৮বছরের শিশুকন্যা শান্তনা হত্যাকাহিনী ও কিছু প্রশ্ন

বিডি মেট্রোনিউজ || গাজীপুর জেলা সদরের পুবাইল সাপমারা গ্রামের বাসিন্দা নিরঞ্জন রবিদাস এর শিশুকন্যা শান্তনা রাণী দাস (৮) কে গত ১২ অক্টোবর, ২০১৫ তার বাসার কাছেই হত্যা করা হয়। এই হত্যাকান্ডের প্রেক্ষিতে জয়দেবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কোন আসামীকে চিহ্নিত ও গ্রেফতার করতে পারেনি। ফলে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত তার পরিবার।

এর পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিক উদ্যোগ এবং বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) এর উদ্যোগে আজ ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে ভিকটিমের পরিবারের সদস্য ছাড়াও দলিত প্রতিনিধি, নাগরিক উদ্যোগ এবং বিডিইআরএম এর কর্মকর্তা ও নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলনের পক্ষ থেকে সহসভাপতি মনি রানী দাস সারা দেশে দলিত মেয়ে ও শিশুদের ওপর হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে সাংবাদিকদের মাধ্যমে এসব ঘটনার দ্রুত ও যথাযথ বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান।

দলিত শিশু শান্তনা রানীর হত্যা সম্পর্কে সাংবাদিককের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন দলিত মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মী তামান্না সিং বাড়াইক। শান্তনার হত্যা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন শান্তনার বাবা নিরঞ্জন রবিদাস।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নাগরিক উদ্যোগ এর প্রকল্প সমন্বয়কারী আফসানা বিনতে আমিন।

গাজীপুর জেলা সদরের পুবাইল সাপমারা গ্রামের বাসিন্দা নিরঞ্জন রবিদাস পেশায় একজন জুতা মেরামতকারী। গাজীপুরের পূবাইল বাজারে তার জুতা মেরামতের একটি দোকান রয়েছে। গত ১২ অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯ টায় নিরঞ্জন রবিদাস প্রতিদিনের মত তার বাসা থেকে পুবাইল বাজারে তার নিজ দোকানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। পথিমধ্যে এক মাছ বিক্রেতাকে তাজা মাছ বিক্রি করতে দেখে তিনি তা কিনে নিয়ে দোকানে যান। পরে তিনি তার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে মাছগুলো নিয়ে যাবার জন্য মেয়ে শান্তনাকে দোকানে পাঠিয়ে দিতে বলেন । দীর্ঘসময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও মেয়ে দোকানে না আসায় তিনি আবার স্ত্রীকে ফোন দিলে তার স্ত্রী জানান যে তিনি অনেক আগেই মেয়েকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ কথা শোনার পর নিরঞ্জন দ্রুত দোকান বন্ধ করে তার ভাই স্বপন রবিদাসসহ মেয়েকে খুঁজতে বের হন।

দীর্ঘ সময় খোঁজার পর সকাল আনুমানিক ১১.৩০ মিনিটে তার বাসা থেকে পুবাইল বাজার যাবার পথে নয়ানীপাড়া এলাকায় সত্য মাষ্টার এর বসতভিটার পাশের বাঁশ ঝাড়ে শান্তনার নিথর দেহ গলায় ওড়না দিয়ে বাধা অবস্থায় দেখতে পান।

নিরঞ্জন রবিদাস তখনি পার্শ্ববর্তী পুবাইল পুলিশ ফাঁড়িকে বিষয়টি অবহিত করলে ফাঁড়ি থেকে ইন-চার্জ এস আই ফায়জুর রহমান ঘটনাস্থলে আসেন। সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করার পর শান্তনার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় । ময়নাতদন্তের পর শান্তনার লাশ সাপমারা তাদের বাসায় এনে সমাহিত করা হয়।

ঘটনার দিন ভিকটিমের বাবা নিরঞ্জন রবিদাস গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নম্বরঃ১১১, তারিখঃ ১২-১০-১৫। মামলাটির তদন্ত করছেন পুবাইল পুলিশ ফাঁড়ির ইন-চার্জ এস আই ফায়জুর রহমান।

এই হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই ফায়জুর রহমান এর ভাষ্যমতে, শান্তনার লাশ যে স্থানে পাওয়া যায় তার আশেপাশের বাসিন্দাদের ইতোমধ্যে তারা এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এছাড়া এই স্থানটি স্থানীয় মাদকসেবীদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র হওয়ায় স্থানীয় পুলিশ কয়েকজন মাদকসেবীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ  করেছেন বলেও জানান।

নিরঞ্জন রবিদাস বলেন, উক্ত ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ ১৩ অক্টোবর, ২০১৫ এ গাজীপুর জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার এ আর এম আলিফ ভিকটিমের বাসা ও ঘটনাস্থলে যান এবং এই বিষয়ে তার বিভাগ থেকে স্বাধীনভাবে তদন্ত করা হচ্ছে বলে ভিকটিমের পরিবারকে অবহিত করেন।

তবে ভিকটিমের পরিবারের দাবি জয়দেবপুর থানা পুলিশ এখন পর্যন্ত কোন আসামীকে চিহ্নিত এবং গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি। লাশের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষ হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত ভিকটিমের পরিবারকে এ ব্যাপারে কিছুই জানায়নি। ‍এখন প্রশ্ন ‍এভাবেই কি ‍একটি হত্যাকান্ড বিচারের বাইরে থেকে যাবে? বাবা-মা পরিবার কি কোনোদিন ‍এই মৃত্যুর প্রকৃত ঘটণা জানতে পাবেনা?

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts