শিউল মনজুর ॥ গাছে গাছে পাখি ডাকতে শুরু করেছে। ডালে ডালে জেগে উঠছে কচি পাতা। আমের বউল ছুঁয়ে ছঁয়ে সুমষ্টি বাতাস ভরিয়ে দিচ্ছে মন। গুচ্ছ গুচ্ছ আগুন রাঙা লাল পলাশ নজর কেড়ে নিচ্ছে দৃষ্টির। কেমন যেনো ভালোলাগা আর ভালোবাসায় ভরে উঠছে এই অন্তর মম।
আসলে প্রকৃতির রূপ বদলের পক্রিমায় ঋতুচক্র আমাদেরকে মনে করিয়ে দিচ্ছে শীতের হাঁড় কাঁপানো মাঘের দিন শেষ। এসেছে নাতিশীতোষ্ণ ফাল্গুন। ফাল্গুন-চৈত্র বাংলা বর্ষের শেষ দুটি মাস, এই দুই মাস মিলে সকলের প্রিয় ঋতু বসন্ত। সেই সাথে ভালোবাসা দিবসের আনন্দবার্তা পৌঁছে দেয় এই ফাল্গুন।
উৎসব প্রিয় বাঙ্গালীদের নিকট বসন্ত বরণ ও ভালোবাসা দিবসের উৎসব অন্যরকম আনন্দবার্তা নিয়েই উপস্থিত হয়।
প্রকৃতির ক্যানভাসে যখন একটু একটু করে বসন্তের ছোঁয়া লাগছিল মূলত তখন থেকেই তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ সবার মনেই ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ ও ভালোবাসা দিবসের আনন্দ বার্তা ছুঁয়ে যাচ্ছিল বারবার। এ সময় বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে তরুণ-তরুণীরা পরস্পরকে বিলি করে নান্দনিক সৌন্দর্যের কার্ড। যদিও এখন প্রযুক্তির কল্যাণে মোবাইল ম্যাসেজের মাধ্যমে তরুণ-তরুণীরা বিনিময় করে শুভেচ্ছাবার্তা।
এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত ভালোবাসা দিবসে বিশ^ব্যাপী প্রায় তিরিশ মিলিয়ন মোবাইল টেক্সট ম্যাসেজ আদান প্রদান হয়। আরেকটি তথ্য থেকে জানা যায়, আমেরিকায় ভালোবাসা দিবসে প্রায় ১৬ কোটি কার্ড ও ১৩ কোটি গোলাপ প্রতি বছর বিনিময় হয়।
বসন্ত বরণ বাঙালী সংস্কৃতির আদি অংশ। অর্থ্যাৎ বহু আদিকাল থেকেই বসন্ত বরণের উৎসব চলে আসছে। হোলি উৎসব, দোল যাত্রা, বাসন্তী পূজা প্রভৃতি পূজা এমাসেই অনুষ্ঠিত হয়। ফাল্গুনের প্রথম দিনে বিশেষ করে জেলা শহরের ছেলে-মেয়েরা নানা রঙের পোশাকে সজ্জিত হয়।
এদিনে দেখা যায়, বাসন্তী বা হলুদ রঙয়ের শাড়ি পরে মেয়েরা এবং ছেলেরাও বাসন্তী বা হলুদ রঙের পান্জাবী পরে পার্কে, মেলায় কিংবা রাজপথ আলোকিত করে বসন্তকে বর্ণিল করে প্রকৃতির মতো জানান দেয় ঋতুরাজ বসন্ত এসেছে।
তবে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস পালন আমাদের দেশে খুব বেশি দিনের নয়। ইংরেজিতে এই দিবসকে ভ্যালেন্টাইন ডে নামে অভিহিত করা হয়। আজকের এই ভালোবাসা দিবসের দিনটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নতুন হলেও বিশ^ ইতিহাসে এটি অনেক পুরনো।
এক তথ্য থেকে জানা যায় ১৭১২ সালের একটি সুইডিশ ক্যালেন্ডারে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভালেন্টাইন ডে হিসেবে চিহিৃত করা হয়। তবে অনেক ইতিহাসবিধ বলেন, এটির সূচনা জেরুজালেম থেকে হয়।
আমাদের দেশে এই ভালোবাসা দিবস তরুণ-তরুণীরা পালন করলেও ভালোবাসার তাৎপর্য বেশ ভারী। আমরা সাধারণত দুজন তরুণ-তরুণীর প্রেমের চাওয়া পাওয়াকে ভালোবাসার নিক্তিতে মূল্যায়ন করে থাকি। কিন্তু ভালোবাসা শুধু তা মিন করে না।
এখানে, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, কিংবা মা-বাবার সাথে সন্তানের বা দাদা-দাদী, নানা-নানীর সাথে পরস্পরের যে সম্পর্ক তা স্নেহ মমতার মধ্যদিয়ে যে বর্হিপ্রকাশ ঘটে তাই ভালোবাসা। ভালোবাসা দীর্ঘস্থায়ী। সব সময় সব বয়সের মানুষের জন্যে। কিন্তু প্রেম নির্দিষ্ট বয়সের মধ্যে সীমাবদ্ধ। যে কারণে ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসা পালন হবে সার্বজনীন ভাবে।
এবং তা শুধু ঐ একদিনের জন্যে নয়। বরঙ ভালোবাসা দিবসে আমরা প্রতিজ্ঞা করবো পুরো বছর সবাইকে যেনো ভালোবাসি। শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ মা-বাবা কিঙবা দাদা-দাদী ও নানা-নানী পর্যন্ত। এমন কি পথের ভিক্ষুককেও।
তাই ভালোবাসার তাৎপর্য উপলব্দি করে এই বসন্ত বরণ উৎসবকে বরণ করার পাশাপাশি হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়েই যেনো ভালোবাসা দিবসকেও আমরা রাঙিয়ে তুলি।
শিউল মনজুর কবি ও গল্পকার