বিডি মেট্রোনিউজ ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন সাংবাদিক আলতাফ মাহমুদের দুই পায়ের পর দুই হাতও শক্তিহীন হয়ে পড়েছে।
তার স্ত্রী তাহমিনা মাহমুদ মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, “স্পাইনাল কর্ডে সমস্যা থেকে তার দুই পা অবশ হয়ে গেছে। গতকাল রাত থেকে তিনি হাত দুইটি উঠাতে পারছেন না, শক্তি পাচ্ছেন না। বাম হাতে সেন্স নেই। ডান হাতেও শক্তি একেবারেই কমে গেছে।
“ডাক্তারদের বিষয়টি জানিয়েছি। তারা বলেছেন, এটা স্পাইনাল কর্ডের সমস্যার প্রতিক্রিয়া। আমি খুবই দুশ্চিন্তায় মধ্যে আছি।”
অশ্রুসজল কন্ঠে সাংবাদিক আলতাফ মাহমুদ নিজেও জানালেন তার দুই হাত অবশ হওয়ার কথা। তবে সুস্থ হয়ে আবার কলম ধরার আশা ছাড়েননি এখনও। “আমি লিখতে চাই। হাতে লেখার শক্তি পাচ্ছি না। কলম ধরতে পারছি না।”
ঘাড়ে ব্যথা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিএসএমএমইউতে ভর্তি হন ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) আওয়ামী লীগ সমর্থিত অংশের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ।
স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়ার তত্ত্বাবধায়নের তার চিকিৎসা চলছে। আগামী বৃহিস্পতিবার তার মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা রয়েছে।
সত্তর দশকে সাংবাদিকতা পেশায় আসা আলতাফ মাহমুদ দীর্ঘদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বড় বড় সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহ করেছেন। বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতেও তাকে দেখা গেছে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের জন্ম ইতিহাস, চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠের জনসভায় শেখ হাসিনার ওপর গুলিবর্ষণসহ অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী আলতাফ মাহমুদ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “১৯৭৫ সালে যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাপতে গণমাধ্যম ভয় পেত, তখন আমি বঙ্গবন্ধুর ছবি বুকে নিয়ে সাহস করে সাপ্তাহিক খবরে প্রকাশ করেছিলাম।’’
সাংবাদিক আলতাফ মাহমুদ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নন। ফলে চিকিৎসার খরচ জোগাতে পরিবারকে বেগ পেতে হচ্ছে। প্রতিদিন ১০/১২ হাজার টাকার ওষুধ লাগছে বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী।
চিকিৎসক কনক কান্তি বড়ুয়া জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার তার অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
“মেডিকেল বোর্ডেরও সভা হয়েছে। রোগীর স্পাইনাল কর্ডের সমস্যার পাশাপাশি হৃদযন্ত্রে তিনটি রিং পড়ানো রয়েছে, আছে ডায়াবেটিক সমস্যা। অস্ত্রোপচারের আগে সবকিছু সমন্বয়ের কাজ এখন চলছে।”
এদিকে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসানসহ চিকিৎসকদের একটি দল বিকালে সাংবাদিক আলতাফ মাহমুদকে দেখতে যান। এ সময় উপাচার্য তার চিকিৎসার বিষয়াদি তদারকি করেন।
এর আগে দুপুরে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু অসুস্থ আলতাফ মাহমুদকে দেখতে হাসপাতালের ৩১১ নম্বর কেবিনে যান। মন্ত্রী তার চিকিৎসার খোঁজ নেন।
এ সময় তথ্য সচিব গোলাম মতুর্জা, সাংবাদিক স্বপন দাশ গুপ্ত, মধুসুদন মণ্ডল, সৈয়দ আখতার ইউসুফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীও চীন থেকে ঢাকায় নেমেই অসুস্থ সাংবাদিক আলতাফ মাহমুদকে দেখতে যান। বিএফইউজের মহাসচিব ওমর ফারুক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ কার্তিক চ্যাটার্জি তার সঙ্গে ছিলেন।
দুপুরে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদও এই সাংবাদিক নেতাকে দেখতে হাসপাতালে যান।