এএইচএম নোমান
বিশ্ব মা দিবসের ইতিহাস শতবর্ষের পুরনো। আনা জারভিস নামের যুক্তরাষ্ট্রে এক নারী মায়েদের অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছিলেন।
১৯০৫ সালে আনা জারভিস মারা গেলে তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জারভিস মায়ের কাজকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সচেষ্ট হন। ওই বছর তিনি তার সান ডে স্কুলে প্রথম এ দিনটি মাতৃ-দিবস হিসেবে পালন করেন। ১৯০৭ সালের এক রোববার আনা মারিয়া স্কুলের বক্তব্যে মায়ের জন্য একটি দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এভাবেই শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা।
বাংলাদেশের মা-দিবস কিভাবে শুরু হলো তা ২০০৫ সালের ১০ মে দৈনিক ইত্তেফাক এর সংবাদ অংশটুকু পড়লেই মোটামুটি জানা যাবে। যা ছিল :
৮ মে ছিল বিশ্ব মা দিবস। শ্রমক্লান্ত এক মা-রাজধানীর ফুটপাতের দেয়ালে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেও বাচ্চাটাকে ঠিকই দু’হাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে (ছবি) -ইত্তেফাক। শিরোনাম ছিল : মা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, দরিদ্র মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানের আহবান।
‘‘বিশ্ব মা দিবস উদযাপন উপলক্ষে ডরপ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় ডরপ সিইও এএইচএম নোমান বলেন, দারিদ্র্য নিরসনে অতি দরিদ্র মায়েদেরকে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করতে হবে। গর্ভাবস্থায় সাধারণত সকল মা অপুষ্টি, চিকিৎসা , টিকা, বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত খাদ্য থেকে বঞ্চিত হয়। এর ফলে মৃত বাচ্চা অথবা পুষ্টিহীন শিশুর জন্ম দিয়ে নিজেরা অসুস্থ অবস্থায় বেঁচে থাকে বা মারা যায়। মা দিবস উপলক্ষে মে-জুন ২০০৫ সালে যেসব মা গর্ভধারণ করবেন তাদের মধ্য হতে ডরপ-এর কর্ম এলাকায় ১০০ জন অতিদরিদ্র মাকে চিহ্নিত করে মাসিক ১০০/- টাকা মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়। তিনি আগামী বাজেটে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে অন্তত ১০ জন অতি দরিদ্র মায়ের জন্য ‘মাতৃত্বকালীন’ ভাতা প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান’’।
এর কিছু দিন পূর্বে দিন তারিখ এ মুহূর্তে হাতের কাছে নাই VHSS এর আয়োজনে পিআরএসপি বিষয়ক বাজেট সংশ্লিষ্ট এক সেমিনারে মাতৃত্বকালীন- ভাতা ধারণা-বক্তব্য দেই। এ বিষয়ক প্রথম ব্যাপারটা ছিল এরকম যে, ‘‘মা’দের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাসের স্থলে ৬ (ছয়) মাস স্ববেতনে এবং একই সঙ্গে বাবার জন্যও অন্তত ১৫ (পনের) দিন ছুটি রাখার দাবী আসে। এছাড়া নার্স, কর্মজীবি মা-শিক্ষক, যারা বলতে গেলে শিক্ষিত কর্মসংস্থানরত মা’দের কথাই সেমিনারে আসল। তখন আমি বললাম মা-কি শুধু শহরে যারা থাকে , শিক্ষিত, চাকুরীজীবি ? যাদের দরখাস্ত করার জায়গা আছে তারাই, নাকি যারা নদী ভাঙ্গা, বেড়ীবাঁধে থাকে ও খরাইত, বস্তিতে, শ্রমিক, ক্ষেত মজুর, তারা কি মা নয় ? তাদের দরখাস্ত করার জায়গাও নাই বরং পেটে বাচ্চা আসলে বাপের বাড়ী পাঠিয়ে দেয়, স্বামীরা খবর রাখেনা ? আরো কত কি ? তাই আগামী বাজেটে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়ষ্ক ভাতা, ডিজএবল ভাতা, বিধবা ভাতার পাশাপাশি গরীব মা’দের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতাও চালু করা হোক।
প্রতি ইউনিয়নে অন্তত: ১০ (দশ) জন মা অন্তত: ১ (এক) শত টাকা (হারে) বুকের দুধ খাওয়ার পিরিয়ডসহ ২৪ (চব্বিশ) মাস পর্যন্ত ভাতা প্রদান করা হোক। শর্ত হবে, এক শিশুর বেশী পাবেনা, ২ শিশুর উর্ধে নিতে পারবেনা, ২০ (বিশ) বছরের আগে বিয়ে হলে পাবেনা, মাসে ১৫ (পনের) শ টাকা উপরে আয় হলে পাবেনা, ২০ (বিশ) হাজার টাকার উপর সাকুল্যে সম্পদ থাকলে পাবেনা। জন্মনিবন্ধন থাকতে হবে, বিবাহ নিবন্ধন থাকতে হবে। বুকের দুধ খাওয়াতে হবে, পুষ্টি খাদ্য খেতে ও খাওয়াতে হবে। দৈনিক প্রয়োজনীয় বিশ্রাম ও খাটুনি কাজ করতে বা করাতে পারবেনা যেমন- ঢেঁকিতে পাড় দেয়া, কলসীতে পানি আনা ইত্যাদি”।
এভাবে বাংলাদেশী কায়দায় দেশজ, স্বয়ংক্রীয় নিজস্ব অর্থায়নে সরকারী বেসরকারী গরীব অংশীদারীত্বের চলমান ফসল আজ বাংলাদেশের মা-দিবসের এক যুগ পূর্তি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমন আমরা সৃষ্টি করেছি লড়েছি, তেমনি বৈষম্যহীন অর্থনৈতিক মুক্তির বাংলাদেশের ইতিহাসও আমরাই সৃষ্টি করব।
ইতিহাস রচনায় এক যুগ কাবারির খতিয়ান, চমৎকার অগ্রগতি।
১। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছর বাজেটে সরকার ৫ লক্ষ গরীব মা’কে মাতৃত্বকালীন ভাতা বরাদ্দ দেয়, গর্ভ সময় থেকে শুরু করে বুকের দুধ খাওয়ান পর্যন্ত ২৪ মাস ব্যাপি এই ভাতা প্রতি মাকে ৫০০/- (পাঁচ) শত টাকা হারে প্রদান করা হয়। প্রতি ইউনিয়নে গড়ে কম বেশী ১ (এক) শত মা এই ভাতা পেয়ে থাকে।
ভাতা প্রাপ্তির ৭ (সাত) টি শর্ত আছে যা হলো:
১. প্রথম বা দ্বিতীয় গর্ভধারণকাল (যে কোন একবার), ২. বয়স কমপক্ষে ২০ বছর বা তার উর্ধ্বে। ৩. মোট মাসিক আয় ১৫০০/(পনের শত) টাকার নি¤েœ।, ৪. দরিদ্র পরিবারের প্রধান রোজগারী মহিলা।, ৫. দরিদ্র প্রতিবন্ধী মা।, ৬. কেবল বসতবাড়ী রয়েছে বা অন্যের জায়গায় বাস করে। ৭. নিজের বা পরিবারের কোন কৃষি জমি, মৎস্য আবাদের জন্য পুকুর বা কোন পশুসম্পদ নেই। প্রসঙ্গতঃ ২০০৫ সালে বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠান মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান কার্যক্রম ছোট্ট আকারে শুরু করে। ২০০৭-০৮ সালের বাজেটে সরকারীভাবে চালু হয়। ৩ (তিন) হাজার ইউনিয়নে ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) হাজার মাকে ৩ (তিন)শত টাকা হারে নিরাপত্তাজাল বেষ্টনীর আওতায় এই ভাতার হার সর্বোচ্চ ছিল।
২। প্রশ্ন দাঁড়ায় ২ বছরের মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রাপ্তির পর এই মা-বাবা, শিশুর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, কর্মসংস্থান সহ মৌলিক চাহিদা/অধিকার প্রাপ্তিসহ ভবিষ্যৎ জীবন যাপনের উত্তর কি ? এ প্রশ্নের উত্তর এর নামই হলো ‘মাতৃত্বকালীন ভাতা কেন্দ্রীক ‘স্বপ্ন’ প্যাকেজ’। ‘স্বপ্ন’ মূলে ইংরেজী বাক্য যা Social Assistance Program for Non-Asseters- SAPNA. স্বপ্ন প্যাকেজ মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদেয় ভাতা প্রাপ্ত মা’দেরকে নিয়েই শুরু হয়। ২০০৯- ২০১২ স্পেন’র মহামান্য রানী সোফিয়ার পৃষ্টপোষকতায় স্পেন সরকারের Spanish Agency of International Cooperation for Development (AECID) তহবিলে ২ ধাপে প্রায় ১ (এক) হাজার মা’র মাধ্যমে প্রায় ৭ (সাত) কোটি টাকা অর্থায়নে এই স্বপ্ন প্যাকেজ কর্মসূচি (ডরপ) ৫টি উপজেলায় চালু করে।
৩। এর অভূতপূর্ব পূর্বাপর ও দৃশ্যত: সফলতার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রায় ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদনে দেশের ১০ (দশ) টি নেতৃত্ব স্থানীয় উপজেলায় ৭ (সাত) শত মা’কে নিয়ে স্বপ্ন প্যাকেজ যাত্রা শুরু হয়।
স্বপ্ন প্যাকেজ হলোঃ
১. স্বাস্থ্য-পুষ্টি ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ কার্ড : ভাতাপ্রাপ্ত মা-শিশু ও বাবাকে (উর্দ্ধে ৪ জন) কেন্দ্র করে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সচেতনতা প্রদান করা যাতে ঔষধ, চিকিৎসা, পরিকল্পিত পরিবার ইত্যাদি বিষয়ে ২০ বছর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় নিবিড় তত্ত্বাবধান ও সহযোগীতা পায়।
২. শিক্ষা সংস্কৃতি ও বিনোদন কার্ড : সকল শিক্ষক শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তি করনের লক্ষ্যে নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষাকার্ড আওতায় অন্তত: অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত জীবনভিত্তিক আনুষ্ঠানিক/ব্যবহারিক শিক্ষা প্রদান করা। এরপর যার যার স্বাধীন সিদ্ধান্তে শিক্ষা-দীক্ষা সমাপ্তে চাকুরী বা শ্রমবাজারে যাবে। এ শিক্ষাকার্ড বাধ্যতামূলক প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাঠামোর সাথে যুক্ত করা।
ইতিমধ্যে, গত ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ইং তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষায়ক মন্ত্রনালয়ের বাজেট শাখার সহকারী সচিব দিলিপ কুমার দেবনাথ এর স্বাক্ষরে ‘দারিদ্র বিমোচনে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রাপ্ত মা’দের স্বপ্ন প্যাকেজ’ শীষক কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগী মা’দের মধ্যে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্ড এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতি/বিনোদন কার্ড বিতরণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করা হয়। যা ইতিপূর্বে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়িত হয়েছে।
৩. বসতঘর ও পয়:নিষ্কাশন : কম-বেশী ৩০ হাজার টাকা মূল্যে স্বাস্থ্য সম্মত একটি লেট্রিনসহ গৃহনির্মাণ/উপকরণ হস্তান্তর যাতে একটি আবাসন নিশ্চিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক গৃহায়ন তহবিল এ অর্থ যোগান দিতে পারে।
৪. কর্মসংস্থানে জীবিকায়ন উপকরণ : ভাতাপ্রাপ্ত মাকে কেন্দ্র করে মা-বাবা ও শিশুর দারিদ্র দূরিকরণে কমবেশী ৩০ হাজার টাকার আয় রোজগারমূলক কাজের জন্য জীবিকায়ন উপকরণ/সরঞ্জাম হস্তান্তর করা।
৫. সঞ্চয় পরিবেশ ও প্রয়োজনে উন্নয়ন ঋণ : আত্ম-কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্য প্রয়োজনে অধিক উন্নয়নে ঋণ প্রদান করা। স্থানীয় বাস্তবায়নকারী এনজিও/ব্যাংক ব্যবস্থাপনা/পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন- (PKSF) যুক্ত হবে।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা/ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কর্মী, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ সভায় যাচাই বাছাই’র মাধ্যমে স্বপ্ন-মা তালিকা বরাদ্দ সংখ্যা অনুসারে অনুমোদিত হয়। উপজেলা মহিলা কর্মকর্তার সাচিবিক দায়িত্বে স্বপ্ন প্যাকেজ /সম্পদ অনুমোদিত কমিটির মাধ্যমে, সংগ্রহ ও আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়। পাবলিক (স্থানীয় সরকারর) পুয়র (মা) প্রাইভেট (এনজিও) পার্টনারশীপ (পিপিপিপি) এর মাধ্যমে ছাপান ও লিখিত চুক্তি উপজেলা, ইউনিয়ন, এনজিও ও মা সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সম্মতি ও দস্তখতের মাধ্যমে হস্তান্তর চুক্তি সম্পাদন হয় ও রক্ষণ হয়।
৪। টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ইউনিয়ন-উপজেলার সকল ‘স্বপ্ন-মা’ মিলে মা-সংসদ গঠন করে তার মাধ্যমে নিজেদের কর্মসূচির সার্বিক কর্মকান্ড, স্থানীয় সরকার তথা কেন্দ্রীয় সরকার জনপ্রতিনিধির সাথে সংযোগ অগ্রগতি সমস্যা সমাধান করা হয়। মাতৃত্বকালীন ভাতা কর্মসূচি মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিআইডিএস বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (কুমিল্লা) আঞ্চলিক পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বগুড়া) কর্তৃক মাঠ পর্যায়ের মূল্যায়ন পরীবীক্ষণ হয় ও প্রশংসিত হয়।
স্বপ্ন প্যাকেজ কর্মসূচি-পিপিআরসি (পাওয়ার এন্ড পার্টিসিপেটরী রিসার্স সেন্টার), কানাডিয়ান মি. জেথা কর্তৃক আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন হয়। সফল ও দৃষ্টান্তকারী পথ ও পাথেয়, এটি দেশজ, স্বয়ংক্রীয়, স্বঅর্থায়নে দারিদ্র বিমোচন যুগপযোগী ও প্রমাণিত পন্থা। সরকারী নীতিমালায় সরকার কর্তৃক পরিচালিত।
৫। এমডিজিতে আমরা (বাংলাদেশ) যেমন সফলকাম হয়েছি, তেমনি এসডিজি বাস্তবায়নেও আমরা সঠিক ও দৃঢ় পথ পেয়ে গেছি। ‘এসডিজির ১৭ (সতের) এজেন্ডার ১ (এক) নং এজেন্ডা সকল ক্ষেত্র থেকে দারিদ্র নিরসন কল্পে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রাপ্ত গরীব মা’কে আমরা শেকড় ধরেছি। উন্নয়ন গতি প্রকৃতি ধারাবাহিকতা ও টেকসইতা ঠিক রাখার জন্য ‘বটম লাইন’ দরকার। সে বটম লাইন হলো ‘মা’। ‘মা’ সৃষ্টি কর্তা প্রদত্ত অমূল্য পবিত্র দান। তাই এসডিজি’র ১৭ এজেন্ডা মা’কে কেন্দ্র করে ‘একের ভেতর সতের’ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা মৌলিকভাবে ও মোটা দাগে সম্ভব। এক কোটি মা’কে টার্গেট করে ২০ বছর এক প্রজন্ম দীর্ঘ মেয়াদি কার্যক্রম রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলেই কেউ স্বাস্থ্য, পুষ্টি, স্যানিটেশান হীন থাকবেনা, শিক্ষাহীন থাকবেনা, ঘরহীন থাকবেনা, কর্মসংস্থানহীন থাকবেনা। ফলে বৈষম্য ও ক্ষমতাহীনতায় ভোগবেনা, দু’সন্তানের অধিক হবেনা, বাল্যবিবাহ হবেনা, জন্মনিবন্ধনহীন থাকবেনা, সমন্বয়হীনতা থাকবেনা, তৃণমূল পর্যায়ে মাটি, মানুষ ও মালিকানার (মা) দানা বাঁধবে। সঞ্চয়, গাছ লাগান পরিবেশ, জলবায়ূ সচেতন ও রক্ষন, প্রয়োজনে উন্নয়ন ঋণ সংযোগ প্রশিক্ষণ ইত্যাদি মিলিয়ে সামগ্রীকভাবে ‘স্বপ্ন’ মা একজন ধারক ও বাহক এবং উন্নয়ন ‘সমন্বয়কের’ কাজ করবেন। প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা ও রিসোর্স হস্তান্তর। যা বটম লাইন-পাটাতন, মৌলিক অধিকার পূরণ, সাম্যতা, ন্যয্যতা ও বৈষম্যহীন সমাজ, দেশ গঠনে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ। যে বিনিয়োগ শুধু দিবে, চাইবে না। তাই প্রয়োজন শুধু ‘এক মা এক লাখ টাকা’ বাজেট বরাদ্দ।
৬। গত ১৮/০৪/১৭ইং তারিখে মাননীয় অর্থ মন্ত্রীর এনজিও’র নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে এসডিজি বাস্তবায়ন স্বপক্ষে মাতৃত্বকালীন ভাতা বর্তমান প্রদেয় মাসে ৫ (পাঁচ) শ’টাকার স্থলে ১ (এক হাজার) টাকা করা এবং মা’র সংখ্যা ৫ (পাঁচ) লক্ষে স্থীর রাখা। কেননা তথ্য উপাত্ত ও বাস্তবায়ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২ (দুই) বছরে যে শর্তে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করা হয় সেই শর্তে ৫ (পাঁচ) লক্ষের অধিক সংখ্যক মা হলে তা অযৌক্তিক ও যথাস্থ হবেনা। পাশাপাশি চলমান স্বপ্ন প্যাকেজ ১০ (দশ) উপজেলাকে মডেল ধরে এক’শ উপজেলায় ১০ (দশ) হাজার মাকে টার্গেট করে মোট ১ (এক) শ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করার আবেদন প্রস্তাব করেছি।
৭। ‘পদ্মা সেতু’ নিজের টাকায় করার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সাহস, দৃঢ়তা, সততা ও নিজের পায়ে দাড়ানর যে উঁচু শীর, তা যেমন ‘অবকাঠামো উন্নয়ন’-খাতকে দেশ ও দুনিয়া কাঁপানো হিসাবে গৃহীত হয়েছে তেমনি এসডিজি বাস্তবায়নে দারিদ্র বিমোচনে ‘মাতৃত্বকালীন ভাতা কেন্দ্রীক স্বপ্ন প্যাকেজও ‘মানব সম্পদ’ উন্নয়নে ২য় যুগান্তকারী ও ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হবে। বাংলাদেশ এক প্রজন্ম মেয়াদে দারিদ্র নিরসনের ফাঁক ফোকড় বন্ধ হয়ে সম্মান ও মর্যাদাবান উন্নত স্বনির্ভর দেশ হিসাবে পরিণত হবে, একই সাথে তৃতীয় বিশ্ব সহ সারা দুনিয়া বাংলাদেশকে স্মরণ করবে ও পথ পাবে।
৮। প্রয়োজন: জাতীয় দারিদ্র বিমোচন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর চেয়ার করবেন। মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়কে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে। মহিলা ও শিশু অধিদপ্তর বাস্তবায়ন কাজ করবে। নির্বাচিত এনজিও সহযোগী থাকবে। বর্তমানে সচিব মহোদয়ের সভাপতিত্বে একটি স্টিয়ারিং কমিটি কাজ করছে।
৯। অতএব, এক যুগের অভিজ্ঞতা, পরিপক্কতা ধারাবাহিকতায় সার্বিক বিবেচনায় প্রাথমিকভাবে ১ (এক) শ উপজেলায় ১০ (দশ) হাজার মা’র জন্য ১ (এক) শত কোটি টাকার বাজেট সম্বলিত প্রকল্প রূপরেখাসহ মহামান্য সরকারের সমীপে উপস্থাপন করা হয়।
এএইচএম নোমান, প্রতিষ্ঠাতা, ডরপ এবং গুসি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরষ্কার বিজয়ী।
nouman@dorpbd.org