সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যা রয়েছে

মেট্রো নিউজ : নতুন পরিকল্পনায় ছয়টি বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরি; বিদ্যুৎ উন্নয়ন, জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা দূর করা; কৃষিভিত্তিক শিল্পসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ; আইসিটি-স্বাস্থ্য-শিক্ষা সংক্রান্ত সেবা রপ্তানিতে সুনির্দিষ্ট নীতিকৌশল প্রণয়ন; সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগে গতিশীলতা আনয়ন এবং রপ্তানিতে গতিশীলতার জন্য পণ্যের বৈচিত্র্য আনা।

নতুন পরিকল্পনায় চলতি অর্থবছরে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। পরের অর্থবছর ২০১৬-১৭ এ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ এবং সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

আগামী পাঁচ বছরে এক কোটি ৩২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি আট শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত এ পরিকল্পনার বাস্তবায়নকাল ধরা হচ্ছে। গেল জুন মাসে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হয়।

নতুন পঞ্চবার্ষিক পকিল্পনায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর পাশাপাশি  সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ধরে রাখা, আর্থিক খাতে সংস্কার, মূল্যস্ফীতি নামিয়ে আনা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ বেশ কিছু উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য থাকছে।

অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দীন মাহমুদের নেতৃত্বে অর্থনীতিবিদদের একটি প্যানেল গত এক বছর ধরে খাত ও উপখাতভিত্তিক ৩০টি গবেষণাপত্র এবং ৫৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছ থেকে বিষয়ভিত্তিক তথ্য নিয়ে এ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন।

এজন্য অর্থনীতিবিদ, সমাজবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাবেক আমলা ও উন্নয়ন গবেষণা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এ কাজের সমন্বয় করে।

আগামী পাঁচ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে উন্নীত করতে কৃষি থেকে শিল্পনির্ভর অর্থনীতিতে রূপান্তর, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, জিডিপির অনুপাতে সঞ্চয় বাড়িয়ে অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে চায় সরকার।

এ লক্ষ্য অর্জনে মোট ৩১ লাখ ৯০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ২৮ লাখ ৪৫ হাজার ১০০ কোটি এবং বিদেশি উৎস থেকে ৩ লাখ ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সরকারিভাবে ৭ লাখ ২৫ হাজার ২০০ কোটি এবং বেসরকারি খাতে ২৪ লাখ ৬৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়, এ বিপুল অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৩ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে। বর্তমানের ৩০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি পৌঁছাবে ৫৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে। বর্তমানের ৪০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের আমদানি উন্নীত হবে ৭২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে।

২০২০ সালে গিয়ে মোট জনসংখ্যার ২০ ভাগ উচ্চ শিক্ষিত হবে। নির্মাণ করা হবে ৮৫৬ কিলোমিটার নতুন রেলপথ। দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৬ ভাগে নেমে আসবে। আর হতদরিদ্রের হার নেমে আসবে ৮ দশমিক ৯ শতাংশে।

নতুন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যগুলো উচ্চাভিলাষী হলেও অর্জন অসম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

তিনি  বলেন, “আট শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, রপ্তানি ও আমদানি বৃদ্ধিসহ সামষ্টিক অর্থনীতির লক্ষ্যগুলো অনেক কঠিন হবে। তবে সরকার সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধ করতে পারলে এসব লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।”

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts