সাহিদ সিরাজী
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু, হাজারো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রিয়মূখ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার জিবি কলেজের তৎকালীন ছাত্রসংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) সঞ্জয় পাল। মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাসের পাতায় বহু ভারতীয় বীরসন্তানের নাম লিপিবদ্ধ হলেও ঠাঁই হয়নি এই বন্ধুর, স্বাধীন বাংলাদেশের কোনো সরকারই মনে রাখেনি তাকে। প্রজন্মের সন্তানদের কাছে পৌছায়নি স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে কী অপরিসীম ত্যাগ ও সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসেন এই সঞ্জয় পালরা।
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী দল আওয়ামীলীগ সরকার কয়েক বছরপূর্বে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের মৈত্রী সম্মাননায় ভূষিত হলেও সেই তালিকায় স্থান পাননি সঞ্চয় পালের মত অনেকে। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলিতে মুক্তিবাহিনীর সদস্য ও লাখো যুদ্ধ শরণার্থীদের সহায়তায় সর্বস্ব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন তৎকালীন এই ছাত্রনেতা। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ এমরানুর রেজা জানান, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা স্বাধীনতা সংগ্রামে মহান মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের সম্পৃক্ত করার জন্য ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে গিয়ে যখন আশ্রয় গ্রহণ করছিল, তখন আমিও সেই দলে ছিলাম। জনপ্রিয় ছাত্রতো সঞ্জয় পাল তখন আগরতলার ঐতিহ্যবাহী জিবি কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) ছিলেন।
তিনি বলেন, সঞ্জয় পাল বাংলাদেশের মুক্তিপাগল মানুষদের দেখে কলেজের অন্যান্য ছাত্রবন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের সহযোগিতায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি জিবি কলেজ ছাত্রাবাস তাৎক্ষনিক খালি করে দেন এবং আমাদের কখন কী করতে হবে তা নিয়ে ব্যাকুল হয়ে পড়েন। তাঁর নেতৃত্বেই ছাত্র সমাজ পাশে দাঁড়ানোর ফলে আমাদের ভারতে থাকা খাওয়া ট্রেনিং সব কিছুই সহজ যায়।
মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ এমরানুর রেজা আরও বলেন, সঞ্জয় পালদের মত উদার মানবিক বোধ সম্পন্ন মানুষদের জন্য আমেদের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। তাদের সহযোগিতা না পেলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কীভাবে পরিচালিত হতো তা জানিনা। কিন্তু আমাদের কোন সরকারই সঞ্জয় পালের মত বীরবন্ধুদের সম্মানই দেয়নি। বর্তমান সরকার সম্প্রতি কিছু বিদেশী বন্ধুদের সম্মান জানালেও তাদের মাঝে সঞ্জয় পাল, ত্রিপুরার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সচীন সিং, জিবি কলেজের অধ্যাপক সত্যরঞ্জন ভট্টাচার্যের মত মানুষরা নেই। এটি পরিতাপের।
এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী সচিং সিং নিঃসন্তান থাকায় বাংলাদেশের মানুষকে নিজের সন্তানের ন্যায় খাওয়া-থাকার ব্যবস্থা করেছেন। অধ্যাপক সত্যরঞ্জন ভট্টাচার্য কলেজ ছুটি ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়শিবির গড়ে তুলেন। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। সেই বীরবন্ধুরা অনেকেই আজ বেঁচে নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বহু মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু সঞ্জয় পাল আজও কোন মুক্তিযোদ্ধা বন্ধুকে পেলে সহযোগিতা করতে কৃপণতা করেন না। তিনি ত্রিপুরা থেবে প্রকাশিত প্রভাবশালী দৈনিক সংবাদের অন্যতম কর্ণধার। একইসঙ্গে আইনপেশায় নিয়োজিত এই ব্যক্তি দুই কৃতি সন্তানের জনক। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের ৪৬ তম বার্ষিকীতে বীরমুক্তিযোদ্ধারা সরকারের কাছে দাবি তুলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বিদেশি বন্ধুদের সম্মননা প্রদানের তালিকা যেন আরও দীর্ঘ করা হয় এবং সেখানে যেন এই সঞ্জয় পালদের মত বীরবন্ধুদের যথাযথ সম্মানটুকু জানানো হয়।