বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বিশ্বের মুসলমানদের জন্য সপ্তাহে জুম্মাবারের মর্যাদা অন্যরকম। সেই জুম্মাবারেই শুরু হলো দেশে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম রোজা। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সওগাত নিয়ে সারাবিশ্বের মুসলমানের দ্বারে বছর ঘুরে এল এই মাহে রমজান।
সাম্য, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ত্যাগ, সংযম ও আত্মশুদ্ধির মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেছে মাসের ক্ষণ গণনা। স্বাগত হে মাহে রমজান। শাবান মাস বিদায়ে পশ্চিম আকাশে এক ফালি নতুন চাঁদ নতুন সওগাত নিয়ে রমজান মুসলিম ধনী-গরিব, ছোট-বড় সবার ঘরে ঘরে উপস্থিত।
এ মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এ মাসে বেহেশতের দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো তালাবদ্ধ থাকে আর শয়তানকে (তার সহচরদেরসহ) শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়। (বুখারি ও মুসলিম)। চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আরবী মাস শুরু হওয়ায় সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে একদিন আগেই রমজান শুরু হয়ে গেছে।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আর মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীর জন্যই। আল্লাহ’র এই দুনিয়ায় মুমিনদের জন্য মহান আল্লাহর সন্তুুষ্টি অর্জনে রমজান মাস খুবই তৎপর্যপূর্ণ। এই মাসের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি দিবস, প্রতিটি রজনী আমল করা যায়। তাই মাসটি মুসলমানদের জন্য অন্য মাসগুলোর চেয়ে অনেক বেশি নেয়ামতের। এ মাসেই মহান আল্লাহ মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন নাজিল করেছেন; ইসলামের ৫ স্তম্ভের অন্যতম সিয়াম সাধনা তথা রোজা মুমিন-মুসলমানের জন্য ফরজ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেছেন, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের পথপ্রদর্শক ও সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং ন্যায় ও অন্যায়ের মীমাংসারূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। অতএব, তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে অবশ্যই রোজা রাখে’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)।
রমজান মাস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা পৃথক পৃথক বাণী দিয়ে দিয়েছেন। তারা দেশের সকল নাগরিককে সোহার্দ্য ও সম্পৃতির বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ রমজানের পবিত্রতা ও তাৎপর্য অনুধাবন করে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের সঠিক প্রতিফলন ঘটানোর এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে অবদান রাখার আহবান জানিয়েছেন। মাহে রমজান উপলক্ষে দেশবাসীসহ মুসলিম উন্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়ে বাণীতে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বলেন, ‘রমজানের পবিত্রতা সকলের মাঝে উদ্ভাসিত হোক- এ কামনা করি। রমজানের সংযম ও আত্মশুদ্ধির মহান শিক্ষা সমাজের সকল স্তরে ও সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক- এই প্রার্থনা করি। পরম করুণাময় মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।’
তিনি বলেন, সংযম ও সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান আমাদের মাঝে সমাগত। সংযম, আত্মশুদ্ধি ও ক্ষমা লাভের মাস মাহে রমজান। অশেষ রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের এ মাস মহান আল্লাহর নৈকট্য, শান্তি এবং তাকওয়া অর্জনের অপূর্ব সুযোগ এনে দেয়। যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ রমজান মাসটি পালন করে থাকে। ক্ষমা ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের মানসে মুসল্লিরা ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি সাহারি, ইফতার, তারাবিসহ রাত জেগে নফল ইবাদতে মশগুল থাকেন। আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি সিয়াম ধনী-গরিব সকলের মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করে।
অপর এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র রমজানের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যাবতীয় ভোগবিলাস, হিংসা-বিদ্বেষ, উচ্ছৃঙ্খলতা, সংঘাত পরিহার করে ব্যক্তিগত ও সমাজ জীবনে শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়েছেন।
পবিত্র রমজান উপলক্ষে দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর প্রতি আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়ে বলেন, রমজান আত্মসংযম, অনুকম্পা ও ক্ষমা লাভের মাস। এ মাসে ত্যাগ স্বীকারের শিক্ষার মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটে ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ হয়। মহান আল্লাহ জাতীয় জীবনে পবিত্র রমজানের শিক্ষা কার্যকর করার তাওফিক দান করুন এমন আশা প্রকাশ করে বাণীতে তিনি বলেন, আসুন, আমরা সকল প্রকার অকল্যাণ বর্জন করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় পরস্পরকে সহযোগিতা করি। জীবনের সর্বস্তরে ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শনের মাধ্যমে রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষা করি।
এই রমজান মাসে মাসব্যাপী রোজা রেখে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে পৃথিবীর মুমিন মুসলমানরা ‘ঈমানী চেতনা জাগ্রত’ করে নেবেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে গতকাল রাতে তারাবি’র নামাজ ও সাহরি খাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে মাহে রমজানের রোজা পালনের আনুষ্ঠানিকতা। মসজিদে মসজিদে ধর্মপ্রাণ মুসলমান এশার নামাজের পর তারাবির নামাজ আদায় করেন। তারাবির নামাজ পড়তে রাজধানী ঢাকা, বিভাগীয় শহর, জেলা শহর এবং সারাদেশে মসজিদে মসজিদে নামে মুসল্লিদের ঢল। পুরুষ তরুণ, যুবকরা যেমন রাতে মসজিদে তারাবির নামাজ আদায় করেন; তেমনি মহিলারাও ঘরে ঘরে তারাবি’র নামাজ পড়েন।
রোজা হলো ফার্সি শব্দ। রোজাকে আরবি ভাষায় সাওম বা সিয়াম বলা হয়ে থাকে। সাওম অর্থ বিরত থাকা। শরীয়তের পরিভাষায় মোমিন মুসলমানদের ফরজ রোজা রাখার নিয়তে সুব্হে সাদিক থেকে সূর্যান্ত পর্যন্ত কোন কিছু পানাহার না করাই হলো ‘রোজা’।
মহান আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দাদের তাঁর কাছে টেনে নেয়ার জন্য পবিত্র রমজান মাসের রোজাকে তিন ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছেন। প্রথম ১০দিন রহমত; দ্বিতীয় ১০দিন মাগফিরাত এবং তৃতীয় ১০দিন নাজাত। মাহে রমজানের রোজা মুমিন বান্দাদের সৃষ্টিকর্তার কাছাকাছি নিয়ে যায় এবং তাদের আত্মাকে নব শক্তিতে আরো বলিয়ান করে। ইসলামের প্রথম স্তম্ভ নামাজ যেমন মুমিন মুসলমানদের শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা দেয়; তেমনি রোজা শিক্ষা দেয় তাক্ওয়া, সহিঞ্চুতা ও সংযমের।
আল্লাহ সমস্ত মানবজাতির উদ্দেশ্যে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন যে, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হলো; যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেয়া হয়েছিল; যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো’ (সূরা আল বাকারা)।
রমজান মাস উপলক্ষ্যে দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারা এবং অফিস-আদালতের সময়সূচিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। সরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান মধ্যাহ্ন বিরতি ছাড়াই সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঝখানে নামাজের জন্য দুপুর ১টা ১৫ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত নামাজের জন্য বিরতি থাকবে। রমজান উপলক্ষ্যে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে বটেই; আফ্রিকা ও পশ্চিমা অনেক দেশে পণ্যেমূল্য কমানো হয় রোজাদারদের প্রতি সম্মান জানিয়ে। দুঃখজনক হলো আমাদের দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রমজান উপলক্ষ্যে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সীমিত আয়ের মানুষের জন্য কমমূল্যে কিছু পণ্য বিক্রীর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।