মোঃ সোয়েব মেজবাহউদ্দিন ॥
সম্প্রতি এক শুক্রবারে আমার সাড়ে ৩ বছরের মেয়েকে নিয়ে রিক্সায় করে ঘুরতে বের হলাম। ধানমন্ডি ২৭ নং এর ট্রাফিক সিগনালে আটকা পড়লাম। কিছুন পড় বিনা কারণে পেছন থেকে একটি প্রাইভেট কার হাইড্রোলিক হর্নটা বাজাতে লাগল। আমার কোলে থাকা সাড়ে ৩ বছরের মেয়েটা আতংকে লাফিয়ে উঠল এবং কান্না শুরু করে দিল। আমার কোল থেকে আমার মেয়েটি পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো।
আমি সাথে সাথে তাকে ধরে ফেললাম। প্রচন্ড রাগে রিক্সা থেকে নেমে প্রাউভেট কারের অশিক্ষিত চালককে বিনা কারণে কেন হর্ন বাজালো জানাতে চাইতে সে আমার উপর উল্টো রেগে গেল। আমি চালকটির উপর আরও রেগে গেলাম। বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রাইভেট কারের পিছনের সিটে বসে থাকা ভদ্রলোকটি চালককে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলেন। কিন্তু প্রাইভেট কারের চালকের অপ্রয়োজনীয় হাইড্রোলিক হন এর কারনে বাসায় আসার পর ও আমার মেয়ে বেশ কিছুক্ষন আতংকে ছিল। মহান রাব্বুল আল-আমিনের অশেষ মেহেরবানি এবং ভাগ্য ভাল যে আমার মেয়ের কানে বড় কোন সমস্যা হয়নি।
শুধু এই প্রাইভেট কারের চালক নয় প্রতিদিন ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন সড়কে আইনত নিষিদ্ধ হওয়া সত্যেও সকল প্রকার যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন লাগানো হচ্ছে এবং প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে তা বাজানো হচ্ছে। স্কুল কলেজ হাসপাতাল এর সামনে হাইড্রোলিক হন বাজানো নিষিদ্ধ, এই মর্মে সাইবোর্ড লাগানো থাকে অথচ তা কেউ মানছে না। এমনকি নামাজের সময় ও মসজিদের সামনের রাস্তায় চালকরা অপ্রয়োজনে হাইড্রোলিক হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে।
একদিকে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ অন্য দিকে হাইড্রোলিক হন এর কারনে কানের সমস্যায় পরে ডাক্তারের শ্বরনাপর্ন হচ্ছে অনেকে। হাইড্রোলিক হর্ন শুধু কানের তি করে তা নয় কানের পাশাপাশি মাথায়ও অনেক সমস্যা হয়। অনেকক্ষেত্রে হাইড্রোলিক হর্ন এর কারনে শিশুদের কানের শ্রবন শক্তি অকেজো হয়ে যেত পারে।
বিআরটিএ কাছে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রকার যানবাহন নানাবিধ কাজে যাচ্ছে। বিআরটিএ কর্তৃপ কি একবারও পরীক্ষা করে দেখেছেন যানবাহনটি কেন ধরনের হর্ন ব্যবহার করছে? তারা তা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না। কারন তাদের তা দেখার সময় নেই। বিআরটিএ কর্তৃপ বিষয়টি দেখেন তাহলে হাইড্রোলিক হর্ন এর ব্যবহার বন্ধ হবে।
আর সরকার যদি হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি নিষিদ্ধ করে দেয় তাহলে ও হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধ হবে। আর যদি সম্ভব হয় সপ্তাহে একদিন হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধের লে ভ্রাম্যমান আদালত বসে, তাহলেও হাইড্রোলিক হর্ন এর ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হবে।
বিশেষ করে যে কথা না বললেই নয়, ঢাকা শহরের মত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হাইড্রোলিক হর্ন এর ব্যবহারের বিশেষ প্রয়োজন আছে কিনা প্রতিটি যানবাহনের মালিক সচেতনতার সাথে বিষয়টি ভেবে দেখলে এর উত্তর পাবেন। আমার মত আপনার বাচ্ছা যখন হাইড্রোলিক হর্ন এর কারর্ণে অসুস্থ্য হয়ে পড়বে হয়তবা তখন আপনি আপনার গাড়ির হাইড্রোলিক হর্ন নিশ্চই খুলে ফেলবেন।
আপনার গাড়ির হাইড্রোলিক হর্ন এর মাধ্যমে আপনি কেন আমার ক্ষতি করবেন। আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি। সকল যানবাহনের মালিকের কাছে এবং বিশেষ করে চালকদের কাছে অনুরোধ হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধ করুন এবং হাইড্রোলিক হর্ন বিক্রেতার কাছে অনুরোধ হাইড্রোলিক হর্ন বিক্রয় বন্ধ করে দিন। ব্যবসায়িক স্বার্থে নিজের অজান্তে আপনার বিক্রিত হাইড্রোলিক হর্ন এর মাধ্যমে অনেক লোকের ক্ষতি করছেন। জনস্বার্থে হাইড্রোলিক হর্ন বিক্রি বন্ধ করার ব্যাপারে বর্তমান সরকারের মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হস্তক্ষেপ একান্ত জরুরী।
মোঃ সোয়েব মেজবাহউদ্দিন একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
soyeb4@gmail.com