বিডি মেট্রোনিউজ ॥ হাত-পায়ে গাছের শাখা-প্রশাখার মতো আঁচিল নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবুল বাজনদারের (২৫) হাতে অস্ত্রোপচার হয়েছে। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক আবুল কালামের নেতৃত্বে ছয়জন চিকিৎসক শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুই ঘণ্টা আবুলের ডান হাতের আঙুলে অস্ত্রোপচার করেন। এর আগে সকাল ৯টা থেকে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে চলে অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি।
‘বৃক্ষ মানব’ হিসেবে পরিচিত পাওয়া আবুল সুস্থ আছেন বলে ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “তিন সপ্তাহ পর আমরা তার বাম হাতেও অস্ত্রোপচার করব। এরপর ক্রমান্বয়ে তার দুই পায়েও অস্ত্রোপচার করা হবে।”
আবুলের হাতের আঁচিলের কিছু নমুনা পরীক্ষার জন্য ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
খুলনার এই তরুণের দুই হাতে প্রায় ১০ কেজি ওজনের আঁচিল; পায়েও প্রায় কাছাকাছি। দেখে মনে হয় হাত-পা থেকে গাছের শাখা-প্রশাখা গজিয়েছে। বিরল এই রোগের কারণে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ‘ট্রি ম্যান’ বা ‘বৃক্ষ মানব’ নামে পরিচিত হয়ে গেছেন তিনি।
এক সময় বাবার সঙ্গে ভ্যান চালিয়ে সংসারের আর্থিক যোগানে সহযোগিতাকারী আবুল এখন পরিবারের বোঝা, খেতে হয় অন্যের হাতে।
গত ১০ বছর ধরে এই রোগে আক্রান্ত আবুল এ বছর জানুয়ারিতে খুলনা থেকে এসে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হলে তার এই রোগের কথা আলোচনায় আসে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি আবুলকে দেখতে হাসপাতালে গিয়ে তার চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকার বহন করবে বলে ঘোষণা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
ডেইলি মিররের এক প্রতিবেদনে বলা হয়- ‘হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস’ বা এইচপিভি’র কারণে ত্বক এভাবে আক্রান্ত হয়। তবে বিরল এই রোগ এবং তার প্রতিকার নিয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।
নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড তাদের প্রতিবেদনে আবুলের এই রোগকে ‘এপিডারমোডাইসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
চিকিৎসকরা জানান, এইচপিভি একগুচ্ছ ভাইরাসের নাম, যা শরীরের ত্বক ও আর্দ্র ঝিল্লিতে সংক্রমণ ঘটায়। এ পর্যন্ত একশর বেশি এইচপিভি ভাইরাসের হদিস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অন্তত ৩০ ধরনের এইচপিভি জননেন্দ্রীয়কে আক্রান্ত করতে পারে।
সব ধরনের এইচপিভিই শরীরে আঁচিল তৈরি করে। এর সংক্রমণ খুব দ্রুত গতিতে ত্বকের বাইরের স্তরে ছড়িয়ে পড়ে। আবুলের মা আমেনা বিবি তার ছেলের রোগের বিবরণে যা বলেছেন, তার সঙ্গে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি অনেকটাই মিলে যায়।
নয় সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড আবুল বাজনদারের চিকিৎসার বিষয়টি তদারক করছে।