বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ সাহিত্যে নোবেলজয়ী ঔপন্যাসিক স্যার ভি এস নাইপল আর নেই। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। নাইপল ১৯৩২ সালে ত্রিনিদাদের গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
ভি. এস. নাইপল নামেই তার পরিচিতি সমধিক। তবে তার পুরো নাম বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল। নামটি যেমন বড়, খ্যাতিও তার তেমনি বিশাল। উত্তর-ঔপনিবেশিক সাহিত্যের অন্যতম পুরোধার অর্জনের ঝুলিতে রয়েছে নোবেল পুরস্কারসহ কয়েক ডজন উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার এবং বৃটিশ নাইটহুড। নোবেল পাওয়ার আগেই ১৯৯০ সালে ‘স্যার’ উপাধি পেয়ে যান। আর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান ২০০১ সালে। তাঁর লেখা উপন্যাস এবং ভ্রমণকাহিনি চমৎকার। গদ্যের প্রশংসা করেন সবাই। কাহিনী বলার ঢংটিও বেশ চমকপ্রদ।
আরেক নোবেল বিজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকান লেখক জি. এম. কোয়েটজি ২০০১ সালে দ্য নিউইয়র্ক রিভ্যিউ অব বুকস-এ নাইপলকে ‘আধুনিক ইংরেজি গদ্যের একজন মাস্টার’ বলে প্রশংসা করেন। নোবেল কমিটি নাইপলকে তুলনা করেন জোসেফ কনরাডের সাথে, বলেন ‘কনরাডের উত্তরসূরী’। ১৯৩২ সালের ১৭ আগস্ট ক্যারাবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্র ত্রিনিদাদে জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই বিশ্বনামজাদা লেখক উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনি, আত্মজৈবনিক রচনা ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় ৫০টি গ্রন্থের রচয়িতা। জন্মভূমি ত্রিনিদাদ এবং আফ্রিকা, ভারত, ইসলামি বিশ্বের কয়েকটা দেশের মানুষ, তাদের সংস্কৃতি, ধর্মবিশ্বাস, রাজনীতি, ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ে তিনি লিখেছেন।
নাইপলের স্ত্রী লেডি নাইপল তাঁকে ‘সবকিছু অর্জন করা এক দানব’ হিসেবে অভিহিত করেন। লেডি নাইপল বলেন, লন্ডনের বাড়িতে প্রিয় মানুষদের সান্নিধ্যে নাইপলের মৃত্যু হয়েছে।
নাইপল শিশু বয়সেই উইলিয়াম শেকসপিয়ার, চার্লস ডিকেন্স পড়েন বাবার কাছ থেকে। ১৯৫০ সালে ব্রিটেনে চলে যান এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। লেখকের প্রথম বই ‘মিস্টিক মাসোর’ ১৯৫১ সালে প্রকাশিত হয়। এর দশক পর বের হয় সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস ‘আ হাউস ফর মি বিশ্বাস’। ১৯৭১ সালে ‘আ ফ্রি স্টেট’ উপন্যাসের জন্য বুকার পুরস্কার পান। ২০০১ সালে পান নোবেল পুরস্কার।
নাইপলের প্রথম স্ত্রী মারা যান ১৯৯৬ সালে এবং এরপর তিনি পাকিস্তানি সাংবাদিক নাদিরাকে বিয়ে করেন।
২০১৬ সালে ঢাকায় এক সাহিত্য উৎসবে যোগদান করেন সাহিত্যিক ভি এস নাইপল। ঢাকায় কোন নোবেলজয়ী সাহিত্যিকের এটাই প্রথম পদার্পন। এর আগে গুন্টার গ্রাস এসেছিলেন, তবে তিনি তখনও নোবেলজয়ী হননি।
উৎসবে নিজের লেখা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, নিজের লেখা ব্যাখ্যা করা যায় না। ‘আপনি কীভাবে লেখেন?’ এ রকম প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমি যদি বলতে পারতাম আমার মন কীভাবে কাজ করে, তাহলে এটা নিয়েই আর একটা বই লিখে ফেলতে পারতাম।’
মাঝখানে তাঁর স্ত্রী লেডি নাদিরা বিদ্যা নাইপল বলেন, এই প্রথম বাংলাদেশে আসেননি, তিনি ঢাকাতেই পড়াশোনা করতেন যখন তার বয়স ছিল তেরো বছর। ছোট্ট বয়সে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মিছিলের পেছনেও ছুটেছেন। বাংলা ও বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমূখ তিনি। বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা ছিল বলেই এখানে এসেছি। কিছু বন্ধন কখনই ছিন্ন করতে হয় না। ভৌগোলিক কারণে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয় কিন্তু ভালোবাসা সেই একই থেকে যায়। আমি প্রত্যেক শনিবার ঢাকা আর্ট কলেজে (বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউট) যেতাম। সেখানের সব ভাস্কর্য আমাকে মুগ্ধ করতো। সময়ের সঙ্গে সব বদলে গেছে কিন্তু ভালবাসাটা আগের মতই আছে। আপনারা সত্যিই অসাধারণ, আমি বাংলাকে অত্যন্ত ভালোবাসি, তাই আমি বিদ্যাকে বলেছি আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশ এবং তার মানুষকে দেখতে যাওয়া উচিত।’
তিনি নাইপলের সস্পর্কে বলেন, ‘বিদ্যা সারা জীবন শুধু কাজ, কাজ আর কাজই করেছেন। তিনি সবসময় একটা কথা বলতেন, মানুষের তিনটি জীবন প্রয়োজন। একটি কাজের জন্য, একটি অভিজ্ঞতার জন্য আর একটি নিজের মত করে বাঁচার জন্য।’
বিবিসি প্রযোজিত প্রামাণ্যচিত্র ‘দ্য স্ট্রেঞ্জ লাক অব ভি এস নাইপল’ থেকে জানা যায়, তার পিতামহ ভারত থেকে পাড়ি জমান ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে। সেখানেই জন্ম হয় নাইপলের। তার বাবা ছিলেন লেখক-সাংবাদিক। পরে সেই পথে হাঁটেন তিনিও।
লেখক লাইলা লালামি, ঔপন্যাসিক হারি কুনজরু, জিত হির স্যার নাইপলের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।