গোবিন্দ চন্দ্র বাড়ৈ
জন্ম পরিচয় প্রত্যেকেরই অবশ্যই জ্ঞাতব্য বিষয়
প্রত্যেকেরই গৌরব, গর্ব
জন্ম পরিচয়হীনের পরিচয় বেজন্মা,
তুমি আমার জন্ম পরিচয়টা জানিয়ে দিও সবাইকে, মা ।
মানুষ খুজেঁ পেতে চাচ্ছে, খুঁজে নিচ্ছে সবার, সবকিছুর জন্ম পরিচয় । প্রতিটি মানুষের কাছে নিজের জন্ম পরিচয় গৌরবের, গর্বের; সে ধনী হোক, গরীব হোক, নগন্য হোক, গণ্যমান্য হোক- সবাই । প্রতি প্রতিষ্ঠানও তার জন্ম পরিচয়টি ধরে রাখার দাবি রাখে । আসলে মানুষেরই উচিত এ পরিচয় ধরে রাখা, সবার কাছে পরিচয়টি তুলে ধরা। আমিও এখানে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের জন্ম পরিচয় তুলে ধরতে চাচ্ছি, তার পরিচয়টি চিরন্তন করে রেখে যেতে চাচ্ছি ।
প্রতিষ্ঠানটি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নাম সনমান্দী উচ্চ বিদ্যালয় । ১৯৭৩ সালে যাত্রা এ প্রতিষ্ঠানটির। এ উচ্চ বিদ্যালয়টি কোন ধণাঢ্য ব্যক্তির অনুদানে প্রতিষ্ঠিত নয় । প্রতিষ্ঠিত ইচ্ছা ও প্রচেষ্টার সমন্বয়ে এবং কিছু সাধারণ মানুষ তথা যুব-কিশোরদের পরিশ্রম ও ত্যাগের ফলশ্রুতিতে । ইতিহাসটি বলা যাক ।
আমি তখন মাদারীপুর নাজিমউদ্দীন কলেজের বিএসসি ক্লাসের ছাত্র । দরিদ্র পিতা বাঞ্ছারাম বাড়ৈ ও মাতা প্রিয়বালা বাড়ৈ-র পাঁচ পুত্র ও দুই কন্যার মধ্যে আমি জ্যেষ্ঠ । পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে সাংসারিক কাজ ও টিউশনী করলেও সামজিক কাজ কর্ম করা ছিল আমার মনের প্রশান্তির খোরাক । এসব কাজকর্মের মধ্যে ছিল ছুটির দিনে গ্রামের রাস্তাঘাট ঘুরে ঘুরে দেখে তা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা, বৃষ্টিতে রাস্তার কোন অংশ কর্দমাক্ত হলে সেখানে মাটি দিয়ে উচুঁ করে দেয়া, সন্ধ্যার পরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছোটদের পড়াশুনা বা তাদের দৈনন্দিন কাজকর্মের খোঁজ খবর নেয়া ইত্যাদি । আজও ভাবতে আশ্চর্য্য হই যে এ সব ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের মা-বাবারাও তাদের সন্তানদের ভালো-মন্দকৃত কর্মের কথা হাসিমুখে বলে দিত আমাকে, প্রয়োজনে অনুযোগ-অভিযোগও করত । এসব কিছু করে অবশেষে আমার পড়াশুনা ।
যে কথা বলছিলাম ১৯৭২ সন । আমি বিএসসি ক্লাশের ছাত্র । সদ্য স্বাধীন দেশ । পুরোদমে চলছে দেশ পূর্ণগঠনের কাজ । ইউনিয়ন পরিষদের আমাদের এলাকার সদস্য করা হয়েছে ডাঃ (হোমিও) নিত্যানন্দ ঘরামী মহাসয়কে । আমাকে ছাড়া তিনি কোন কাজ করবেন না । কাজেই তার সমস্ত কাজের সহযোগীতাও করতে হত আমাকে । গ্রামের জমি, মাটি এসবের মাপ-জোখ আমাকে করতে হত ।১৯৬৮ সন থেকেই যখন আমি মাধ্যমিক পরীক্ষা দেই । ১৯৭৩ সনে বিএসসি পরীক্ষার পর সদ্য প্রতিষ্ঠিত কালকিনি মহাবিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকতাও করতে হয়েছিল কিছুদিন সেখানকার অধ্যক্ষের অনুরোধে । বিভিন্ন কারণে গ্রামের মানুষের একটি গভীর আস্থার স্থলে পরিনত হতে পেরেছিলাম আমি । ফলে এলাকার সব ভালো মন্দের খবর এসে যেত আমার কাছে ।
আরেকটি তথ্য এখানে উল্লেখ করে রাখা যেতে পারে । আর তা হলো – তখন আমাদের এলাকার যুব তরুণদের একটা অংশ আমার অনুসারী হয়ে উঠেছিল । তাদের নিয়ে আমি গ্রামের কাজ করতাম । একবার আমাদের গ্রামের সঙ্গে বড় রাস্তার ভেঙ্গে পড়া বড় পুল তৈরি করে ফেলেছিলাম বাঁশ দিয়ে এই তরুণ যুবা বাহিনী নিয়ে ।
আরেকটি সত্যও সকলের জ্ঞাতার্থে উল্লেখ করে রাখা দরকার । সনমান্দী গ্রামটি বেশ ছোট । এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও উচ্চ বিদ্যালয় মহাবিদ্যালয়গুলোর দূরত্ব সাড়ে তিন মাইল থেকে চার মাইলের মতো । রোদ-বৃষ্টি ভেঙ্গে কাঁদা-পানি পেরিয়ে এ দূরত্ব অতিক্রম করেই আমাদের যেতে হত হাইস্কুল – কলেজে ।
মেয়েদের দুর্ভাগ্য ছিল আরও অনেক বেশী । প্রাথমিক বিদ্যালয় অতিক্রম করার পর মেয়েদের উচ্চবিদ্যালয়ে পা রাখতে হলে প্রায় পাঁচ মাইল দূরের গার্লস হাইস্কুলে । ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরোনোর পর মেয়েদের ঢুকতে হত হেসেলে অথবা বসতে হত বিয়ের পিড়িতে। এ অবস্থার মধ্যে আমাদের গ্রামের একটি মেয়ে ভর্তী হয়েছিল ঐ গার্লস হাইস্কুলে । শত কষ্টের মাঝেই তার স্কুলে যাওয়া আসা । একদিন আমার কাছে খবর এলো – ঐ মেয়েটি স্কুল থেকে ফিরছিল অঝোর বৃষ্টির মধ্যে । সঙ্গে ছাতাও ছিল না । মেয়ে বলে ভিজা কাপড়ে কোথাও দাঁড়ানোরও সুযোগ ছিল না । গোটা পথই তাকে হেটে আসতে হয়েছিল মুসলধারার বৃষ্টির মধ্যে । খবরটি শোনার পর থেকেই ভাবতে শুরু করলাম – এলাকার মেয়েদের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা কিভাবে করা যায় । খুজেঁ এলাকায় একটা উচ্চ বিদ্যালয় করা ছাড়া অন্য কোন পথ খুজেঁ আর পেলাম না ।
বৃষ্টি ভেজা এক সন্ধায় সূর্য্য যখন শুভসন্ধ্যা বলার জন্য উঁকি মারছিল তখন আমরা যুব কিশোরের দল কেরম খেলা বা গল্প গুজবে মেতে ছিলাম মতি ভাই (আব্দুল মতীন হাওলাদার) দের বাড়িতে । আসলে সন্ধ্যাবেলার স্বল্প সময়ের এ আড্ডাটা ছিল আমাদের নিত্যদিনের সাথী । ওখানেই আমি বললাম – আমাদের গ্রামে একটা হাইস্কুল করতে হবে । না হলে মেয়েদের পক্ষে এতে দূরের গার্লস স্কুলে গিয়ে পড়াশুনা করা সম্ভব নয় । এছাড়া আমাদের গ্রাম বা আশপাশের গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষদের সন্তান, যারা প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর হাইস্কুলে ভর্তি হতে সাহস পায় না – তারাও পড়াশুনার সুযোগ পাবে। আমার কথা শেষ হতে না হতেই সমস্বরে উচ্চারণ – গ্রামে স্কুল হবে । আপনি বলে দেন – আমাদের কি করতে হবে । খুবই খুশী হলাম, শক্তি পেলাম এগিয়ে যাবার ।
এবার ভাবনা কি ভাবে শুরু করব । সিদ্ধান্ত নিলাম ১৯৭৩ সনেই শুরু করব ৬ষ্ঠ শ্রেণীর কাশ । কাশ হবে প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে, মর্নিং শিফট্ – এ । প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন আমাদেরই এক বড় ভাই আব্দুর রব শিকদার । তার কাছে প্রস্তাব রাখায় খুব খুশী হয়ে তা গ্রহণ করলেন । তিনি সাহস ও জোগালেন এগিয়ে যাবার ।
১৯৭৩ সনের জানুয়ারী মাসেই নেমে গেলাম নিজ গ্রাম সহ আশপাশের গ্রামে ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহের জন্য । বুঝতে পারলাম – শুধু নিজগ্রামই নয় পার্শ্ববর্তী সব গ্রামের মানুষেরও ভরসা আছে আমার ওপর । বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী পেয়ে গেলাম । এর মধ্যে প্রতিশ্রুতিশীল ছাত্র-ছাত্রীও ছিল কয়েকজন । সবার নাম আজ আর স্মরণ করতে পারছিনা । একাজের জন্য একসঙ্গে যারা এগিয়ে গিয়েছিলাম তার মধ্যে ছিল আব্দুল মতীন হাওলাদর, আব্দুল হাই হাওলাদার, আব্দুল মতীন খান, মাসুদুর রহমান খান, আতাউর রহমান খান, মজিবর রহমান খান সহ অনেকেই ।
আমাদের শ্রদ্ধেয় মওলানা মনির উদ্দীন খান সাহেব তার কাছারীঘর ছেড়ে দিয়েছিলেন অফিসিয়াল কাজকর্ম করার জন্য । পরবর্তীকালে দূর থেকে আসা শিক্ষকদের থাকার ব্যবস্থাও তিনি করে দিয়েছিলেন ঐ ঘরে । শ্রী সুবোধচন্দ্র মুজমদারের নাম রাখা হয়েছিল প্রধান শিক্ষক হিসাবে । শিক্ষকতা করছিল আব্দুল মতীন হাওলাদার, আব্দুল হাই হাওলাদার, আব্দুল মতীন খান, আতাউর রহমান খান । আমি ও পড়াতাম। সবচেয়ে আশ্চার্যজনক ঘটনা ঘটল – আমার উদ্দেশ্যের কথা শুনে বেশ দূরের মিনাজদি নামক একগ্রামের অনিসুর রহমান ভাই বিনা বেতনে শিক্ষকতা করার প্রস্তাব করল । তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল মওলানা মনির উদ্দীন খান (মাসুদূর রহমান ও ওয়াহিদূর রহমানের পিতা) সাহেবের কাছারী ঘরে । মওলানা মনির উদ্দীন খান সাহেবের সবচেয়ে বড় অবদান হল ওয়াহিদূর রহমানের মত প্রতিশ্রুতিশীল সন্তানকে অনিশ্চিত এ বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছিলেন কেবল আমার ওপর ভরসা করে । বলে রাখা ভালো – এই উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য অবদান সনমান্দী গ্রামসহ ছোট বনগ্রাম, কুন্তিপাড়া, করদি, ধূলগ্রাম, খাতিয়ালসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর অনেক মানুষেরই । তাদের সবার কথা বলা সম্ভব নয় ।
প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে কাস শুরু করে একটা অসুবিধার সম্মুখীন হলাম । তা হলো – ছোট ছোট ছেলে মেয়ে যারা বই-খাতা কাশরুমে রেখে খেলা-ধুলার উদ্দেশ্য নিয়ে সকাল সকাল স্কুলে আসত তারা দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াত । এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য ভিন্ন পথের চিন্তা করলাম । ঠিক করলাম স্কুল মাঠের পূর্বদিকে একটা ঘর করব । যে ভাবনা সে কাজ । বসন্তকালের এক পূর্ণিমারাতে আমার দলবলকে বললাম ওড়া – কেদাল নিয়ে আসতে । রাতে মাটিকেটে ভিটি তৈরি করলাম । এবাড়ি ওবাড়ি থেকে বাঁশ খড় পাটখড়ি চেয়ে – চিন্তে এনে তৈরি করলাম একচালা ঘর । পাশর্^বর্তী বাড়িঘর থেকে আনা হলো চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চি । প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেও আনা হলো টুল, বেঞ্চি । কাশ শুরু হলো সেখানে । এবার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র যারা দূরের স্কুলে পড়ত, তাদের অভিভাবকদের কাছে গেলাম । পেয়ে গেলাম ভালো কয়েকজন ছাত্র। শ্রদ্ধেয় মওলানা মনিরউদ্দীন খান সাহেব সহযোগীতার হাত বাড়ালেন এবারও । তার ছোট ছেলে এবং মেধাবী ছাত্র ওয়াহিদূর রহমান খানকে নিয়ে আসলেন এ স্কুলে । কুন্তিপাড়ার ফারুকখান নামে একজন ভালো ছাত্রও ভর্তী হয়েছল বলে মনে পড়ে । এসব কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়াশুনা করে বিএসসি পরীক্ষা শেষ করলাম । এসময়ে কালকিনি কলেজের কাশ শুরু করা হয়েছে কালকিনি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে ঘর করে । এ কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন আমার শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব । তার অনুরোধ – সেখানে যেন আমি পড়াই । নতুন কলেজ । এক একদিন এক এক বিষয়ের শিক্ষক থাকে না। এসব বিষয় পড়াতে হত । খানিকটা কষ্ট হলেও দুদিকেই সামাল দিতে হচ্ছিল সমান তালে ।
বছর প্রায় শেষ । নতুন বছরে তিনটি কাশ হবে । জায়গা দরকার, দরকার ঘরের । এভাবে তো স্কুল চলে না । গেলাম ইউনিয়ন পরিষদের আমাদের এলাকার সদস্য শ্রদ্ধেয় মোহাম্মদ মোন্তাজদ্দীন হাওলাদারের কাছে । এখানে উল্লেখ্য যে গ্রামের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজের জন্য যা দরকার হত ঐ মোন্তাজদ্দীন হাওলাদার সাহেবই আমাকে দিতেন । তাকে সব বুঝিয়ে বললাম । খুব খুশী হলেন তিনি । ভাগ্য আমাদেরও ভালো । তিনি বললেন – রাস্তার পাশে একটি জায়গা আছে স্কুলের জন্য খুবই উপযোগী । তবে কাগজপত্রে বেশ ঝামেলা আছে । জায়গাটি শেষ পর্যন্ত কে পাবে জানি না । স্কুলের নামে জায়গাটি দিলে স্কুলেরও যেমন খুব ভালো একটা অবস্থান হবে, কারো পক্ষেই ঝামেলা করার কোন সুযোগও থাকবে না । মৌখিক ভাবে তিনি ঐ সময়ই জায়গাটি স্কুলকে দান করলেন। আর আমিও সাদাকালো রং কিনে কুড়িয়ে পাওয়া একটা টিনে লিখলাম – ‘SITE FOR SONMANDI JUNIOR HIGH SCHOOL. আর তা শক্ত একটা কাঠির মাথায় লাগিয়ে পুতে দিলাম ঐ জায়গায় । সবার প্রশংসায় মনে হচ্ছিল স্কুলটি বুঝি দৃশ্যমান হল ঐ জায়গায় ।
জায়গা হল, আমার সাহস বেড়ে গেল । চাঁদা তুলে হলেও ঘর করা যাবে । এবারও এগুলাম ভিন্ন পথে । আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান তখন আমার এক ছাত্র – মজিবর রহমান খান । আমি ওকে সব বললাম এবং দাবি রাখলাম একটা ঘর আর প্রয়োজনীয় আসবাব পত্রের জন্য । আমি গর্বিত যে আমার ঐ ছাত্র প্রতিশ্রুতি দিল এ কাজগুলো করে দেবে বলে । ইতি মধ্যে আমি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে মাষ্টার্স (গনিত) এ ভর্তি হয়ে গিয়েছি । আমার অনুপস্থিতিতেও সবকাজ করে দিয়েছিল মজিবর । এবার আমার ছুটাছুটি ঢাকা আর মাদারীপুরের সনমান্দী গ্রামে । ইতোমধ্যে আমরা দূর থেকে আসা আরেকজন শিক্ষককে পেয়েছিলাম, যার নাম ছিল মোহাম্মদ মোতালেব । তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমি । সনমান্দী জুনিয়র স্কুল নামটি আমাদের বেশিদিন রাখতে হয়নি । নতুন নাম করণ করলাম সনমান্দী উচ্চ বিদ্যালয় ।
আমাদের সে স্কুলে এখন টিনের ঘরের পাশে আছে বিল্ডিং, আছে বড় লাইব্রেরীও । উপযুক্ত শিক্ষকগণ শিক্ষাদান করেন । শিক্ষকগণ ও হিতাকাঙ্খীদের প্রচেষ্টায় হয়েছে এমপিও ভুক্তও । বাহির থেকে দেখতে ও বেশ সুন্দর হয়েছে স্কুলটি । আমি তৃপ্ত একটা কারণে যে মেয়েরা লেখা পড়া শিখতে পারছে কম কষ্টে । এখানে ছাত্র সংখ্যা অনেক । পরীক্ষার ফলাফল ও মন্দ নয় । তবে একটা অতৃপ্তি রয়েই গেছে । আর তা হলো – স্কুল থেকে আমার কাছে বিজ্ঞানের হাতে কলমে শিক্ষা (Practical) এর জন্য কিছু সরঞ্জাম দাবি করা হয়েছিল – তা আমি দিতে পারি নাই । পাশাপাশি খেলাধূলার কিছু সরঞ্জামের দাবি ছিল । যার কিয়দাংশ মাত্র আমি পূরণ করতে পেরেছিলাম, তাও বোধ হয় আর অবশিষ্ট নাই ।
আমি খেলাঘরের একটা শাখা যেমন স্থাপন করেছি, সনাতন সমাজকল্যাণ সঙ্ঘ নামের একটা সামাজিক সংগঠনও গড়েছি যা এখনও কাজ করছে । গ্রামে খেলাধূলার প্রসারের জন্য গড়েছিলাম একটা ক্লাবও, যা আমি গ্রাম থেকে আসার পর বন্ধ হয়ে যায়। সততা ও সৎ প্রচেষ্টার কারণে পেশাগত দিক থেকেও আমার একটা সুনাম আছে বলেই মনে হয় । পড়াশুনার ফাকে ফাকে লেখা লেখির প্রচেষ্টাও ছিল সেই ছাত্র জীবন থেকেই । দৈনিক সংবাদের খেলাঘরের পাতা সহ বিভিন্ন সময় ছড়া, কবিতা, বিভিন্ন নামে আর্টিক্যালও লিখতাম । কেমন করে উড়ছে মানুষ – কিশোর যুবকদের জন্য উড়োজাহাজের ওপর বাংলায় আমার লেখা বইটিই বোধ হয় প্রথম বই । এছাড়া পাঁচ মিশালী পদ্যাবলী, ছোটদের মজার ছড়া, রন্টির ফন্টি পুতুল সহ আরও বই প্রকাশিত হয়েছে । আরও কয়েকখানা বই প্রস্তুত হচ্ছে প্রকাশের জন্য । এসব সত্যেও আমি সমাজে পরিচিত হতে চাই সনমান্দী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে । কারণ এটি যে শিক্ষা প্রসার, তথা নারী শিক্ষা প্রসারের আন্দোলনেরই অঙ্গ । পরিচিত হতে চাই সমাজ কর্মী হিসাবে ।
এ বিদ্যালয়টির উত্তরোত্তর উন্নয়নের জন্য সবার সহযোগীতা কামনা করছি । উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি -এখানে উচ্চ মাধ্যমিক খুলে দেবার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে।
e-mail: gchandra1953@gmail.com