শাহ মতিন টিপু: বাইশে শ্রাবণ আজ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলার রবি এদিন পাড়ি জমিয়েছিলেন অস্তাচলে। আমার দিন ফুরালো ব্যাকুল বাদল সাঁঝে, গহন মেঘের নিবিড় ধারার মাঝে…’ শ্রাবণের ভরা বর্ষার মধ্যেই তিনি প্রয়াত হয়েছিলেন।
বাংলা ১৩৪৮ সালের বাইশে শ্রাবণ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। জন্ম ১২৬৮ সালের পঁচিশে বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে।
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদাসুন্দরী দেবীর চতুর্দশ সন্তান বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের প্রাণপুরুষ। বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত তারই রচনা। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধসহ সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় অসামান্য অবদান রেখে তিনি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার লেখা ও সুর করা আড়াই হাজারের বেশি গান বাংলা সাহিত্যের অতুলনীয় সম্পদ। চিত্রশিল্পেও তার অবদান অসামান্য। তার আঁকা প্রায় দুই হাজার ছবি দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমাদর লাভ করে।
রবীন্দ্রনাথ বোলপুরের শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন ধারা প্রবর্তন করেন। কৃষির উন্নতির জন্য তার প্রতিষ্ঠিত শ্রীনিকেতনও এক যুগান্তকারী প্রতিষ্ঠান।
অবিভক্ত ভারতের কুষ্টিয়া ও শাহজাদপুরে ছিল ঠাকুর পরিবারের বিশাল জমিদারি। তিনি জমিদারি পরিদর্শনের কাজে পূর্ববঙ্গের শাহজাদপুর ও শিলাইদহে দীর্ঘদিন বাস করেন। শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে বাস করতেন। পদ্মাবক্ষে নৌকায় (বোট হাউসে) অনেক দিন বসবাস করেছেন রবীন্দ্রনাথ। তার অনেক সৃষ্টিকর্মই এই পূর্ববাংলায় রচিত।
গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের সুবাদে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন তিনি। রবীন্দ্রনাথই প্রথম এশিয়াবাসী যিনি এ পুরস্কারে ভূষিত হন। নোবেল পুরস্কারের সমুদয় অর্থ তিনি বিশ্বভারতী ও শ্রীনিকেতনের উন্নয়নে ব্যয় করেন। বাঙালির প্রতিটি আবেগ অনুভবে জড়িয়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধেও তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণাস্বরূপ।
১৯৩০-এর দশক থেকেই রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। জীবনের শেষ চার বছর তিনি বেশ অসুস্থ ছিলেন। ১৯৩৭ সালে তিনি একবার গুরুতর অসুস্থ হন। এর পর কিছুটা সুস্থ হলেও ১৯৪০ সালে তার অসুস্থতা বেড়ে যায়। তিনি শেষ জীবনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘনঘটা এবং মানবতার সংকট দেখে দুঃখিত হন। তবু তিনি মানবতার জয়ে আস্থা হারাননি। ১৯৪১ সালে শেষবারের মতো শান্তিনিকেতন থেকে জোড়াসাঁকোর প্রাসাদে চলে আসতে হয় অসুস্থ কবিকে। সেই সময়কার বিখ্যাত চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করেন। কিন্তু কবির অবস্থা দিনে দিনে অবনতি হতে থাকে। অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি কবিতা লিখতেন। শেষ সময়ের লেখা একটি কবিতায় তিনি বলেছেনÑ ‘আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা এ জীবন।’ আরেকটি কবিতায় লিখেছেন- ‘দিবসের শেষ সূর্য/শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল পশ্চিম সাগর তীরে/ নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়-/ কে তুমি,/ পেল না উত্তর।’
মৃত্যুর সাত দিন আগেও কবিতা লিখেছেন তিনি। বাইশে শ্রাবণ তার নশ্বর দেহের সমাপ্তি ঘটলেও বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রেষ্ঠ আসনে চিরদিনের জন্য উজ্জীবিত হয়ে থাকবেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আজ সোমবার বিকেল চারটায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
এতে ‘আজকের বিশ্বে রবীন্দ্রসৃজনের প্রাসঙ্গিকতা ’ শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করবেন নাট্যজন আতার রহমান । সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জমান। পরে রয়েছে গীতিনৃত্যালেখ্য ‘ওই পোহাইলো তিমির রাতি।’ গীতিনৃত্যালেখ্য পরিবেশন করবে রক্তকরবী ও শুদ্ধ সংগীত চর্চা কেন্দ্র।
এ ছাড়াও শিল্পকলা একাডেমি বিকেলে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন দিবসটি পালনের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।