পোপ এবং জানা-অজানা

শৌল বৈরাগী

বাংলাদেশ’র একমাত্র কার্ডিনাল এবং ঢাকা আর্চডায়োসিসের আর্চবিশপ প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও, সিএসসি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন যে ’বিশপ অফ ভাটিকান’ বা সারা বিশ্বের নিকট যিনি পোপ নামে অধিক পরিচিত এবং একই সাথে তিনি ভাটিক্যানের রাষ্ট্র প্রধান তথা ক্যাথলিক মন্ডলীর সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস আজ ৩০ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে তিন দিনের এক সফরে বাংলাদেশে আসছেন।’

এর আগে পোপ দ্বিতীয় জনপল বাংলাদেশ সফর করেছেন। তিনি ১৯৮৬ সালে এই নভেম্বর মাসেই রাষ্ট্রীয় এবং পালকীয় সফরে বাংলাদেশ এসেছিলেন। পোপ মহোদয় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও বাংলাদেশ’র খ্রীষ্টান নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন, আর্মি ষ্টেডিয়াম উপাসনা অনুষ্ঠানে মহাখ্রীষ্টযাগ উৎসর্গ করেন এবং ঐ উপাসনা অনুষ্ঠানে তিনি ১২ জন বাংলাদেশী যুবককে (ডিকন) যাজক পদে অভিষিক্ত করেন। বিকেলে রমনা আর্চবিশপ ভবন প্রাঙ্গণে সাধারণ খ্রীষ্ট ভক্তদের সাথে মিলিত হন এবং একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

বর্তমান পোপ ফ্রান্সিস যিনি আর্জেন্টিনার নাগরিক এবং বর্তমানে ভাটিক্যানের রাষ্ট্র প্রধান বা বিশপ অব ভ্যাটিকান এবং ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু। অন্য কথায় বলা যায় ’তিনি যীশুখ্রীষ্টের দৃশ্যমান প্রতিনিধি’।

পোপ ফ্রান্সিস’র আগমনে কার্ডিনাল, আর্চবিশপস, বিশপগণ, পুরোহিতগণ, ব্রাদার-সিষ্টারগণ, প্রতিটি ধর্মপল্লী ও পরিবার এবং সাধারণ খ্রীষ্টভক্ত একদিকে যেমন আনন্দে উদ্বেলিত, অন্যদিকে একজন খ্রীষ্টভক্তের জীবনে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি পোপ মহোদয়কে সশরীে দর্শন করা। তাই কাথলিক সম্প্রদায় প্রতিদিন প্রার্থনা করে যাচ্ছেন যেন তিনি নিরাপদে আসতে ও ফিরে যেতে পারেন এবং তার এ সফরের মধ্য দিয়ে যেন শান্তির বার্তা সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে পৌঁছে যায় ও আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করে। তাই পোপ মহোদয়ের আগমনের জন্য খ্রীষ্টানদের মধ্যে বিশেষ করে ক্যাথলিক সম্প্রাদায়ের মধ্যে সাজ সাজ এবং আনন্দঘণ উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে পোপ মহোদয়ের আগমন উপলক্ষে একটি লোগো প্রকাশ করা হয় যার মূল সুর হলো ’সম্প্রীতি ও শান্তি’। এছাড়াও আছে ‘পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশ ২০১৭’।

পোপ ফ্রান্সিস এর পরিচয়

বর্তমান পোপ ফ্রান্সিস হলেন ২৬৬তম পোপ। তাঁর পোপ হবার পূর্বে নাম ছিল জর্জ মারিও বার্গোগলিও। তিনি আর্জেন্টিনার অধিবাসী। ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আইরেস শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে যাজক, ১৯৭৩ সালে জেজুইট সমাজে চিরব্রত গ্রহণ এবং একই বছরে আর্জেন্টিনার জেজুইট সমাজের প্রভিন্সিয়াল সুপিরিয়র, ১৯৯২ সালে বুয়েন্স আয়ার্সে সহকারী বিশপ, ১৯৯৮ সালে বুয়েন্স আয়ার্সে কো-অ্যাজুটর আর্চবিশপ এবং ২০০১ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল কর্তৃক কার্ডিনাল হিসেবে মনোনীত হন। এরপর ২০১৩ সালে ১৩ মার্চ পোপ হিসাবে নির্বাচিত হন এবং ১৯ মার্চ সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে এক খ্রীষ্টযাগের মধ্য দিয়ে পোপীয় দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তিনি পূর্ববর্তী পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট’র স্থলাভিসিক্ত হয়েছেন। উল্লেখ্য যে পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট তাঁর দায়িত্ব পরিচালনায় অপারগতা দেখিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন।

প্রথম পোপ

খ্রীষ্ট মন্ডলীর প্রথম পোপ ছিলেন যীশুর শিষ্য সাধু পিতর। আর পিতরের হাতেই যীশু তার মন্ডলীর কার্য ও দায়িত্ব ভার তুলে দিয়েছিলেন। তিনি স্বয়ং খ্রীষ্ট দ্বারা নিয়োগকৃত হয়েছিলেন যা আমরা পবিত্র বাইবেলের নতুন নিয়মে দেখতে পাই মথি লিখিত মঙ্গল সমাচারের ১৬ঃ ১৮-১৯ পদে। যীশু পিতরকে বললেন, ’আমি তোমাকে বলছি, তুমি পিতর (পাথর), আর এই পাথরের উপরেই আমি আমার মন্ডলী স্থাপন করব। নরকের কোন শক্তিই তার উপর জয় লাভ করতে পারবে না। আমি তোমাকে স্বর্গ-রাজ্যের চাবিগুলো দেব, আর তুমি এই পৃথিবীতে যা বাঁধবে তা স্বর্গেও বেঁধে রাখা হবে এবং যা খুলবে তা স্বর্গেও খুলে দেয়া হবে।’

তাই যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যুর পরে পিতর মন্ডলীর হাল ধরেন, শিষ্যদের এবং যারা নতুন বিশ্বাসী ছিলেন তাদের দেখাশোনা এবং প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করানো, অত্যাচারিত মন্ডলীকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়া ইত্যাদি কাজে পিতর নেতৃত্ব প্রদান করেন। আর সত্যিই আজও যীশুর নির্দেশ অনুসরণ করে পোপ মহোদয়গণ মন্ডলীর দেখাশোনা এবং পরিচর্যা করে যাচ্ছেন। পোপ মহোদয়গণ ছুটে যান তাঁদের মেষদের নিকট পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত যেমনটি করেছিলেন সাধু পিতর।

যীশুর মত তাঁর শিষ্য এবং খ্রীষ্ট মন্ডলীর প্রথম পোপ পিতরকেও এক সময় ক্রুশে টাঙ্গিয়ে/ ঝুলিয়ে মারা হয়। তবে তাঁর ইচ্ছানুযায়ী তাকে মাথা নীচের দিকে দিয়ে ক্রুশে টাঙ্গানো হয়। কেননা তিনি বলেছিলেন যে, ‘তিনি কখনোই যীশুর সমান নহে, তাই যীশুকে যেভাবে ক্রুশে দেয়া হয়েছে সেভাবে যেন তাকে ক্রুশে দেয়া না হয়। কেননা তিনি তার যোগ্য নন।’ তাই তাকে মাথা নীচের দিকে দিয়ে ক্রুশে দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে তৎকালীন সময়ে ক্রুশীয় মৃত্যু ছিল সবচেয়ে বেশী ঘৃণ্য এবং অপমানকর।

পোপ এবং ভ্যাটিকান সিটি

রোমান ক্যাথলিক মন্ডলীতে পোপ সর্বোচ্চ ব্যাক্তি, বিশপ অব রোম, যীশু খ্রীষ্টের দৃশ্যমান প্রতিনিধি, ঈশ^রের ভক্তদের সেবক, বিশে^র বিভিন্ন দেশে থাকা রোমান ক্যাথলিকদের আধ্যাত্মিক গুরু/নেতা। একই সময়ে তিনি ভ্যাটিকান’র রাষ্ট্র প্রধান। পোপ মহোদয় ভ্যাটিকান সিটি’র রাষ্ট্র প্রধান। পোপীয় অফিসের নাম পাপাসি। ভ্যাটিকান সিটি ’দি হলি সি  বা ’দি এপোষ্টোলিক সি  নামেও মান্ডলিক নথিপত্রে সমধিক পরিচিত। ভ্যাটিকান সিটি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে শুরু হয় ১৯২৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী।

 পোপ কিভাবে নির্বাচিত হয়ে থাকেন

একজন পোপ একই সঙ্গে দু’টো পরিচয় বহন করেন। এক. তিনি ক্যাথলিক মন্ডলীর সর্বোচ্চ ধর্মগুরু বা পোপ বা বিশপ অব ভ্যাটিকান। দুই. তিনি হলেন ভ্যাটিকান’র রাষ্ট্র প্রধান। তিনি নির্দিষ্ট একটি ভূ-খন্ডের রাষ্ট্র প্রধান হওয়া সত্বেও শুধু মাত্র ভ্যাটিকানের জনগণ দ্বারা তিনি নির্বাচিত হন না। একজন পোপের নির্বাচনী এলকা সারা বিশ^ বা সারা বিশে^ বিভিন্ন দেশে বসবাসরত কার্ডিনালগন। এখানেই পোপ নির্বাচনের ব্যতিক্রম। আরো ব্যতিক্রম হলো এখানে কোন প্রার্থী থাকেন না। আশি বছরের নীচে সব কার্ডিনালগণই ভোট দিতে পারেন এবং যে কোন কার্ডিনালই পোপ নির্বাচিত হয়ে থাকেন।

একজন পোপ নির্বাচনে কলেজ অব কার্ডিনাল এর মধ্যে যে কেউই পোপ নির্বাচিত হতে পারেন। তারা সাধারনতঃ কার্ডিনাল নামেই পরিচিত। একজন পোপ মারা যাওয়ার বা পদত্যাগ’র পর সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা  কার্ডিনালগণের মধ্য থেকেই একজন পোপ নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এই কার্ডিনালগণই ভোট দিয়ে পোপ নির্বাচন করে থাকেন।

কোন কার্ডিনালই এখানে একক প্রার্থী নয় আবার সবাই প্রার্থী। এখানে কোন মনোনয়ন বা দল বা গ্রুপ থাকে না। কার্ডিনালগণ শুধুমাত্র নিজের ভোট নিজেকে দিতে পারবেন না। গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান করা হয়ে থাকে। কোন্ কার্ডিনাল কাকে ভোট দিচ্ছেন তা শুধুমাত্র ঐ কার্ডিনাল নিজেই জানেন অন্য কেহ জানতে পারেন না বা জানারও কোন সুযোগ নেই।

মন্ডলীর আইন অনুযায়ী পোপ নির্বাচনের জন্য ৮০ বছরের নীচে বয়স হতে হবে। তাই ৮০ বছরের উর্ধে কোন কার্ডিনাল পোপ হতে পারবেন না এবং তারা ভোট প্রক্রিয়ায়ও অংশ নিতে পারবেন না। তবে যদি কোন কার্ডিনাল মনে করেন যে তিনি ‘কনকেভ’ (গুপ্ত মিটিং) বা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকবেন তবে থাকতে পারবেন।

যদিও কার্ডিনালগণের মধ্যে থেকেই এখন পোপ নির্বাচিত হয়ে থাকেন, তবে ক্যাথলিক মন্ডলীর যে কোন পুরুষ খ্রীষ্ট ভক্তই পোপ হতে পারেন। অর্থাৎ সাধারণ খ্রীষ্ট ভক্তদেরর পোপ হবার যোগ্যতা আছে। তেমনি একজন মাত্র পোপ হয়েছিলেন তিনি হলেন পোপ ৬ষ্ঠ উরবান এবং সম্ভবত তিনিই কলেজ অব কার্ডিনালদের বাইরে নির্বাচিত হওয়া প্রথম ও শেষ পোপ। তবে বর্তমানে সাধারণতঃ যোগ্য কার্ডিনালগণের মধ্য থেকেই পোপ নির্বাচিত হয়ে থাকেন।

একজন পোপ মারা যাওয়ার বা পদত্যাগ করার পরে (যদি এমন ঘটে থাকে যেমন হয়েছিল বর্তমান পোপ মহোদয়ের পূর্ববর্তী পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট এর ক্ষেত্রে) সারা পৃথিবীর সকল কার্ডিনালগণ (যোগ্য – বয়সের বিবেচনায়) ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার চার্চ’র সিষ্টিন এ চ্যাপেলে (তুলনামূলক ছোট প্রার্থনা গৃহ/গীর্জা) একত্রিত হন।  সেখানে তাদের সাথে বহিঃবিশ্বের সমস্ত প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। যেখানে বাইরের কোন খবর যেমন ভিতরে আসতে পারবে না আবার ভিতরের কোন খবরও বাইরে যেতে পারবে না। অর্থাৎ যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন থাকে যতক্ষণ না একজন পোপ নির্বাচিত হবেন। সেখানে কলেজ অব কার্ডিনালস প্রার্থনা করেন এবং ভোট প্রত্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন যতক্ষণ না একজন পোপ নির্বাাচিত হন।

সিস্টিন চ্যাপেলের চিমনিতে কালো এবং সাদা ধোঁয়ার অর্থ

যতক্ষণ পর্যন্ত কোন কার্ডিনাল পোপ নির্বাচিত না হন ততক্ষণ পর্যন্ত সিষ্টিন চ্যাপেল’র চিমনি থেকে কালো ধোঁয়া বের হয়। আর বাহিরে অপেক্ষমান হাজার হাজার দর্শক ও বিশ্বের শুধু খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ই নয় সবার চোখই থাকে ঐ চিমনির দিকে কখন সাদা ধোঁয়া বের হবে। পোপ নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত ভোট চলতে থাকে। ভোট দিনে সকালে দু’বার এবং বিকেলে দু’বার অনুষ্ঠিত হয়। সাদা ধোঁয়া বের হলেই বাহিরে অপেক্ষমান ও অপেক্ষারত বিশ্ব জানতে পারেন যে একজন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারনতঃ দুই তৃতীয়াংশ ভোট পেলেই একজন কার্ডিনাল পোপ নির্বাচিত হন। তবে যদি সময় অনেক পার হয়ে যায় (১২/১৩ দিন) তবে যিনি বা যে কার্ডিনাল মেজোরিটি ভোট পান তিনিই পোপ নির্বাচিত হয়ে থাকেন বা তাঁকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়ে থাকে আর চিমনি দিয়ে সাদা ধোঁয়া বের হয়। এতে বিশ্ববাসী জানতে পারে যে একজন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন। বহিঃবিশ্বের সাথে সিস্টিন এ চ্যাপেলের ধোঁয়াই যোগাযোগের একমাত্র সূত্র। আর পোপ নির্বাচনের কিছুক্ষণের মধ্যেই নতুন পোপ সিস্টিন চ্যাপেলের বারান্দায় এসে বিশ্ববাসীকে দর্শণ দেন এবং তার প্রথম ভাষণ প্রদান করেন।

পোপ নির্বাচনে সর্বোচ্চ সময়

ত্রয়োদশ শতাব্দীতে পোপ চতুর্থ কেমেন্ট’র উত্তরসূরী নির্বাচনে সর্বোচ্চ সময় লেগেছিল। আর এ সময় বেশ লম্বাই ছিল। মোট সময় লেগেছিল ২ বছর ৯ মাস।  সবচেয়ে দীর্ঘ সময় যাবৎ পোপ’র দায়িত্ব পালন করেছেন পোপ নবম পিউস। তিনি ১৮৪৬-১৮৭৮ পর্যন্ত মোট ৩১ বছর ৭ মাস ২৩ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। এর পরেই যিনি দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি হলেন পোপ দ্বিতীয় জন পল। তিনি মোট ২৬ বছর ৫ মাস ১৮ দিন (আমৃত্যু) দায়িত্ব পালন করেন এবং তিনি ১৯৮৬ সালের এই নভেম্বর বাংলাদেশও সফর করেছেন। সবচেয়ে কম সময় দায়িত্ব পালন করেন পোপ সপ্তম উর্বান। তিনি মাত্র ১৩ দিন (১৫-২৭ সেপ্টেম্বর ১৫৯০) দায়িত্ব পালন করে পদত্যাগ করেন। এরপরেই যিনি সবচেয়ে কম সময় দায়িত্ব পালন করেন তিনি পোপ প্রথম জন পল (২৬ আগষ্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮) ইনি পোপ দ্বিতীয় জন পল এর পূর্বসূরী ছিলেন। তিনি মাত্র ৩৩ পঞ্জিকা দিবস দায়িত্ব পালন করে পদত্যাগ করেন।

কোন দেশ/মহাদেশ থেকে কতজন পোপ

কাথলিক মন্ডলীতে সাধু পিতর (প্রথম পোপ) থেকে শুরু করে এপর্যন্ত ২৬৬ জন পোপ এ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। অর্থাৎ বর্তমান পোপ মহোদয়ই ২৬৬তম পোপ যিনি এখনো দায়িত্ব পালন করছেন। ২৬৬ জন পোপের মধ্যে এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৯৬ জন পোপই নির্বাচত হয়েছেন বৃহত্তর রোম থেকে। এর মধ্যে ৮৮ জনই আবার রোম নগরী থেকে। দি¦তীয় সর্বোচ্চ ফ্রান্স থেকে ১৬ জন, গ্রীস থেকে ১৫ জন, জার্মানী থেকে ৮ জন, সিরিয়া থেকে ৬ জন,  আফ্রিকা ও ইস্রায়েল থেকে ৩ জন করে এবং ইংল্যান্ড, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ড, পোল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া ও আর্জেন্টিনা থেকে একজন করে পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।

পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখার সাথে সাথে বাংলাদেশ সফরকারী তৃতীয় পোপ হিসাবে তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে নাম লেখাবেন। এর আগে পোপ ষষ্ঠ পল ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থান) ভোলা, মনপুরা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ ইত্যাদি স্থানে ঘটে যাওয়া প্রলংকরী সাইকোনে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর জন্য ঢাকায় যাত্রা বিরতি করেন। সেখানে জেনারেল ইয়াহিয়া তার সাথে দেখা করেন এবং প্রচুর খ্রীষ্টভক্তও বিমান বন্দরে উপস্থিত হয়ে পুন্যপিতাকে স্বাগত জানান। তিনি সাইকোন রিলিফ ফান্ডে দুই লক্ষ ডলার ডোনেশন প্রদান করেন। এরপর ১৯৮৬ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল বাংলাদেশে এক পালকীয় ও রাষ্ট্রীয় সফর করেন।

বাংলাদেশে পোপের সফরের সংক্ষিপ্ত কার্যক্রম

পোপ মহোদয় তার বাংলাদেশ সফরে সাভার জাতীয় স্মৃতি সৌধে পুষ্প-স্তবক অর্পণ ও মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবদেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’র প্রতিকৃতি ও যাদুঘর পরিদর্শন ও শ্রদ্ধা নিবেদন, বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের সাধারন খ্রীষ্ট ভক্তের (অনুমেয় ১,৩০,০০০) জন্য মহাখ্রীষ্টযাগ অর্পন ও ১৬ জন বাংলাদেশী যুবক (ডিকন) কে অভিষেক প্রদান, যুব সম্প্রদায়ের সাথে নটরডেম কলেজে সাক্ষাৎ ও বানী প্রদান, তেজগাঁও গীর্জা সংলগ্ন প্রতিবন্ধীদের সাথে, বিভিন্ন প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে এবং বিপশ মহোদয় ও বিশেষ নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন।

খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের বিশ্বাস পোপ মহোদয়ের এ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি আরো বৃদ্ধি পাবে, মানবিকতা প্রস্ফুটিত হবে, অন্যয্যতা দূর হবে, মানবিক আচরণ বৃদ্ধি পারে এবং সম্প্রদায়িক সম্পৃতি বজায় থাকবে। সার্থক হোক পোপ মহোদয়ের বাংলাদেশ সফর।

লেখক: উন্নয়ন কর্মী।

Saul_boiragee@yahoo.ca

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts