সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
১৯৪৭ সালে ইংরেজরা ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে দেশটাকে ভাগ করা হল ভারত এবং পাকিস্তানে৷ সেই সময় কিন্তু ‘কায়েদ-ই-আজম’ মহম্মদ আলি জিন্নার একমাত্র কন্যা দীনা পাকিস্তানে যাননি৷ উলটে তিনি থেকে গেলেন বাপু-নেহরুর ভারতেই৷ আসলে তার আগে থেকেই পিতা-পুত্রী সম্পর্ক চিড় ধরেছিল৷ আর এই জটিল সম্পর্কের কারণ দীনার বিয়ে৷ দীনা স্বেচ্ছায় এক অ-মুসলিম পাত্রকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন৷
জিন্না এমনিতে ছিলেন আপাদমস্তক সাহেব৷ কিন্তু তখন তো তিনি পাকিস্তানের দাবিদার৷ তিনি তখন আশংকিত হন- পাছে মেয়ের বিয়ে নিয়ে মুসলিম লিগ চটে যায়! ফলে বাবা মেয়ের উপর চটে গেলেন৷ জিন্না চেষ্টা করেছিলেন ওই যুবকটির থেকে মেয়ের মন সরাতে৷ কিন্তু মন কি আর সরানো যায়? দীনা নেভিল ওয়াডিয়াকে কথা দিয়েছিলেন৷ তাই কোনও চাপেই সরতে চাননি বিয়ে থেকে৷
জিন্নার সেক্রেটারি এমসি চাগলা এক সময় জানিয়েছিলেন, ওই বিয়ে ঘিরে বাবা-মেয়ের মধ্যে কম ঝগড়া, কথা কাটাকাটি হয়নি৷ ওই সময় দীনা তাঁর বাবাকে এমন প্রশ্নও করেছিলেন যা সেই সময়ের তুলনায় অবশ্যই দুঃসাহসি ৷ অন্তত পিতা-পুত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে তো বটেই৷ দীনার মা মরিয়াম নিজেই ছিলেন পার্সি৷ মহম্মদ আলি জিন্না প্রেম করে নিজেও একজন পার্সিকেই বিয়ে করেছিলেন৷ আর সেই তিনিই পার্সি নেভিল ওয়াডিয়ার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে বেঁকে বসেছিলেন! এই দ্বিচারিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন জিন্নার প্রকৃত শিক্ষিতা কন্যা৷
শোনা যায়, জিন্নার কাছে তাঁর মেয়ে দীনা জানতে চেয়েছিলেন, ‘‘ভারতের এত মুসলমান মহিলাদের কোনও একজনকে বেছে না নিয়ে কেন আপনি একজন পার্সি মহিলাকেই বিয়ে করেছিলেন?’’ এভাবেই বাপ-মেয়ের অবস্থান চলে গিয়েছিল দুই মেরুতে৷ পাকিস্তানের জনক হয়েও ব্যক্তিজীবনে জিন্না হয়ে পড়েছিলেন একাকী, বিচ্ছিন্ন৷
এভাবেই দেশভাগের আগেই বাবা-মেয়ের সম্পর্কে চিড় ধরে যায়৷ বম্বেতে স্বামীর সঙ্গে বসবাস শুরু করছিলেন দীনা৷ সুখী সংসার৷ কালক্রমে এক পুত্র ও একটি কন্যার জন্ম হয়৷ বাবা-মেয়ের সম্পর্কে এতটাই ফাটল ধরে গিয়েছিল যে, দেশভাগের পর পাকিস্তানের নাগরিকত্ব গ্রহণ দূরস্থান, ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বরে জিন্না মৃত্যুর পর বাবার শেষকৃত্যে যাওয়ার আগে পর্যন্ত পাকিস্তানে মাটিতে পা দেননি দীনা৷ জিন্না তনয়ার দ্বিতীয় বার পাকিস্তান সফর ২০০৪ সালে, পুত্র নসলি এবং নাতি নেস ও জাহাঙ্গিরের সঙ্গে৷ সেবার লাহোরে ভারত-পাক ক্রিকেট ম্যাচও দেখেন তিনি৷ তাঁর ওই সফর ঘিরে পাকিস্তানে কৌতূহল ছিল৷ তবে তিনি কিংবা তাঁর ছেলে কেউই এই বিষয়ে সেদেশে মুখ খোলেননি৷
জিন্নার একমাত্র কন্যা দিনা ওয়াদিয়া ৯৮ বছর বয়েসে ২ নভেম্বর নিউ ইয়র্কের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ তবে পাকিস্তানের জনক মহম্মদ আলি জিন্নার শিকড় এখনও ছড়িয়ে রয়েছে এই ভারতেরই মাটিতে ৷ নেভিল ওয়াদিরারা মুম্বইকে ভিত্তি করা এদেশের একটি বিশিষ্ট শিল্পগোষ্ঠী৷ ১৯৯৬ সালে দীনার স্বামী নেভিল ওয়াডিয়ার মৃত্যু হয়৷ যদিও ব্যবসা থেকে তিনি অবসর নিয়েছিলেন ১৯৭৭ সালেই৷ তখন থেকেই জিন্নার নাতি তথা দিনা ও নেভিলের পুত্র নসলি পৈতৃক শিল্পগোষ্ঠীর মাথায় বসেন৷ আপাতত পারিবারিক ব্যবসায় নসলির সঙ্গে রয়েছেন তাঁর দুই ছেলে নেস এবং জাহাঙ্গির৷ এই গোষ্ঠীর অন্যতম বিখ্যাত সংস্থা হল বম্বে ডাইং ৷
কলকাতা ২৪