সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই

মোঃ সোয়েব মেজবাহউদ্দিন

দেশে ইউনিয়ন নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়। এ সকল নির্বাচনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। জনগণ সে সব নির্বাচন নিয়ে তেমন বেশি মাথা ঘামান না। কিন্তু সংসদ নির্বাচন হচ্ছে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এই নির্বাচন নিয়ে দেশের জনগণ, যারা ভোটার হিসাবে বিবেচিত হন তারা এই নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন ও উৎকন্ঠায় থাকেন। কারণ এই নির্বাচনে দেশের আইন প্রণেতা নির্বাচিত হন। এবং তারাই পরবর্তী ৫ বছর দেশ পরিচালনা করেন। তাই এই নির্বাচনকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনার শেষ থাকে না। দেশ বিদেশের অনেক পর্যবেক্ষক আসেন এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে। নির্বাচন সুষ্ঠু না হল বিদেশেও দেশের সম্মান নষ্ট হয়।

আগামী ৩০ডিসেম্বর-২০১৮ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সংবাদপত্রে সংসদ নির্বাচন নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে প্রতিদিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা রকমের টক শো হচ্ছে। বাংলাদেশে এই প্রথম চলমান সরকারী দলের অধীনে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্ততি চলছে। যদিও ভোটারদের মধ্যে অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেননা ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। হয়তোবা নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে সহিংসতা ততই বাড়বে এবং  হতাহতের সংখাও বাড়বে। এই নির্বাচনে ঝরে যাবে কিছু তাজা প্রাণ।

নির্বাচনে সহিংসতা হবে এই আশংকায় সাধারণ ভোটারেরা ভোট কেন্দ্র যেতে ভয় পায়। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ এই স্লোগান আর আমাদের দেশে অকার্যকরপ্রায়। নিরাপত্তাহীনতায় তারা ভোট কেন্দ্রে যেতে ভয় পায়। তাছাড়া ভোট কেন্দ্র গিয়ে দেখা যায় তার ভোট আগেই দেয়া হয়ে গেছে। কতিপয় লোক নির্বাচনের সময় বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষ থেকে অর্থের বিনিময়ে জাল ভোট দিয়ে থাকে। ভোটের সময় এটা তাদের একটা ব্যবসা। অর্থ উপার্জনের উৎস। এই সকল লোকেরা নির্বাচনের সময় নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করে থাকে। বিভিন্ন ভোটারদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে নানাপ্রকার ভয়ভীতি প্রর্দশন করে।

দেশের প্রতিটি নির্বাচনে কিছু কিছু প্রার্থী অর্থ দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করেন। বর্তমানে এটা একটা নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই নির্বাচনের সময় কিছু লোকের হাতে প্রচুর অর্থ চলে আসে। আর তারা অর্থ পেয়ে আক্রমানাত্মক হয়ে উঠে। অর্থের বিনিময়ে তারা অবৈধ অস্ত্র কিনে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করে। সামান্য বিষয় নিয়ে টাকার গরমে হাতাহাতি শুরু করে, পরবর্তিতে যা খুনাখুনিতে রূপ নেয়। দেশের প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় এটা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে উঠে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা যেমন তাদের আধিপত্য রক্ষার চেষ্টা করে তেমনি বিরোধী দলের প্রার্থীরাও তাদের শক্তিমত্তা দেখানোর চেষ্টা করে। জয়ের জন্য উভয় দলের প্রার্থী চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখতে চান না। নির্বাচনকে ঘিরে আত্মীয় স্বজনের মধ্যে, ভাই-ভাই, ভাই-বোন, বাবা-ছেলে এমনকি স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়। নির্বাচনের পরেও সেই সহিংসতা হয় এবং তা হয় আরও মারাত্মক।

নির্বাচনের সময় সাধারণ ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট দেয়ার নিশ্চয়তা দেয়া প্রশাসনের দায়িত্ব। নির্বাচনের পূর্বে প্রতিটি এলাকার প্রশাসনের উচিত প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের নিয়ে সভা করে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিরাপদে ভোট দেয়ার জন্য উৎসাহিত করা। কেননা ভোট প্রতিটি জনগণের নাগরিক অধিকার। এই নাগরিক অধিকার যারা হরণ করবে, তাদের প্রতি জনগণের আস্থা হারিয়ে যাবে। যা দেশের জন্য এক সময় মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবে।

অনেকেই মনে করেন, ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন হলে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হয়না। স্থানীয় প্রশাসনও ক্ষমতাসীন দলের সাংসদের নির্দেশ অমান্য করতে পারেন না। আর নির্বাচন কমিশন যতই নিরপেক্ষতার কথা বলুননা কেন, তাদেরকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করতে ব্যাপক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ ক্ষমতাসীন দলের অধীনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করা সত্যিই কঠিন ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই নির্বাচন কমিশনকে তাদের সাংবিধানিক ক্ষমতা সঠিকভাবে প্রয়োগ করে জাতিকে একটা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। নির্বাচনের সময় সকল দলের প্রতি নির্বাচন কমিশন সমান সুযোগ দিবেন এবং নির্বাচন আচরণবীধি লংঘন করলে সকল রাজনৈতিক দলকে একই প্রকার শাস্তি দিবেন এটাই সকলে কাম্য।

আমাদের দেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিরূদ্ধে নিয়মিত পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠছে। যদিও এটা আমাদের দেশের জন্য স্বাভাবিক বিষয়। কেননা সকল সময় বিরোধী দল নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ উপস্থাপন করেন। তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের উচিৎ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব বিবেচনা করে সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন জনগনকে উপহার দিয়ে বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। ভাল কাজ করা কঠিন কিন্তু মন্দ কাজ করা সহজ। আর ইচ্ছাকৃত মন্দ কাজের জন্য জাতি তো বটেই আপনি নিজের বিবেকের কাছে কখনও ক্ষমা পাবেন না। কারণ মানুষের বিবেক হচ্ছে সবচেয়ে বড় আদালত।

 

 

লেখক: মিডিয়া কর্মী।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts