বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ রাসায়নিক দিয়ে পাকানো ফল বাজারজাত ও বিক্রি করায় বাংলাদেশে গত কয়েকদিন বেশ কয়েকজনকে কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসব ফল খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে, এমন কারণ দেখিয়ে নষ্ট করা হয় কয়েক হাজার মণ আম। কিন্তু রাসায়নিক দিয়ে পাকানো ফল কি সত্যিই অনিরাপদ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের পরিচালক নাজমা শাহীন বলেন, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসারে নির্দিষ্ট রাসায়নিক ব্যবহার করে ফল পাকিয়ে বাজারজাত করা হয়।
নাজমা শাহীন বলেন, “ইথোফেন ব্যবহার করে ফল পাকালে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে না। এটি একধরণের গ্যাস যা ফলের ভেতরের এনজাইমকে প্রভাবিত করে যার ফলে দ্রুতবেগে ফল পাকে। তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বে বর্তমানে ইথোফেন চেম্বারে ফল রাখা হয়। সেই ফল বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারে নেয়ার পথে সাধারনত পেকে যায় ও খাওয়ার উপযোগী হয়।
শাহীন জানান, সাধারণত ইথোফেন ব্যবহার করার নির্দিষ্ট মাত্রা ও সময়সীমা নির্ধারন করা থাকে। তবে আম ও কলার ক্ষেত্রে ইথোফেন ব্যবহারে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে না।
ক্রেতার হাতে যখন ফল যায় ততক্ষণে এই রাসায়নিক গ্যাস উড়ে যায়, আর যদি এর প্রভাব থাকে, তাতেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। কারণ ফলের খোসা ছাড়িয়ে ভেতরে রাসায়নিকের প্রভাব যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। আর আমরা সাধারণত আম ও কলার খোসা খাই না,” বলেন তিনি।
নাজমা শাহীন বলেন, স্বাভাবিকভাবে পাকানো আমের যে স্বাদ বা গন্ধ বা অন্যান্য গুণাবলী থাকে, রাসায়নিক ব্যবহার করে পাকানো ফলের গুণাবলী সেই একই মানের হবে না। তবে ইথোফেন দিয়ে পাকানো আম শতভাগ নিরাপদ। একই নিশ্চয়তা দেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হকও। বাংলাদেশের আইনে ফলে কার্বাইড ব্যবহার করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ইথোফেন ব্যবহার আইনানুযায়ী সিদ্ধ বলে জানান তিনি।
মাহফুজুল হক জানান, কার্বাইড দিয়ে ফল পাকালে আর্সেনিক বা ফসফরাসের অবশিষ্টাংশ ফলে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এজন্য বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ফল পাকানোর কাজে কার্বাইড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ফল পাকানোতে ইথোফেন ব্যবহার সম্পূর্ণ নিরাপদ ও আইনসিদ্ধ।
তবে ঢাকার পাইকারি বাজারে ফলে রাসায়নিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো একটি দলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম জানান, ইথোফেন ব্যবহারের বিষয়ে দুই ধরনের বৈজ্ঞানিক মতবাদ রয়েছে। একটি অনুযায়ী ইথোফেন খুব বেশী ক্ষতিকর নয়, অপরটি মনে করে ইথোফেন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ইথোফেন ব্যবহার আইনগতভাবে বৈধ হলেও ফলে কি পরিমাণ ইথোফেন ব্যবহার করা যাবে সেবিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই বলেও জানান সারোয়ার আলম।
ফলে ব্যবহৃত রাসায়নিকের পরিমাণ ক্ষতিকর মাত্রার চেয়ে বেশী কিনা সেটিও তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা নেই বলে জানান বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক।
সূত্র : বিবিসি