বিডি মেট্রোনিউজ ॥ মৃত্যু ভয়ে (ডেথ ফোবিয়া) পেয়ে বসেছে বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরকে। সেই সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসও তাঁকে ভোগাচ্ছে। এসব কারণ জানিয়ে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি দিয়ে বলেছেন, বুধবার দুদকের তলবে তিনি হাজির হতে পারছেন না।
মঙ্গলবার এ বিষয়ে চিকিৎসকের সনদ যুক্ত করে দুদককে চিঠি দিয়েছেন মুসা বিন শমসের। চিঠির অনুলিপি দুদক চেয়ারম্যান, সংস্থার দুই কমিশনার, অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের মহাপরিচালক, একই বিভাগের পরিচালক এবং অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীকে দিয়েছেন। চিঠিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় দুই থেকে তিন মাস পেছানোর আবেদন করা হয়েছে। দুদকের একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কাল বুধবার মুসা বিন শমসেরকে তৃতীয়বারের মতো জিজ্ঞাসাবাদের তারিখ নির্ধারিত ছিল।
মুসা বিন শমসেরের আবেদনটি দুদকে জমা দেন তাঁর মালিকানাধীন জনশক্তি প্রতিষ্ঠান ড্যাটকো প্রাইভেট লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক এ টি এম মাহবুব মোর্শেদ। আবেদন জমা দেওয়ার পর দুদক থেকে বের হওয়ার সময় এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্যার (মুসা বিন শমসের) কমপক্ষে দুই থেকে তিন মাস সময় পেছানোর আবেদন করেছেন।’ কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্যার মৃত্যু-আতঙ্কে থাকেন। ডাক্তারি ভাষায় যেটাকে ডেথ ফোবিয়া বলে। এ ছাড়া তাঁর উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস আছে।
মুসা বিন শমসের কখন মৃত্যু-আতঙ্কে থাকেন? জানতে চাইলে ড্যাটকোর এ কর্মকর্তা বলেন, ‘স্যার যখন ঘুমান তখন তার মনে হয় তিনি হয়তো মারা যেতে পারেন। সুইস ব্যাংকে তাঁর বিপুল পরিমাণ টাকা জব্দ থাকায় এ টাকা কবে অবমুক্ত হয়, এসব চিন্তায় হয়তো স্যারের এমন হচ্ছে।’
বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের কথিত বিপুল পরিমাণ সম্পদের রহস্য উদ্ঘাটন করতে ৪ জানুয়ারি তাঁকে আবারও তলব করে চিঠি দেয় দুদক। পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী স্বাক্ষরিত ওই তলবি নোটিশে তাঁকে ১৩ জানুয়ারি বেলা ১১টায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়।
দুদক সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ৭ জুন দুদকে দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে মুসা বিন শমসেরের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী সুইস ব্যাংকে তাঁর ১২ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৯৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৭৮ টাকা হিসাবে) ‘ফ্রিজ’ অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়াও সুইস ব্যাংকের ভল্টে ৯০ মিলিয়ন ডলার দামের (বাংলাদেশি প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) অলংকার জমা রয়েছে।
গাজীপুর ও সাভারে তাঁর নামে প্রায় ১ হাজার ২০০ বিঘা সম্পত্তি রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন মুসা। বর্তমান বাজার দরে এসব জমির দাম ১ হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি। অধিকাংশ সময় দেশের বাইরে থাকায় এসব সম্পত্তির খাজনা পরিশোধ করে নামজারি করা সম্ভব হয়নি বলে জানান মুসা।
মুসার দেওয়া তথ্য যাচাই করতে দুদকের চাহিদা অনুযায়ী সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু চিঠির উত্তরে ব্যাংকটি জানিয়েছে, সেখানে ওই নামে কোনো হিসাব নেই। তাই ওই ব্যক্তির নামে কোনো সম্পদও নেই। সুইজারল্যান্ড কর্তৃপক্ষের জবাব পাওয়ার পর প্রকৃত তথ্য জানতে মুসাকে আবারও দুদকে তলব করা হয়।