পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ সহজ করে দেওয়া হচ্ছে। মেয়র পদের জন্য ১০০ জন ভোটার এবং কাউন্সিলরদের জন্য ৫০ জন ভোটারের সমর্থন হলেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ মিলবে। নারী কাউন্সিলরদের জন্য এই শর্ত আরও শিথিল করে ২৫ জন করা হতে পারে। এদিকে এর আগে একাধিক ধাপে নির্বাচনের পরিকল্পনা থাকলেও এখন একই দিনে ২৪৫ পৌরসভায় ভোটের আয়োজন করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ১ শতাংশের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক। তবে পৌর নির্বাচনে এই বিধান শিথিল আকারে প্রয়োগ হচ্ছে। এ ছাড়া মেয়র পদ লাভজনক কি-না এ নিয়ে দীর্ঘ আইনি বিতর্ক হলেও তাদের পদে থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা নেই বলে সমকালকে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক। স্বতন্ত্র প্রার্থিতার ক্ষেত্রে নতুন বিধান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যারা অংশ নেন তাদের সবার দলীয় পরিচয় থাকে না। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন ছাড়াও অন্যদের প্রার্থিতা সহজ করার বিষয়টি মাথায় রেখেই বিধিমালা প্রণয়ন করা হবে।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজনকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি সচিবালয়। ২৪৫ পৌরসভায় প্রায় ৭৫ লাখ ভোটার ও পাঁচ হাজারের মতো ওয়ার্ড রয়েছে। এ জন্য পাঁচ হাজার ধরনের ব্যালট ছাপাতে হবে।
যদিও পৌরসভা আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশ এখনও জারি হয়নি। এদিকে ৮ নভেম্বর জাতীয় সংসদের অধিবেশন ডাকা হয়েছে। পৌরসভা নির্বাচন বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি না করে সংসদে বিল পাস করা হতে পারে বলেও ধারণা করছেন ইসির কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, সে ক্ষেত্রেও পৌর নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে এবং সে লক্ষ্যেই তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ইসির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন-২০০৯ এর অধিকতর সংশোধনকল্পে আনীত বিলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ শতাংশের বিধান উল্লেখ নেই। এটি বিধিমালায় সনি্নবেশ করা হবে। ইতিমধ্যে আইন মন্ত্রণালয় বিলটির ভেটিং সম্পন্ন করেছে। তারা জানিয়েছেন, বিলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে_ ‘যিনি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনয়ন গ্রহণ করেন নাই, বা যাহাকে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনয়ন প্রদান করা হয় নাই।’ অর্থাৎ রাজনৈতিক দলের বাইরে যে কেউ স্থানীয় সরকারের পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
তবে বিধিমালায় তাদের জন্য ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনের পরিবর্তে মেয়র প্রার্থীদের জন্য ১০০ জন এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য ৫০ জন ভোটারের সমর্থন লাগবে। আর নারী প্রার্থীদের জন্য সেই সমর্থন অর্ধেক করার পরিকল্পনা রয়েছে। ফলে কোনো প্রার্থী শুরুতে দলীয় পরিচয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর দল থেকে প্রতীক বরাদ্দের চিঠি না পেলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হবে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং সম্পন্ন হওয়া বিলটির কপি হাতে পেয়েছেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা। ওই বিলটির আলোকে পৌরসভা নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালার খসড়াও চূড়ান্ত করেছেন তারা। বিলটির গেজেট প্রকাশিত হলেই বিধিমালা দুটি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন একাধিক নির্বাচন কমিশনার।
গত ১২ অক্টোবর স্থানীয় সরকারের সর্বস্তরের (ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন) নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ও মনোনয়নে প্রার্থিতা নির্ধারণের বিধান রেখে সংশ্লিষ্ট আইনগুলোর সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে। এর পর জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ শতাংশ সমর্থক ভোটারের স্বাক্ষর বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন, অধ্যাদেশ বা সংসদে আইন পাস হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন বিধিমালা সংশোধনের সময় বিষয়টি ঠিক করবে।
দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহার করতে পারবেন প্রার্থীরা পরিবর্তিত আচরণবিধিতে জাতীয় সংসদের মতো দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচনী পোস্টারেও দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহার করতে পারবেন। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পর দলীয় প্রধান ও দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে শর্ত সাপেক্ষে পোস্টারিং করার সুযোগ মিলবে। তবে সরকারের সুযোগসুবিধা ব্যবহার করে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বা সমমর্যাদার কেউ প্রচারে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিধিনিষেধ আগের মতোই বলবৎ থাকছে।
মেয়রদের পদে থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুুল মোবারক বলেন, এ বিষয়ে আদালতের রায় অনুসরণ করবে ইসি। আদালতের রায়ে পৌর মেয়রদের ক্ষেত্রে বাধা না থাকলেও সিটি করপোরেশনের মেয়রদের ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে বলে জানান তিনি।
নভেম্বরে তফসিল ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচন নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ২৪৫ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত রয়েছে ইসির। সারাদেশে ৩২৪ পৌরসভার মধ্যে নির্বাচন উপযোগী রয়েছে ২৮৫টি। সীমানা জটিলতার কারণে এই মুহূর্তে বাকি পৌরসভাগুলোর নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে না। এর আগে ২০১১ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত একাধিক ধাপে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।