বিডি মেট্রোনিউজ ॥ সন্ত্রাসবাদ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অপরাধের কারণে বাইরে থেকে ‘বিপুল সম্পদ’ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে জানিয়ে সেগুলোর দিকে বিশেষ নজর দিতে শুল্ক গোয়েন্দাদের আহ্বান জানিয়েছেন রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।
সাম্প্রতিককালে দেশে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ সোনা ও কোকেনের চালানকে ‘ইললিসিট ফিন্যান্সিয়াল ফ্লো’র (অর্থ বা অর্থ সম্পর্কিত পণ্যের অবৈধ প্রবাহ) সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বুধবার রাজধানীতে এক কর্মশালার উদ্বোধনীতে নজিবুর রহমান বলেন, “মনে করা হয় মানি লল্ডারিংয়ে কেবল দেশ থেকেই সম্পদ যায়। দেশেও ওই টাকাগুলো আসতে পারে, এজন্য এসব দিকে নজর দিতে হবে।”
অর্ধশত শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তার অংশগ্রহণে ‘বাণিজ্যভিত্তিক অর্থপাচার প্রতিরোধ’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী এই কর্মশালার আয়োজন করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
গত বছরে বিশ্ব অর্থায়ন সম্মেলনে ‘ফাইন্যান্সিং ফর ডেভেলপমেন্ট’ ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে জানিয়ে কর্মশালায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “ওই ঘোষণায় মুদ্রাপাচারকে ‘জটিল সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে সবাই মিলে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
“ঐতিহ্যবাহী ও সম্পদশালী দেশগুলো তাদের ইমিগ্রেশনের ভেতরে এমন সব চমকদার সুযোগ তৈরি করে, যা উন্নয়শীল দেশ থেকে মুদ্রা ও সম্পদ পাচারের পরিবেশ তৈরি করে। এখন থেকে তারাও আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধ পালন করে আমাদের সহযোগিতা করবে।”
এনবিআর চেয়ারম্যান তার সংস্থার সামর্থ ‘আগের চেয়ে বেড়েছে’ মন্তব্য করে রাজস্ব অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে জানান।
কর্মশালায় এনবিআর চেয়ারম্যান অপরাধীদের ‘সুযোগ না দিতে’ শুল্ক গোয়েন্দাদের ‘আরও চৌকস’ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রয়োজনে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার পরামর্শ দেন।
‘অসৎ ব্যবসায়ী’দের তালিকা হচ্ছে জানিয়ে নজিবুর বলেন, “রাজস্ব বোর্ড বড় বড় কোম্পানির ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স তৈরি করবে-এমন ঘোষণায় অনেকেই ভয় পেয়েছেন। সৎ ব্যবসায়ীরা অবশ্য এক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছেন।
“বাংলাদেশে সৎ ব্যবসায়ীদের সংখ্যাই বেশি। তারা সরকারকে সাহায্য করে থাকেন। অসৎ ব্যবসায়ীদের সংখ্যা গুটিকয়েক। তাদের তালিকা রাজস্ব বোর্ডের কাছে আছে। তালিকা করার কাজ চলমান প্রক্রিয়া।”
রাজস্ব বোর্ডকে চ্যালেঞ্জ করার নজির নেই বলেও মন্তব্য করেন বোর্ডের এই চেয়ারম্যান।
কর্মশালায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মঈনুল খান ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই)’র সাম্প্রতিক এক জরিপকে ‘মুদ্রা পাচারের ইন্ডিকেশন’ বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “এটার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে, তারপরও বোঝা যাচ্ছে মুদ্রা পাচারের পরিমাণ অনেক। এজন্যই এটি প্রতিরোধ করা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।”
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশোধনীর প্রসঙ্গ টেনে মহাপরিচালক বলেন, “দুদক আইনের সংশোধনীতে যে ২৮টি ‘প্রেডিকেট অফেন্স’ আছে, তার মধ্যে ছয়টি কাস্টমসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
“জিএফআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮৫ ভাগ মানি লন্ডারিং হয় ট্রেড বেসড। এজন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে সরাসরিভাবে ক্ষমতায়িত করা হয়েছে। আগে এটা কেবল দুদক ব্যবহার করতো। সংশোধনীর পর তা কাস্টমসের হাতেও চলে এসেছে।”