বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে ঢাকায় একজনসহ নয় জেলায় আরও অন্তত ১১ জন গুলিতে নিহত হয়েছে। এর মধ্যে নেত্রকোণায় দুইজন এবং সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ, কুমিল্লা, গাইবান্ধা ও শেরপুরে একজন করে নিহত হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় একজন নিহত হয়েছে র্যাবের গুলিতে।
এছাড়া কক্সবাজারের মহেশখালী ও হিমছড়িতে দুইজনের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়ার কথা জানিয়ে পুলিশ বলেছে, ‘মাদক বিক্রেতাদের মধ্যে গোলাগুলিতে’ তাদের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ ও র্যাবের দাবি, নিহতরা সবাই মাদক চোরাকারবারে জড়িত ছিল। কারও কারও বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে একাধিক মামলাও রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে কথিত এসব বন্দুকযুদ্ধ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্য।
মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত এই বন্দুকযুদ্ধে গত ছয় দিনে অন্তত ৫৬ জনের মৃত্যু হল দেশের বিভিন্ন জেলায়।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের র্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে কামরুল মাদক ও অস্ত্র মামলার আসামি এক যুবক নিহত হয়েছেন। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার এসআই মিজানুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিজি প্রেস স্কুল মাঠের গলিতে এ গোলাগুলি ঘটনা ঘটে। নিহত কামরুরেলর বয়স অনুমানিক ৩৫ বছর।তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। তেজগাঁও রেললাইন বস্তি এবং মহাখালী সাততলা বস্তি এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী কামরুল ১৫টির বেশি মাদক ও অস্ত্র মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি বলে র্যাব জানিয়েছে।
বন্দুকযুদ্ধে নেত্রকোণা সদর উপজেলায় দুই যুবক নিহত হয়েছে। উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের মনাং গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে নেত্রকোণা মডেল থানার ওসি বোরহান উদ্দিন খানের ভাষ্য। তিনি বলছেন, নিহত দুই যুবক মাদক চোরাকারবারে যুক্ত ছিল।
কক্সবাজারে পৃথক এলাকা থেকে এক ইউপি সদস্য ও এক যুবকের লাশ পাওয়া গেছে; যারা দুই দল মাদক বিক্রেতার গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে বলে পুলিশের ভাষ্য। পুলিশ বলছে, নিহতরা মাদক চোরকারবারীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আফরুজুল হক টুটুল বলেন, রামু উপজেলার কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি এলাকা থেকে শুক্রবার সকালে আক্তার কামালের (৪৮) লাশ উদ্ধার করা হয়। আক্তার টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ছিলেন। তার নামে টেকনাফসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে এবং তিনি সাংসদ আব্দুর রহমান বদির বেয়াই বলে পুলিশ জানায়।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের পাহাড়তলী এলাকা থেকে মোস্তাক আহমদের (৩২) লাশ উদ্ধারের খবর জানিয়েছেন মহেশখালী থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস। মোস্তাক ওই এলাকার এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসায় জড়িত অভিযোগে মহেশখালী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
ময়মনসিংহ নগরীতে বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ৩৪ বছর বয়সী রাজন মিয়া নিহত হয়েছে বলে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আশিকুর রহমান জানিয়েছেন। আশিকুর বলছেন, নগরীর পুরোহিত এলাকার হারনি মিয়ার ছেলে শীর্ষ মাদক ব্যাবসায়ী রাজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকসহ নয়টি মামলা রয়েছে। শুক্রবার রাত পৌনে ২টার দিকে পুরোহিত মহল্লায় রেলওয়ে কলোনীর রেনু বেগমের পুকুরের পাড়ে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ইউনুস আলী দালাল নামে এক ব্যক্তি নিহতের খবর জানিয়েছেন কলারোয়া থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথ। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে দুইটার দিকে উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর-বড়ালি গ্রামে এ গোলাগুলি ঘটনায় নিহত ইউনুস আলী দালাল নিহত হন। কলারোয়ার দক্ষিণ ভাদিয়ালি গ্রামের আব্দুল্লাহ দালালের ছেলে ইউনুস একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী এবং তার বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলার বিচার চলছে বলে ওসি বিপ্লবের ভাষ্য।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শামীম সরদার (৪৫) নামের এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। উপজেলার আড়পাড়ায় বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার দিকে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে বলে কালীগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান। শামীম ওই এলাকার মমিন সরদারের ছেলে। তিনি উপজেলার অন্যতম শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী এবং তার বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় নয়টি মাদক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
কুমিল্লায় মাদক বিরোধী অভিযানের সময় বন্দুকযুদ্ধে কামাল হোসেন ওরফে ফেন্সি কামাল (৫১) নামের এক তালিকাভুক্ত এক মাদক ব্যবসায়ী নিহতের খবর জানিয়েছেন বুড়িচং থানার ওসি মনোজ কুমার। উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের মহিষমারা এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১২টার দিকে এ ঘটনায় নিহত কামাল হোসেন সদর উপজেলার রাজমঙ্গলপুর গ্রামের হিরন মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে বুড়িচং ও কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় ১২টির অধিক মাদকের মামলা রয়েছে। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। এরা হলেন- সদর উপজেলার ছাওয়ালপুর গ্রামের মফিজ মিয়ার ছেলে হানিফ (৪২) ও জেলার চান্দিনা উপজেলার কোরপাই গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে এবং ইলিয়াস (২৮)।
শেরপুর সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী আজাদ ওরফে কালু ডাকাত নিহত হয়েছে। উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র সেতুর কাছে সাতপাকিয়া এলাকায় শুক্রবার ভোর ৩টার দিকে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে বলে শেরপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.আমিনুল ইসলাম জানান। কালু সদরের মরাকান্দি খাসপাড়া গ্রামের মুন্তাজ আলীর ছেলে এবং চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য মমতাজ বেগমের ভাই।