বড় হয়ে তুমি কী হতে চাও
আমরা প্রায়ই ছোট ছেলেমেয়ে কিংবা ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞাসা করি, ‘বড় হয়ে তুমি কী হতে চাও?’ উত্তরে কেউ বলে ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, পাইলট… আরও কত কী!
আবার কথাটা যদি অন্যভাবে ঘুরিয়ে বলা হয়, ‘বড় হয়ে তুমি কী কী পেতে চাও?’ তখন উত্তরে কেউ বলবে বাড়ি, গাড়ি, অনেক অনেক টাকা। এমন আরো অনেক কিছু যা ভোগ বিলাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। অর্থ, বিত্ত-বৈভব অর্জন কিংবা লক্ষ্য স্থলে পৌঁছানোর জন্য তাদের নিরলস সাধনার হয়তো অভাব থাকে না। কিন্তু কেউই বলে না, ‘আমি বড় হয়ে ভালো মানুষ হতে চাই।’ এজন্য অভিভাবকদেরও দায়ী করা যায়। কেননা অনেক সময় তাদেরও ন্যায়-অন্যায়, বিচার-বিবেচনা করার বিবেক বুদ্ধি লোপ পায়। যে কারণে ভালো মানুষ হবার সাধনা, এ জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা আজকাল সমাজে বিরল ঘটনা।
পৃথিবীতে আমাদের জন্ম নির্দিষ্ট
পৃথিবীতে আমাদের জন্ম নির্দিষ্ট। কিন্তু আমরা কখন মৃত্যুমুখে পতিত হবো- কেউ জানি না। তবে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। এ কথা সবার জানা। আমরা যত বড় হই না কেন, আকাশ বা মাটি ভেদ করে লুকিয়ে থেকেও মৃত্যু থেকে পালিয়ে থাকতে পারব না। প্রতিটি জীবনের অবশ্যই মৃত্যুর আস্বাদন গ্রহণ করতে হবে। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীকে একটি নিদিষ্ট সময়ের জন্য সৃষ্টিকর্তা প্রেরণ করেন এবং সময় শেষ হয়ে গেলে আবার তার নিকট ফিরে যেতে হবে- এটাই বাস্তব এবং নির্মম সত্য। অতীত হলো স্মৃতি, ভবিষ্যত অনিশ্চিত আর বর্তমান হলো বাস্তব। কাজেই বর্তমান সময়টাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা গেলেই আমরা বড় হয়ে কিছু একটা হতে পারবো।
সমস্যা নিয়েই মানুষের জীবন
সমস্যা নিয়েই মানুষের জীবন, কেউ নানাবিধ সমস্যার বাইরে নয়। তবে একেক জনের সমস্যা একেক রকম। কারো হয়তো অর্থের সমস্যা, কেউ হয়তো শারীরিক সমস্যায় ভুগছে, আর কারো রয়েছে মানসিক সমস্যা। তবে সমস্যা নিয়ে হতাশায় না ভুগে তা জয় করে সামনে এগিয়ে চলাই হচ্ছে জীবন। আমাদের ছেলেমেয়েরা, ছোট ছোট ভাইবোনেরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক কিংবা অন্য কোনো পেশায় নিয়োজিত থেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাড়ি, গাড়ি, অর্থবিত্ত অর্জন করবে তাতে দোষের কিছু নেই। তবে সে যদি মানুষের মতো মানুষ না হতে পারে, তার মধ্যে যদি সততা, বিবেকবোধ জাগ্রত না হয়, সে যদি নিজের জন্য যেটা চিন্তা করে অন্য মানুষের জন্য সে একই রকম চিন্তা করতে না পারে, তবে জীবনটাই বৃথা হয়ে যাবে।
জীবনের উদ্দেশ্য হোক সময়ের কাজ সময়ে করা
পরিশেষে বলব, প্রতিটি ছেলেমেয়ের জীবনের উদ্দেশ্য হোক সময়ের কাজ সময়ে করা। সততা, মানবিকতা, মনুষত্ব, বিবেককে জাগ্রত করে মিথ্যা, অসততা পরিহার করে, যে যেই পেশায় নিয়োজিত হোক না কেন পেশার প্রতি শতভাগ শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা রেখে মানুষের সেবা করা উচিত। প্রকৃতপক্ষে আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সেবার মাধ্যমে, ক্ষুদ্র ব্যক্তি স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে মানুষের মতো মানুষ হওয়া। ভালো মানুষ হওয়া।
ডা. মো. নাজমুল হক মাসুম : সহযোগী অধ্যাপক, জেনারেল ও কোলোরেকটাল সার্জন, ঢামেক