আনিস মণ্ডল
দেখলাম অনেক আলোচিত সমালোচিত মুভি ‘ডুব’। এনিয়ে অনেক লেখার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু পরিপূর্ণ মুড না থাকায় খুব বেশি লিখবোনা। তবে শিল্প-সাহিত্য প্রেমী একজন মানুষ হিসেবে কিছু কথা না বললেই নয়, সেটুকুই বলি।
বর্তমান সময়টাকে বলা হচ্ছে বাংলা সিনেমার ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। তাই তরুণ প্রতিভাবান নির্মাতারা কিছু বানালেই স্বপ্নবাজ সিনেমা প্রেমীরা ছুটে যাচ্ছেন হলগুলোতে। কিন্তু সেই তরুণ নির্মাতারা সেই সব স্বপ্নবাজদের আশা আকাঙ্ক্ষা কতটুকু পূরণ করতে পারছে সেটাই আলোচনা করি…
সম্প্রতি দুটি খুবই আলোচিত মুভি ‘ভয়ংকর সুন্দর ও ডুব’। দুটি মুভিই বানিয়েছেন যথাক্রমে দুই তারকা নির্মাতা অনিমেষ আইচ ও মোস্তফা সরওয়ার ফারুকি। আমিও আর ১০ জনের মতো একবুক আশা নিয়ে গিয়েছি সিনেমা হলে। সত্যি বলতে সিনেমা দেখে না যতটুকু হতাশ হয়েছি তার চেয়ে বেশি মন ভেঙে গেছে যখন হল ফেরত দর্শকদের চরম বিস্ময় নিয়ে বলতে শুনেছি, এইডা কি বানাইলো? এইডা কিছু হইলো? উনি তো নাটকও এর চেয়ে ভালো বানান!!!
ভয়ংকর মার্কেটিং করে উনারা যে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা সিনেমাপ্রেমীদের দিলেন তাতে করে উনারা বাংলা সিনেমাকে উদ্ধার করলেন? না কফিনে শেষ পেরেক মারলেন? সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। আবার সবচেয়ে বড় বিস্ময়ের ব্যাপার দর্শকদের ভালো না লাগার দায়টাও উনারা দর্শকদেরই দিচ্ছেন!!! এমনকি উনারা দাবি করছেন, এসব মুভি নাকি কালোত্তীর্ণ! এসব মুভি দেখার দর্শক নাকি এখনো তৈরি হয়নি! যেখানে কালের মুভিই হচ্ছেনা, সেখানে কালোত্তীর্ণ মুভি বানিয়ে উনারা কি মেসেজ দিতে চাচ্ছেন? অথচ এই সব দর্শকরা সত্যজিৎ, ঋতিক ঘটক, আব্বাস কিওরোস্তামি বা আকিরা কুরোসয়ার মতো নির্মাতাদের মুভি বুঝতে পারছে বা আনন্দ সাগরে অবগাহন করছে। তাহলে নির্মাতা দর্শকের মধ্যে এই সংকটে দায় কার?
এ বিষয়ে ‘ডুব’ মুভি নিয়ে কিছুটা আলোচনা করলেই হয়তবা সমাধান মিলবে। এই নামে যে সিনেমা বাংলাদেশে হচ্ছে সেটা জানলাম ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা পড়ে। এরপর জানলাম এটা জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বায়োপিক। এরপরে ঘটনা সবারই জানা। বর্তমানে নির্মাতা বলছেন মুভিটি দেখার সময় এটা হূমায়ূন আহমেদের জীবন ঘনিষ্ঠ বলেই ভাবা যাবেনা। আমিও উনার পরামর্শ মতো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম সব। আমার এখন ‘ডুব’ দেয়ার পালা।
মুভির শুরুতেই দুই তরুণীকে পাশাপাশি দেখলাম। বুঝতে পারলাম উনাদের মাঝে কোনো দ্বন্দ্ব চলছে। আমি কিছু না বললেও দর্শকরা ফিসফিস করে বলছে, তৃষা মেয়ে আর এই পাশেরটা শাওন! বুঝলাম উনারা নির্মাতার নির্দেশনা ফলো করছেন না!
এরপরেই দেখলাম এক মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারলাম না কে পালালো! অথচ দর্শক ঠিকই বুঝে ফেলেছে এটা হুমায়ূন আহমেদের প্রথম বিয়ের গল্প! দর্শকের ফিসফাস আলোচনা না চাইলেও কানে আসছে। যাহোক এখানে আর তেমন কিছু নাই! আমি ধরে নিলাম মুভির নায়ক ইরফান খান মানে প্রধান চরিত্র জাভেদের গল্প। জাভেদ কোনো এক মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছে। এই অংশের ডালপালা কিছুই দেখা হয়নি অথচ বুঝলাম সময় অনেক হয়েছে। ঐতিহাসিক কোনো সিনেমা না হওয়া সত্ত্বেও নির্মাতা দিন তারিখ দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন!!! জাভেদ এক তরুণ অভিনেত্রীর ফাঁদে পড়েছে!! এইখানে সংকট মিলে গেল হুমায়ূন আহমেদ ও শাওনের সম্পর্কের সাথে তাই দর্শক বুঝে নিলো তাদের মধ্যে প্রেম হয়ে গেল! কিন্তু আমি দেখলাম মুভির নায়ক জাভেদ কেমন চোরের মতো আচরণ করছে!!! মনে হচ্ছে সে বিশাল অপরাধী! মাঝে দুএকবার একটা মেয়ে ফাঁকেফাঁকে তার সাথে দেখা করছে। বিড়ি টানছে। এরই মাঝে স্ক্রিনে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকা দেখলাম নীতু জাভেদের মুভি থেকে বের হয়ে গেল! দর্শক সাথে সাথে বলতে থাকলো শাওনও হুমায়ূন আহমেদের মুভি থেকে বের হয়ে গিয়েছিল! এরই মাঝে দেখলাম বিয়ে হয়ে গেল, মরে গেল, দাফন নিয়ে দ্বন্দ্ব হলো মুভি শেষ!!!
সবাই সব বুঝে নিয়েছে।কিন্তু আমি কিছুই বুঝিনি। কারণ হুমায়ূন আহমেদকে যে চেনেনা সে এই মুভি বুঝবেনা। মুভিতে দুইটা সংকট। প্রধান চরিত্র জাভেদের মধ্যবয়সে মেয়ের বান্ধবীকে বিয়ে করা। কিন্তু সেই মেয়েটা এমন একজন জনপ্রিয় নির্মাতাকে কিভাবে জালে বন্দী করলেন তার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। আরেকটা সংকট তার মৃত্যুর পর দাফন নিয়ে। সেটাও কোনো চিত্রায়ন দেখলাম না। সোজাকথা হুমায়ূনকে ঝেড়ে ফেললে মুভিতে কিছুই থাকেনা।
মুভির টেকনিক্যাল বিষয়ে আমি বুঝিনা। কিন্তু চরিত্রের অভিনয় না দেখিয়ে কিভাবে আর্ট ফিল্ম হতে পারে। এক্সট্রিম লং, লং, মিডশট অহরহ দেখা গেলেও একটা ক্লোজ শট ছাড়াই মুভি হয়ে গেল?? সেখানে আবার অভিনয়ের প্রশংসা!!!!
আনিস মণ্ডল : লেখক, সংবাদকর্মী।
ফেসবুক থেকে