ডেভ হোয়াটমোর এখনো বাংলাদেশকেই ভালোবাসেন

বিডি মেট্রোনিউজ, খুলনা বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজের কারণে ডেভ হোয়াটমোর এখন খুলনায়। জিম্বাবুয়ের বর্তমান ও বাংলাদেশের সাবেক কোচ ডেভ হোয়াটমোর গিয়েছিলেন তার প্রয়াত প্রিয় ছাত্র মানজারুল ইসলাম রানার বাড়িতে।
২০০৭ সালের ১৬ মার্চ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন মানজারুল ইসলাম রানা এবং সাজ্জাদুল হাসান সেতু। তখন বাংলাদেশ দলেই কোচ ছিলেন হোয়াটমোর। আজকের মাশরাফি আর রানাকে তিনি একই চোখে দেখতেন। গতকাল রানার বাড়িতে গিয়ে সে স্মৃতিতেই ফিরে গেলেন। ‘সে ছিল ড্রেসিংরুমের হাসি একটি মুখ। দারুণ অলরাউন্ডার ছিল সে।’
রানার সেই বিছানাতে বসেই হোয়াটমোর জানলেন, রানার বড় ভাই থাকেন তার দেশ অস্ট্রেলিয়ায়, আর ছোট ভাই ঢাকায়।
হেলমেট তিনটিতে এখনও বিসিবির লোগোর সেই হাঁ করা টাইগারের ছবিটা জ্বলজ্বল করছে। ম্যান অব দ্য ম্যাচের ট্রফির সারিগুলোও বেশ গোছানো। পরিপাটি ঘরটিতে বসেই ডেভ হোয়াটমোর জিজ্ঞাসা করলেন_ এ খাটটিতে এখন কে ঘুমায়?
উত্তর দিতে গিয়ে শুকনো মুখে জমিলা খাতুন বললেন, ‘এই খাট আমার রানার। ওই ঘুমাতো এখানে। আমি আজও এখানে কাউকে ঘুমাতে দেই না। এটা আমার রানার জন্য। প্রতিদিনই আমি এই বিছানার চাদর পাল্টে দেই…।’ ঘরটিতে আরও একবার চোখ বুলিয়ে হোয়াটমোরই বলতে থাকলেন, ‘আসলে ওকে আমি আজও ভুলতে পারিনি। শুধু মনে পড়ে ওর সেই হাসিটার কথা…। ও বেঁচে থাকলে আজ হয়তো এই বাংলাদেশ দলের হয়েই খেলত। কারণ ওর মধ্যে আমি সেই সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছিলাম।’
হোয়াটমোরের মুখে এ কথাগুলো শুনে যেন আরও গভীর শূন্যতায় ডুবে গেলেন জাতীয় দলের প্রয়াত ক্রিকেটার মানজারুল ইসলাম রানার মা জমিলা খাতুন। ‘আমি জানতাম আপনি আসবেন, আপনি খুলনায় এলে আমার সঙ্গে না দেখা করে যান না…।’
রানার বাবা প্রয়াত হওয়ার পর দোতলা বাড়িটিতে জমিলা খাতুন একাই থাকেন। খুলনায় শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রানার বাড়ি। তাই খুলনায় যখন খেলা হয় তখন জমিলা খাতুন আশায় থাকেন রানার কোনো বন্ধু আজ আসবে বুঝি। এসেও ছিল, মুশফিকুর রহিম দেখা করে গেছেন, মাশরাফিও নিয়মিত ফোন দেন, তারও কাল আসার কথা। ‘একাই থাকি, তবে রানার ছায়া নিয়ে বেঁচে থাকি।
গলা বুজে আসছিল জমিলা খাতুনের। হোয়াটমোরকে রানার পুরনো জার্সিগুলো দেখিয়ে বললেন, ‘সে আপনাকে খুব ভালোবাসত, বলত, মা আমাদের কোচ অনেক ভালো…।’
হোয়াটমোর দেখতে চেয়েছিলেন রানার কবরটি, বাড়ি থেকে একটু দূরে সেখানে তাকে নিয়ে যান জমিলা খাতুন। কবরের সামনে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে বিদায় নেন ডেভ হোয়াটমোর, ‘আবার যদি কখনও খুলনায় আসি… আমি আবারও আসব রানার ঘরটিতে…।’
ডেভ হোয়াটমোর এখনো বাংলাদেশকেই ভালোবাসেন, তার আচরণে এটাই মনে হয় বারবার।
Print Friendly, PDF & Email

Related Posts