বিডি মেট্রোনিউজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত এক সতীর্থের মৃত্যুর পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরজুড়ে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে মাদ্রাসাছাত্ররা। মঙ্গলবার এই তাণ্ডবে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ও ভাংচুর হয়েছে। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতাঙ্গন ভাংচুরের পাশাপাশি সুর সম্রাটের স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রও পুড়িয়ে দেয় মাদ্রাসার ছাত্ররা। জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্সের ব্যাংক এশিয়া, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রও ভাংচুরের মধ্যে পড়েছে।
সকালে কয়েকশ’ মাদ্রাসাছাত্র শহরের টিএ রোড, কুমারশীলের মোড়, লোকনাথ ট্যাঙ্কের পাড়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের পর সাড়ে ১২টার দিকে ভাংচুর শুরু করে। বিক্ষুব্ধ মাদ্রাসা ছাত্ররা মিছিল করে শহরের কুমারশীল মোড় অতিক্রমের সময় ওই মিছিল থেকে কয়েকজন ‘ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ’ সংগীতাঙ্গনে আগুন দেয়। ঘণ্টাখানেক পর আগুন নিভে গেলে তারা ওই এলাকা ছাড়ে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসাগুলোতে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রভাব রয়েছে। ইসলামী দলগুলোর এই মোর্চার চেয়ারম্যান প্রয়াত ফজলুল হক আমিনী এই এলাকায় বিএনপি জোটের মনোনয়নে সংসদ সদস্য ছিলেন। মাদ্রাসাছাত্রদের তাণ্ডবের মধ্যে জেলা শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নামানো হয়েছে বিজিবিও। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এএসপি তাপস রঞ্জন ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি।”
১২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নজরুল ইসলাম বলেন, “শহরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।” বিজিবি মোতায়েনের পর দুপুর পর্যন্ত শান্ত থাকলেও বেলা ৪টায় একদল মাদ্রাসা ছাত্র লাঠি নিয়ে সদর হাসপাতালে ভাংচুর চালায়।
তাণ্ডবের মধ্যে বিক্ষুব্ধ মাদ্রাসা ছাত্ররা রেল স্টেশনে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। স্টেশনের কাছে রেল লাইনের ওপর আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে তারা, খুলে ফেলে স্লিপার। এ কারণে সোয়া ১১টার দিকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারী স্টেশন মাস্টার মাইনুল ইসলাম বলেন, “ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে সুবর্ণ ও কালনী এক্সপ্রেস আটকা পড়েছে।” জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার সভাপতি মহিউদ্দন আহমেদ মাসুম জানান, মাসুদুর রহমান (২০) নিহত হওয়ার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বুধবার সকাল–সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে।
এএসপি তাপস রঞ্জন জানান, আগের দিন বিকালে শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার এক ছাত্র মোবাইল ফোনসেট কেনার জন্য জেলা পরিষদ মার্কেটে যান। সেখানে দাম নিয়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে একপর্যায়ে দোকানি ওই ছাত্রকে চড় মারেন। এ খবর পেয়ে ওই মাদ্রাসার অর্ধশতাধিক ছাত্র দোকানটি ভাঙচুর করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে শুরু হয় সংঘর্ষ।
সংঘর্ষ চলাকালে শহরের বিভিন্ন স্থানে ৩০-৩৫টি হাতবোমা ফাটানো হয়। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ রবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে। ওই সংঘর্ষে আহত মাদ্রাসাছাত্র মাসুদ মঙ্গলবার ভোরে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি পৌর শহরের ভাদুঘর এলাকার হাফেজ ইলিয়াস মিয়ার ছেলে।
সোমবারের সংঘর্ষে আহত ২০ জনের মধ্যে পুলিশ সদস্য রাজীব চন্দ্র দাসকে (২৫) ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকিদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।