মানুষ মানুষের জন্য ॥ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল

গত বেশ কিছুদিন হল পত্রপত্রিকার পৃষ্ঠার দিকে আর তাকানো যাচ্ছে না না। মানুষের নিষ্ঠুরতার কথা পড়তে ভালো লাগে না। এরকম খবর পত্রপত্রিকায় ছাপা হলে নিজের অজান্তেই চোখ ফিরিয়ে নিই। একত্তর সালে আমাদের এরকম নিষ্ঠুরতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছিল, তখন চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো উপায় ছিল না। আমাদের চারপাশেই সেই ঘটনাগুলো ঘটেছিল। মনে হচ্ছে সেই দিনগুলো বুঝি আবার ফিরে এসেছে। আমি না চাইলেও আবার সেরকম ঘটনাগুলো দেখতে হচ্ছে, শুনতে হচ্ছে।

একজন মা তার মৃত সন্তানের মুখের সাথে মুখ লাগিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এরকম দৃশ্য সহ্য করা কঠিন। কিন্তু এখন আমরা সবাই জানি খবরের কাগজের এরকম একটা ছবির পিছনে এর চাইতেও ভয়ংকর নির্মম আরও হাজারটি কাহিনি আছে। রোহিঙ্গাদের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে– মেয়েদের ধর্ষণ, গণধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে– নারী-পুরুষ-শিশুদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই ভয়ংকর অত্যাচার থেকে রক্ষা পাবার জন্যে একজন দুইজন নয়, চার লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এত অল্প সময়ে এত বেশি শরণার্থী আর কোথাও প্রাণ বাঁচানোর জন্যে হাজির হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থাকত। এই মূহূর্তে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গার সংখ্যা কমে হাতেগোনা পর্যায়ে চলে এসেছে। তাদের বেশিরভাগই সেখান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। বহুদিন থেকে মিয়ানমার এটিই করতে চেয়েছিল। তারা শেষ পর্যন্ত এটি করতে পেরেছে। পৃথিবীর মানুষের সমালোচনা কিংবা ধিক্কার এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিতে পারলে মিয়ানমার তাদের বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত চূড়ান্ত সমাধানটি শেষ পর্যন্ত করে ফেলতে পেরেছে।

পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম চূড়ান্ত সমাধানের কোনো অভাব নেই। ইজরায়েল নামক রাষ্ট্রটি এর সবচেয়ে স্পষ্ট উদাহরণ। জোর করে একটি জায়গা থেকে সব অধিবাসীকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে ইজরায়েল রাষ্ট্রটি তৈরি করা হয়েছে, বিশ্ববিবেকের তাতে একটি আঁচড়ও পড়েনি। কাজেই হঠাৎ করে রোহিঙ্গাদের জন্যে পৃথিবীর মানুষ ব্যাকুল হয়ে উঠবে আমি একবারও সেটি মনে করি না।

আমার নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি আমাদের পাশের দেশ ভারতবর্ষে এই রোহিঙ্গা-বিপর্যয় নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। চীন এবং রাশিয়া মোটামুটি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে তারা মিয়ানমায়ের পক্ষে। একাত্তরে যখন বাংলাদেশে গণহত্যা চলছিল, আমাদের চোখের সামনে যখন শুধু মানুষের লাশ এবং লাশ– ঠিক তখনও আমরা শুনতে পেতাম এটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন বিষয়। এতদিন পর সেই একই ভাষায় একইভাবে আমরা শুনতে পাচ্ছি, রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়টি হচ্ছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীন বিষয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশ আমেরিকার রিফিউজি বা শরণার্থী নিয়ে রীতিমতো এলার্জি আছে। তাই বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে তাদের কোনো গরজ থাকার কথা নয়। নিউইয়র্ক থেকে শেষ হাসিনা সেটা সোজা ভাষায় আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন।

সদাহাস্যময় মিয়ানমারের জেনারেল সাহেব ইউরোপে খুবই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। তিনি সারা পৃথিবীতে খুবই দাপটের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অং সান সু চিকে সাধারণ মানুষজন ইন্টারনেটে একটু গালমন্দ করছে। চোখ-নাক-মুখ বন্ধ করে এই সময়টা পার করে দিলেই পৃথিবীর মানুষ এর কথা ভুলে যাবে।

আমি প্রত্যেকদিন ইন্টারনেটে বিবিসিতে একবার চোখ বুলিয়ে দেখি, এর মাঝেই প্রাত্যহিক খবরে এখন রোহিঙ্গাদের কোনো খবর নেই। প্রাণ বাঁচানোর জন্যে লক্ষ লক্ষ নারী-শিশু-পুরুষের নিজ বাসভূমি ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনাটির গুরুত্ব বিশেষ অবশিষ্ট নেই। কাজেই মোটামুটি অনুমান করা যায়, মিয়ানমার তাদের রাখাইন রাজ্যটি মোটামুটি ঝামেলামুক্ত করে ফেলেছে, সেখানে আর কোনো রোহিঙ্গা নেই। কাজটি করতে হয়তো অনেক সময় লাগত, কিন্তু অনেক দ্রুত করে ফেলা গেছে।

রোহিঙ্গাদের চরমপন্থী দল আরসা পুলিশ-মিলিটারির ঘাঁটি আক্রমণ করে অল্পকিছু পুলিশ-মিলিটারিকে মেরে পুরো কাজটি খুব সহজ করে দিয়েছে। এখন মিয়ানমারের বিশাল মিলিটারি বাহিনী খুবই যৌক্তিকভাবে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা করতে পারছে। এভাবে যে গণহত্যা করা যায় আমরা আমাদের চোখের সামনেই সেটি অনেকবার হতে দেখেছি।

২.

শান্তির জন্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ভদ্রমহিলা অং সান সু চি সেদিন তাদের টেলিভিশনে একটা বক্তৃতা দিয়েছেন। বক্তৃতায় কী বলবেন মোটামুটি অনুমান করা যেত এবং মোটামুটি সেটাই বলেছেন। একাত্তরে বাংলাদেশের এক কোটি শরণার্থী ভারতবর্ষে আশ্রয় নিয়েছিল, পৃথিবীর বেশ কিছু দেশ যখন সেটা নিয়ে পাকিস্তানের উপর চাপ দিয়েছিল, তখন কোনো এক পর্যায়ে পাকিস্তান মিলিটারি শরণার্থীদের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছিল। সেই আহ্বান শুনে একজন শরণার্থীও ফিরে যায়নি। কেন যাবে? পাকিস্তান মিলিটারিরাও জানত সেটা ফাঁকা বুলি। শরণার্থীরাও জানত সেটা ধাপ্পাবাজি। নিজের জীবন নিয়ে কে ধাপ্পাবাজির ফাঁদে পা দেবে? মিলিটারির গুলি খেয়ে মারা যাওয়া থেকে অনাহারে-রোগে-শোকে-কলেরায় মারা যাওয়াটচাই তাদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছিল। শরণার্থী ক্যাম্পে তখন প্রায় আট থেকে দশ লক্ষ লোক মারা গিয়েছিল।

এবারে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ভদ্রমহিলা পাকিস্তান মিলিটারি থেকে এক কাঠি সরেস। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, যাচাই-বাছাই করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নেওয়া হবে। যাচাই-বাছাই করার প্রক্রিয়াটি কী আমরা এখনও জানি না। যারা প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছে তাদের কাছে কী কাগজপত্র প্রমাণ হিসেবে আছে আমার জানা নেই। সবচেয়ে বড় কথা, এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কোনো নাগরিকত্ব নেই।

ব্যাপারটা আমি বুঝতেই পারি না। একজন মানুষ একটি দেশে থাকে, কিন্তু সে এই দেশের নাগরিক নয়! দেশের সংবিধানের কথাগুলো লেখা থাকে সেই দেশের নাগরিকের জন্যে। কাজেই যারা সেই দেশের নাগরিক নয় তাদের জন্যে রাষ্ট্রের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। যার অর্থ, রোহিঙ্গা শিশু লেখাপড়া করতে পারবে না। অসুস্থ হলে চিকিৎসা পেতে পারবে না। বাসে-ট্রেনে উঠতে পারবে না। দেশের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারবে না। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কথা, দেশের সুনাগরিকেরা যদি দা-চাপাতি হাতে নিয়ে কিছু রোহিঙ্গাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলে সেটা অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। রোহিঙ্গা মেয়েরা যেহেতু নাগরিক নয়, কাজেই তাদেরকে ধর্ষণ করাও নিশ্চয়ই গুরুতর অপরাধ নয়।

যে রাষ্ট্রের কিছু মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয় সেই দেশের সংবিধানটি দেখার আমার খুবই কৌতূহল।

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ভদ্রমহিলা শরণার্থীদের যাচাই-বাছাই করে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ার কথা বলে অবশ্য স্বীকার করে ফেলেছেন যে, শরণার্থী বলে কিছু একটা আছে। আমি ভেবেছিলাম তিনি সেটাও অস্বীকার করবেন। চীন, রাশিয়া এবং ভারতবর্ষ পাশে থাকলে যে কোনো মিথ্যা কথা খুব জোর দিয়ে বলা যায়। নাফ নদীর এপার থেকে যখন দেখা যায় রাখাইন রাজ্যে গ্রামে গ্রামে আগুন জ্বলছে তখন আগুনটা অস্বীকার করা একটু কঠিন হয়ে যায়। রাখাইন রাজ্যের কর্মকর্তারা বলেছে, মানুষগুলো নিজেরাই নিজেদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। এর চাইতে নিষ্ঠুর কৌতুক আর কী হতে পারে!

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ভদ্রমহিলার বক্তব্যের সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হচ্ছে যে, তাদের দেশের মিলিটারিরা সেপ্টেম্বরের পাঁচ তারিখের পর আর কিছু করেনি। বক্তব্যটি সোজা বাংলায় অনুবাদ করলে এরকম শোনাবে: “আগস্টের ২৪ তারিখ থেকে আমাদের মিলিটারি রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা করেছে, মেয়েদের ধর্ষণ করেছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচানোর জন্যে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। মোটামুটি সবাইকে যেহেতু তাড়িয়ে দেওয়া গেছে, এখন হত্যা করার জন্যে আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সেপ্টেম্বরের পাঁচ তারিখ থেকে হত্যা-ধর্ষণ-বাড়ি জ্বালানো বন্ধ আছে।”

তবে এই কথাটাই নির্জলা মিথ্যা। সেপ্টেম্বরে পাঁচ তারিখের পরেও রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রাম পোড়ানো হয়েছে, তাদের ওপর হামলা হয়েছে।

সবচেয়ে বড় কথা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ভদ্রমহিলার বক্তব্য শুনে মনে হল, সেপ্টেম্বরের পাঁচ তারিখে মিলিটারি অ্যাকশন বন্ধ করার জন্যে তিনি সারা পৃথিবী থেকে এক ধরনের বাহবা কিংবা সম্ভব হলে শান্তির জন্যে দ্বিতীয় আরকটি নোবেল পুরস্কার আশা করছেন। তা না হলে এত বড় গলায় এত বড় একটা মিথ্যা কথা কীভাবে বলা হয়?

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিয়ানমারে ছুটে গিয়েছিলেন। সামরিক শাসন শেষ হয়ে মিয়ানামার গণতান্ত্রিক দেশ হয়ে গেছে সেই আনন্দে সারা পৃথিবী উদ্বাহু হয়ে নৃত্য করেছে। রোহিঙ্গা-বিপর্যয়ের কারণে আমরা এখন মিয়ানমায়ের গণতন্ত্রের প্রকৃত ছবিটা দেখতে পাচ্ছি। তাদের সংসদের শতকরা পঁচিশ ভাগ সিট মিলিটারিদের জন্যে। শুধু তাই নয়, কোনো বিল পাশ করতে হলে শতকরা পঁচাত্তর ভাগ ভোট পেতে হয়। যার অর্থ, কোন বিল পাশ হবে এবং কোন বিল পাশ হবে না সেটি সেই দেশের মিলিটারি ঠিক করে দেয়।

মজা এখানেই শেষ নয়, সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে মিলিটারি, কিন্তু দেশটাকে পৃথিবীর সামনে উপস্থাপন করার জন্যে রয়েছেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া, সারা পৃথিবীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসায় সিক্ত ফটোজেনিক একজন ভদ্রমহিলা। কী মজা!

আমি দেশ রাজনীতি, অর্থনীতি কিছুই বুঝি না। সাধারণ মানুষের কমন সেন্স দিয়ে সব কিছু বোঝার চেষ্টা করি। একেবারে মৌলিক যে বিষয়গুলো কমন সেন্স দিয়ে বুঝতে হবে সেটি হচ্ছে, এই পৃথিবীতে সব মানুষের সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। পৃথিবীটাকে নানান দেশে ভাগ করা আছে, সব দেশের দায়িত্ব নিজের দেশের মানুষকে সুখে-শান্তিতে বেঁচে থাকার জন্যে সাহায্য করা। গায়ের রং, মুখের ভাষা কিংবা ধর্মের জন্যে কাউকে পছন্দ না হলেই তাকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া যাবে না। ইজরায়েল কিংবা মিয়ানামার সেটা করতে পারবে না। তাদের যত বড় খুঁটির জোরই থাকুক না কেন, সেটা অন্যায় সেই কথাটি আমরা উচ্চকণ্ঠে বলতে পারব।

আমার উচ্চকণ্ঠ আমার চারপাশের মানুষের কান পর্যন্ত পৌছায়। কিন্তু যখন এক ডজন নোবেল পুরস্কার পাওয়া মানুষ সেই একই কথা বলেন তখন সেই কথাটা সারা পৃথিবীর বিবেকে নাড়া দেয়। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে যখন বলা হয় এটি হচ্ছে একটা জাতিকে নিংশেষ করে দেওয়ার ধ্রুপদী প্রক্রিয়া তখন একটুখানি হলেও পৃথিবীর সব মানুষের উপর বিশ্বাস আরও একটুখানি ফিরে আসে।

এর মাঝে আরও একটি ব্যাপার আছে, পৃথিবীতে বৈচিত্র্য হচ্ছে সৌন্দর্য। একটা দেশের মানুষের ভেতর যত বৈচিত্র্য থাকবে সেই দেশটি হবে তত সম্ভাবনাময়। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই দেশে পুথিবীর সব দেশের সব জাতির মানুষ রয়েছে। সত্যি কথা বলতে কী, এটি একটি বড় দেশ নয়, এটি একটি ছোট পৃথিবী। সে কারণে এই দেশটি এত উন্নত হতে পেরেছে।

(এই মূহূর্তে ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য দেশটির প্রকৃত সৌন্দর্য অস্বীকার করে এটাকে বৈচিত্র্যহীন দেশে পরিণত করার চেষ্টা করছে।)

আমাদের দেশের মানুষের মাঝে বৈচিত্র্য খুব বেশি নয়। সে জন্যে অল্প যে কয়জন আদিবাসী বা ভিন্ন কালচারের মানুষ রয়েছে তাদেরকে আমাদের বুক আগলে রাখার চেষ্টা করতে হয়। মিয়ানামারের জন্যেও সেই কথাটা সত্যি। তাদের দেশের শতকরা নব্বই ভাগ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। কাজেই অল্প যে কয়জন ভিন্ন ধর্মের মানুষ রয়েছে তাদেরকে মূল্যবান সম্পদের মতো বুক আগলে রক্ষা করার কথা ছিল। মিয়ানমারের জেনারেলদের সেই সৌন্দর্য অনুভব করার ক্ষমতা নেই, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের কাছে আপদ বালাই। তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে তাদের শান্তি। বলতে কোনো দ্বিধা নেই, তারা আধুনিক পৃুথিবীর মানুষ এখনও হতে পারেনি। তাদের জন্য আমাদের করুণা হয়।

বাংলাদেশি হিসেবে আজ আমি অনেক গর্ব অনুভব করি যখন দেখতে পাই আমাদের দেশটি হতভাগ্য রোহিঙ্গাদের বুক আগলে রক্ষা করার জন্যে এগিয়ে এসেছে। আমাদর প্রধানমন্ত্রী তাদের দেখতে শরণার্থী শিবিরে গিয়েছিলেন। তখন একজন বিদেশি সাংবাদিক তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “এই রোহিঙ্গাদের আপনি কতদিন রাখবেন?”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, “কতদিন? এরা সবাই মানুষ।”

পৃথিবীর সবাই লাভ-ক্ষতির হিসাব করছে। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী সেই লাভক্ষতির হিসেব করেননি। একেবারে পরিস্কারভাবে বলেছেন, তিনি মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

 

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল লেখক ও অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts