বিডি মেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ভারতীয় সেনা কর্মকর্তাদের একজন জে এফ আর জ্যাকব। বাংলাদেশ সেনা প্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদের বিশেষ আমন্ত্রণে স্বাধীনতার ৩৭ বছর পালন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয়দের অংশগ্রহণের প্রসঙ্গে যেটুকু আলোচনা তার বেশিরভাগই তৎকালীন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল স্যাম মানেক্শকে ঘিরে, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও বীরত্বের জন্য ‘মিলিটারি ক্রস’ অর্জন করেন।
চওড়া গোঁফ, গোর্খা টুপি ও ব্যাটনধারী জেনারেল মানেক্শ ভারতীয়দের কাছে একজন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। তার অধীনেই ছিলেন প্রায় সমপ্রতিভা সম্পন্ন একদল সহযোদ্ধা, যারা নিজেরাই চৌকসভাবে রণকৌশল ঠিক করতেন। তাদের একজন কলকাতায় ভারতীয় পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব ছিলেন তার চিফ অফ স্টাফ।
মুক্তিযুদ্ধে ‘এস ফোর্স’ এর অধিনায়ক ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ বলেন, “জে এফ আর জ্যাকবের সহযোগিতাতেই ঢাকায় পাকিস্তান বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজীর আত্মসমর্পণ পত্রের খসড়া তৈরি এবং এ সংক্রান্ত সব আনুষ্ঠানিকতা ঠিক করা হয়। জ্যাকব একজন দক্ষ সেনা কর্মকর্তা। পাকিস্তানি বাহিনীর বিপর্যয়ের শুরুতেই জ্যাকব তাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী কখন, কোথায় ও কীভাবে আত্মসমর্পণ করবে সেটাও ঠিক করেছিলেন তিনি।”
যুদ্ধের স্মৃতিচারণায় এসএপিআরএ-কে জ্যাকব বলেন, “আমরা বুঝতে পারছিলাম সফলতা পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে আক্রমণ করা। জাতিসংঘ আমাদের ওপর চাপ দিয়ে যাচ্ছিল যুদ্ধ বিরতির জন্য, রাশিয়াও এমন ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে, তারা আর ‘ভিটো’ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে চায় না।”
তিনি বলেন, “আমরা জানতে পেরেছিলাম নিয়াজী শহরগুলোতে ঘাঁটি গড়ে তুলে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছিল। তাই আমরা শহরগুলোকে পাশ কাটিয়ে মূল লক্ষ্য ঢাকার দিকে এগোতে থাকি।”
সিএনবিসিকে আরেক সাক্ষাৎকারে জ্যাকব বলেন, “যুদ্ধে জিততে হলে ঢাকার দখল পেতেই হবে এটা আমরা বুঝেছিলাম। পূর্ব পাকিস্তানে ভূ-কৌশলগত দিক থেকে ঢাকাই মূল কেন্দ্র। কাজেই এর দখল নেওয়া ছাড়া কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নই সম্ভব নয়।”
নদী ও জলাভূমির প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে গোলাবারুদসহ সৈন্যদের ঢাকার দিকে দিকে এগিয়ে যাওয়াটা ছিল একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। কিন্তু স্থানীয়দের সহায়তায় ভারতীয় সেনা প্রকৌশলীরা খুব দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে সক্ষম হন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অগ্রসরমান সেনা কন্টিনজেন্ট শত্রুর প্রতিরোধ গুড়িয়ে দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে ঢাকার দিকে এগিয়ে যায়। বিস্ময়কর এ অগ্রযাত্রা পাকিস্তানি সৈন্যদের মনোবল ভেঙে দিয়েছিল। মাত্র ছয় দিনের মধ্যেই মূল লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে যায় ভারতীয় সেনাবাহিনী।