আখতার-উজ-জামান ॥ ঘরের ছেলে ঘরেই শোভা পায়। কথাটি চিরন্তন সত্য। এবার এমনই এক আলোচিত অধ্যায়ের পুনারাবৃত্তি ঘটলো। বঙ্গবন্ধু নিজেও কাছের মানুষ দূরে সরে গেলে আবার তাকে বুকে টেনে নিতেন।
বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী ও পরবর্তী অর্থমন্ত্রী প্রয়াত তাজউদ্দিন আহমেদের ছেলে সোহেল তাজকে নিজ দলে ফিরিয়ে তিনি সুন্দরভাবে অলংকৃত করলেন পারিবারিক বন্ধন সৃষ্টি করে। এমনই একটি অধ্যায়ের সূচনা ঘটলো শনিবার রাতেই গণভবনে সোহেল তাজের সঙ্গে তার দুই বোন সিমিন হোসেন রিমি ও মাহজাবিন আহমেদ মিমির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের মধ্যদিয়ে।
শনিবার প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের পরিবারের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কুশলবিনময়ের খবরটি মিডিয়ায় বেশ গুরুত্ব পায়।
তাজউদ্দিন আহমেদের সুযোগ্য সন্তান ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ ২০০৯ সালে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। এরপর তিনি সংসদ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করেন। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বিপুলভাবে বিজয় লাভ করার পর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভায় সোহেল তাজকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। এর পাঁচ মাসের মাথায় ২০০৯ সালে ৩১ মে তিনি পদত্যাগ করেন। কিন্তু তখন তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিন বছর পর ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন সোহেল তাজ। গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসন থেকে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে এ আসন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সোহেল তাজের বোন সিমিন হোসেন রিমি।
যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশে নিশ্চিতভাবেই সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো অর্থনৈতিক অবস্থার পুনরুদ্ধার, আর বঙ্গবন্ধু ও জাতির শেখ মুজিবুর রহমান যথার্থই সে দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদকেই। আজকের ভিন্ন বাস্তবতায় হয়তো চুলচেরা সমালোচনা করা সহজ, এই দায়িত্ব পালনে তাজউদ্দীন ঠিক কতোটা সফল হয়েছিলেন কিন্তু এটাতো অনস্বীকার্য -আন্তর্জাতিক, এমনকি নিজ দলীয় ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে তিনি তার দায়িত্ব নিরলসভাবে পালন করে গেছেন, ১৯৭৪ এ শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত। পদত্যাগে বাধ্য হয়ে ও প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন তাজউদ্দীন তার রাজনীতিকে বিদায় জানাননি, ক্ষোভে অন্ধ হয়ে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেননি।
রাজনীতির ধ্রুপদ শিক্ষা তাঁর ছিলো, তিনি জানতেন তোষামোদী যেমন একজন রাজনীতিবিদের জন্য অপমানজনক তেমনি দলীয় আনুগত্য, বিশ্বস্ততা, ধৈর্য্য ও তার জন্য অপরিহার্য। আর এই ফলশ্রুতিতে তাজউদ্দিন আহমেদের সন্তান সোহেল তাজ।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী হবার পর জনগণ ভেবেছিল তাজউদ্দিন পরিবারের সন্তান দেশকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে পারবে। সে পথে এগিয়েও যাচ্ছিলেন তিনি। আপোষহীন মন্ত্রী হিসেবে অল্পদিনের মধ্যেই নিজের যোগ্যতার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন। শনিবার যেমনটি ঘটেছিল গণভবনে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। হয়তো দেশের সাড়ে ষোল কোটি মনে করবে তানজিম সোহেল আবার হয়তো সেই প্রয়াত তাজউদ্দিনের আহমেদের মতো বাংলাদেশের পুরাতন ও ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সরকারকে আর গতিশীলভাবে কাজ করে দেশের উন্নয়নে পৌঁছে দেবে। যার সূচনা হলো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে।
রাজনীতিতে আর ফিরছেন না বলে সোহেল তাজ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আমরা জানি, এটা তার মনের কথা নয়, হতে পারেনা। শেখ হাসিনাকে ভালবাসেন বলেই তিনি গণভবনে ছুটে গিয়েছিলেন। এটা একটা অন্যটান।শেখ হাসিনাও যে তাকে কতটা স্নেহ করেন ছবি-ই তা বলে দেয় আমাদের। এই সম্পর্ক দূরে থাকতে দেওয়ার মতো নয়। তাই আমরা একদিন ঠিকই তাকে হাসিনার রাজনীতিতে দেখতে পাবো। হয়তোবা তা অচিরেই ঘটতে যাচ্ছে। এবার শুধু অপেক্ষা, কখন সে মাহেন্দ্রক্ষণ।
azamansun@yahoo.com