইআইটি) এবং ঢাকা ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব। সদস্যদের একটা বড় অংশই এই দুই প্রতিষ্ঠান আয়োজিত বিভিন্ন কোর্সে অংশ নিয়ে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে সক্ষম হন। প্রশিক্ষণের এই ধারাবাহিকতা সাম্প্রতিককালে বিঘ্নিত হয়েছে। যতো দ্রুত সম্ভব এসব প্রশিক্ষণের আয়োজন আরো বাড়ানো জরুরি। বর্তমান নেতৃত্ব এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই সজাগ। ইতোমধ্যেই তারা বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে ‘ওরিয়েন্টেশন’ প্রোগ্রাম করেছে। অন্তত ৫০০ সাব-এডিটর এই প্রোগ্রামে অংশ নিতে পারবেন জেনে ভালো লাগছে। পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে যত ধরনের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন তা করা জরুরি।
মনে রাখা দরকার, পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। সংগঠনের প্রধান লক্ষ্য যেহেতু পেশাগত দক্ষতা বাড়ানো, তাই সারা বছর ধরেই নানা ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কার্যকরী পরিষদের মেয়াদ এক বছর হওয়ায় অনেক কমিটিই দায়িত্ব বুঝে নিয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন বিষয়ে কথা চালাচালি করতে গিয়েই মেয়াদ শেষ করে ফেলে। ফলে অনেক সময় দেখা যায়, সারা বছরে কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাই তাদের পক্ষে করা সম্ভব হয় না। কিন্তু আমরা দেখেছি, নেতৃত্ব যদি দক্ষ হয়, তাহলে অবশ্যই এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। তারা এক মেয়াদে নানা প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে মেয়াদ শেষ করতে পারে। ‘এক বছর খুব বেশি সময় নয়’- এই অজুহাত তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না। এ থেকে এটাই পষ্ট যে, দক্ষ নেতৃত্বই পারে অল্প সময়ে সংগঠনকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যেতে। যদিও এমন নেতৃত্ব পাওয়া সহজ কথা নয়!
সাংগঠনিক ততপরতা চালাতে গিয়ে দেখেছি, এমন অনেক ‘নেতা’ আছেন যারা নিজে কিছু করবেন না বা করতে পারবেন না, কিন্তু অন্য কেউ কিছু করলে তাকে কথার বাণে জর্জরিত করতে কুণ্ঠিত হন না। যেকোনো সংগঠনে এদের সংখ্যাই আসলে বেশি। এদের কারণেই অনেক দক্ষ কর্মী সংগঠনকে এগিয়ে নিতে পারেন না। এটা যে কোনো সংগঠনের জন্যই বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা বটে। এ অবস্থা উত্তোরণে প্রথমেই ওই সব ‘নেতাকে’ চিহ্নিত করতে হবে। তারপর তাদেরকে ‘উজিরে খামাখা’ বানিয়ে ফেলতে হবে। এ জন্য দুয়েকটা সাংগঠনিক দায়িত্ব ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেই হবে। সারা বছর সেটা নিয়েই কাটিয়ে দেবেন ওই মহান নেতারা! ফলাফল হবে শূন্য। তাই অন্যের কাজে বিঘ্ন ঘটাতে সফল হবে না। তারপরও হয়তো বলে বসবেন, এর কারণে পারলাম না, ওর কারণে পারলাম না, ইত্যাদি ইত্যাদি।
সাধারণত নির্বাচনের সময় দেখা যায়, এমন অনেক সদস্য আছেন যারা বড় বড় পদে দাঁড়িয়ে যান। অথচ সংগঠনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য কিছুই জানেন না। গঠনতন্ত্র পর্যন্ত পড়ে দেখেননি। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাদেরও চেনেন না। সাংগঠনিক নানা কর্মসূচিতে তাদের দেখাও মেলে না। কখনো কখনো এদের মধ্য থেকে কেউ কেউ নির্বাচিত হন। তখন যা হবার তাই! সংগঠন সামনে নয়, যেতে থাকে পেছনের দিকে। সদস্যদের উচিত হবে নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিতে লক্ষ্য রাখা।
যে কোনো সংগঠনের জন্যই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা খুবই জরুরি। বিশেষ করে আর্থিক হিসাবের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু গত কয়েক বছর এই জায়গাটায় দুর্বলতা দৃশ্যমান হয়েছে। এক খাতের অর্থ ব্যয় হয়েছে অন্য খাতে। তাই হিসাব মেলেনি। বেশিরভাগ লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো ভাউচার রাখা হয়না। একজন সাবেক কোষাধ্যক্ষ নিশ্চিত করেছেন, অডিট ফার্ম বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেছে। আর এ কারণেই হয়তো গত ৩/৪ বছরে কোনো চূড়ান্ত অডিট প্রতিবেদন সংগঠনের হাতে নেই। ‘অডিট ফার্মে হিসাব জমা দেয়া হয়েছে’- এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই কোষাধ্যক্ষরা তাদের বার্ষিক আয়-ব্যয় প্রতিবেদন বার্ষিক সাধারণ সভা এজিএমে উপস্থাপন করছেন। এটা কতটা যুক্তিসঙ্গত তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। তাছাড়া বার্ষিক হিসাব বিবরণীতেও থাকছে নানা অসঙ্গতি। অনেক সময় ব্যয় দেখানো হচ্ছে, কিন্তু কোন খাত থেকে ব্যয় হলো, তা দেখানো হচ্ছে না। অর্থাৎ সাংগঠনিক তহবিল থেকে, নাকি ঋণ করে ব্যয় হচ্ছে তা বিবরণীতে থাকছে না। ব্যাংক হিসাব ও নগদ তহবিলের নামে যা দেখানো হচ্ছে তার সঙ্গে বাস্তবতার মিল থাকছে না।
কল্যাণ তহবিলের টাকা আলাদা ব্যাংক একাউন্টে রাখার কথা থাকলেও গত কয়েক বছরে তার কোনো হিসাব জানতে চেয়েও পাওয়া যায়নি। কল্যাণ তহবিলে ২০০৮ সালে ৭২৮০, ২০০৯ সালে ১৪৬০০, ২০১০ সালে ২১৬৪০ এবং ২০১১ সালে ২১৬৪০ টাকা অর্থাৎ ৬৮৯৫০ টাকা সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া যায়। ২০১০ মেয়াদে একজন প্রতিমন্ত্রী কল্যাণ তহবিলে ৫০ হাজার টাকা দেন। সব মিলিয়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৫০ টাকা কল্যাণ তহবিলের ব্যাংক একাউন্টে (১৭৯৬১০১১০৭৫৪৭, পূবালী ব্যাংক, আর কে মিশন রোড শাখা) জমা হয়। এরপর? প্রতি বছরই আমরা কল্যাণ তহবিলের নামে যে ২০ টাকা করে দেই, সেই টাকা কোথায়?
গত কয়েক মেয়াদে যে অনিয়ম হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে বর্তমান নেতৃত্ব একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটির রিপোর্ট কি আলোর মুখ দেখবে? কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক অনিয়ম মেনে নেয়ার জন্য এই সংগঠন নয়। ফলে যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের মুখোশ অবশ্যই উন্মোচন করতে হবে। নইলে সংগঠনের উদ্দেশ সফল হবে না।
এতো কিছুর পরও অন্যদের মতো আমিও আশাবাদী হতে চাই। চাই সংগঠনে ভালো নেতৃত্ব আসুক এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাক সাংগঠনিক কর্মততপরতা। পনের বছর অনেক সময়। আরো বহু বছর ধরে কর্মততপর থাকুক আমাদের এই প্রিয় সংগঠন সেই কামনা করছি।
-সুমন ইসলাম
সাবেক সাধারণ সম্পাদক
ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল